আপডেট :

        রিশাদের ব্যাটে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

        কণ্ঠশিল্পী খালিদ মারা গেছেন

        বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ

        গুণী প্রধান শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান

        বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃ‌তিতে আইরিশ মন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

        ইসলামবিদ্বেষ ঠেকাতে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস

        বাংলাদেশ-বৃটেন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫১ বছর: বৃটিশ হাইকমিশনার

        ঢাকায় সুইডিশ রাজকন্যা

        ইরাকের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তা করবে আইএইএ

        বিস্ফোরক মামলায় যুবদল-ছাত্রদলের ৪ নেতা কারাগারে

        জিএসপি সুবিধার মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়াতে আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

        ট্রাম্প মানসিকভাবে অসুস্থ: জো বাইডেন

        জৈন্তাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬

        বিএনপি ইফতার পার্টিতে আল্লাহ-রাসুলের নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গীবত গায়: প্রধানমন্ত্রী

        মার্কিন গণতন্ত্রকে কটাক্ষ পুতিনের

        শাল্লায় বিল শুকিয়ে মৎস্য আহরণ

        দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পাপেট সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত সব নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ: সজীব ওয়াজেদ জয়

        সিএনজি-লেগুনা’র দখলে রাস্তা

        তিন বিভাগে ৩ দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা

        এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম

প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক, অন্তর্দ্বন্দ্বে নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ আদালতের

প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক, অন্তর্দ্বন্দ্বে নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ আদালতের

২১ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ সোসাইটি ইনকের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছেন আদালত। সংগঠনের সাবেক নেতা ওসমান চৌধুরীসহ প্রতিদ্বন্দ্বী নয়ন-আলী পরিষদের মনোনয়ন বাতিল হওয়া দুই সদস্যের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জ্যামাইকার কুইন্স সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ১৯ অক্টোবর নির্বাচনের ওপর এই স্থগিতাদেশ দেন।

বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট কামাল আহমেদ গণামাধ্যমকে বলেন, আদালতের নির্দেশ তাঁদের (১৯ অক্টোবর বেলা ৩টা) হাতে এসে পৌঁছেনি। যদি স্থগিত করে আদালত আদেশ দেন তাহলে আমরা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাঁরা পাল্টা আবেদন করব। এ নিয়ে আইনজীবীসহ তাঁরা আদালতের কাছে নির্বাচনের প্রস্তুতি, হল ভাড়া, ভোটার মেশিন ভাড়া করাসহ ভোটারদের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরবেন।
জানা গেছে, মামলার বাদী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া আকবর আলী ও জেড আর চৌধুরী লিটু। জ্যামাইকার কুইন্স সুপ্রিম কোর্টের বিচারক টেইলর উভয় পক্ষের শুনানি শেষে স্থগিতাদেশ স্বাক্ষর করেন। মামলায় বাদী পক্ষের শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি রস। সোসাইটির নির্বাচন নিয়ে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে এ ধরনের বিবাদ মীমাংস না করে আদালতে যাওয়া এবং আদালতের ফয়সালা কমিউনিটির জন্য প্রত্যাশিত নয়। এখন আদালতে স্থগিতাদেশের পর নির্ধারিত তারিখে সোসাইটির নির্বাচন অনুষ্ঠানের আর কোনো সুযোগ নেই।

নয়ন–আলী প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী কাজী নয়ন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দুরভিসন্ধি করে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে রব-রুহুল প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী রুহুল আমীন সিদ্দিকী জানান, ‘নির্বাচন স্থগিত হওয়ার কথা শুনেছি। কোনো নির্দেশ এখনো পাইনি।’

এদিকে নির্বাচনে ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটাররাও ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

জ্যাকসন হাইটসের ৭২ থেকে ৭৫ স্ট্রিট, ৩৭ অ্যাভিনিউ আর ব্রডওয়ে ছেয়ে গেছে বাংলা লেখা পোস্টারে। ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউ থেকে ব্রঙ্কসের স্টার্লিং অ্যাভিনিউয়ে পোস্টার ব্যানারের ছড়াছড়ি।

বাংলাদেশ কমিউনিটির লোকজন বলছেন, নিজেরা দাবি করলেও চার দশকের পথ চলায় বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্‌ক আমেরিকায় প্রবাসীদের ‘আমব্রেলা’ সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। আমেরিকায় বাংলাদেশিদের দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসনযাত্রা চলছে। একসময় দেশের নানা সভা-সমিতি করা লোকজন তাদের চিন্তার আদলে যে সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন, সময়ের আবর্তে সংগঠনটি তেমনই আছে। সাধারণ প্রবাসীদের সঙ্গে এই সংগঠনের শক্ত কোনো বন্ধন নেই। এ দেশে জন্ম বা বড় হওয়া বাংলাদেশি আমেরিকান প্রজন্মের সঙ্গেও নাই তাদের কোনো যোগসূত্র। মূলধারার আমেরিকায় এই সংগঠনটির কোনো অস্তিত্ব নেই। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ প্যারেড নামের একটি প্যারেড করেও অভিবাসনের নগরী নিউইয়র্কে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে পারেনি এই সংগঠন।
বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটার টানতে লাখ লাখ ডলারে ব্যয় করছেন। অনেকটা দেশের পাড়া মহল্লার সমিতির মতো সংগঠন হলেও সোসাইটির নির্বাচন ঘিরে নেতা-কর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনার শেষ নেই। নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই। প্রত্যেকটি ভোটার করতে ২০ ডলার করে ব্যয় করেছেন প্রার্থীরা। সদস্যদের চাঁদা পরিশোধ করেছেন প্রার্থীরাই। অনেক ভোটার জানেনই না, তিনি ভোটার হয়েছেন। তিনি জানেন না, কেন এই ভোটার হওয়া।

পুরো আমেরিকার প্রবাসীদের সংগঠন মনে করা হলেও সোসাইটির অধিকাংশ ভোটারই নিউইয়র্কের। নিউইয়র্কের বাইরের অনেক প্রবাসী জানেন-ই না, কিসের নির্বাচন, কবে নির্বাচন? ২০১৬ সালে সোসাইটির ভোটার ছিলে ১৮ হাজার ৫৫৪ জন। এবার প্রায় ৯ হাজার ৫০০ জনের বেশি ভোটার বানানো হয়েছে। যদিও ২০১৬ সালের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৫২ শতাংশ ভোটার। সে সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ হাজার ১৫৭ জন। এবার নিবন্ধিত ভোটার ২৭ হাজার ৫০০ জনের বেশি। এতে বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাগার শক্তিশালী হয়েছে। ভোটার নিবন্ধন নির্ভর অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪৬০ ডলার। সাধারণ ভোটার নিবন্ধন করা হয়েছে ২০ ডলারের বিনিময়ে। আর জীবন সদস্য ফি ৫০০ ডলার।

এক নিউইয়র্কেই আছে বাংলাদেশিদের অসংখ্য সংগঠন। জেলা, থানা, ইউনিয়ন বা পাড়া মহল্লার নামে যেমন সংগঠন আছে, তেমনই আছে মতিঝিল কলোনির নামে। আছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। এক নামে আছে একাধিক সংগঠন। এসব সংগঠন নিয়ে যারা ব্যস্ত থাকেন, তাদেরই একটা অংশ বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনী কোলাহলে জড়িয়ে আছেন। সব সংগঠনকে প্রতিনিধিত্ব করা বা যুক্ত করে অভিবাসীদের দেশ আমেরিকায় নিজেদের ঐক্যবদ্ধ অস্তিত্ব ঘোষণার কোনো ক্ষমতা নেই এসব লোকদের। যারা ভোটার হয়েছেন তাঁরা মনে করেন, যিনি চাঁদার অর্থ ২০ ডলার দিয়েছেন তাকেই ভোট দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বছরের পর বছর একটি চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন থেকে সব কার্যক্রম। কারও কোনো প্রত্যাশা নেই, কারও কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
অন্য সব সংগঠনের মতো সোসাইটি নিয়েও আমাদের কলহ-বিবাদের শেষ নেই। দেশের জাতীয় নির্বাচনের মতো এখানেও নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কেউ বলছেন, কমিশন এক পক্ষের হয়ে কাজ করছে। নির্বাচনকে আদালতেও নিয়ে গেছেন সোসাইটির সাবেক এক কর্মকর্তা। এ দেশে আইনের সাহায্য পেতে হলে ব্যয়বহুল পদক্ষেপ নিতে হয়। ওৎ পেতে বসে থাকা অ্যাটর্নিরা বাংলাদেশের অনেক সংগঠনের মামলা পাল্টা মামলায় দীর্ঘদিন ধরে তাদের পকেট ভারী করে আসছে। সোসাইটির নির্বাচন সামনে রেখে নানা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আদালতে এখন দুইটি মামলা।
সাধারণ প্রবাসীর অনেকেই মনে করেন, আমাদের অনেক কিছুই করার ছিল। দেশের রাজনীতি নিয়ে এখানে মারামারি না করে অভিবাসনের এই দেশে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়া অনেক জরুরি বলে সাধারণ প্রবাসীরা মনে করেন। প্রবাসীদের একটি সমন্বিত সংগঠন হিসেবে সোসাইটি প্রবাসীদের সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারত। নিজেদের আমেরিকান সমাজে সম্পৃক্ত করার কাজে সোসাইটিকে কখনো অগ্রণী ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।

প্রবাসীরা মনে করেন, সোসাইটির ভোটার করতে নিজের পকেটের অর্থ ব্যয় না করে জাতীয় ভোটার তালিকায় প্রবাসীদের নাম অন্তর্ভুক্তিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারত সোসাইটি। আদমশুমারি থেকে শুরু করে মার্কিন সমাজ জীবনে নিজেদের সম্পৃক্ত করার কোনো প্রয়াস এই সংগঠনটির অগ্রাধিকার দেখা যায়নি। নিউইয়র্ক নগরে এখনো কোনো বাংলাদেশি কাউন্সিলর নির্বাচিত না হওয়ার পেছনে সোসাইটি সাংগঠনিক ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না।
কয়েকজন প্রবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অন্য আর দশটি বাংলাদেশি সংগঠনের মতো সোসাইটি কয়েকটি দিবস পালন, বাংলা পত্রিকায় নিজেদের ছবি ছাপানো, নিজেরাই এসব ছবি দেখে আহ্লাদিত হওয়া ছাড়া আর কোনো কাজের কাজ হচ্ছে না। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সেতু বন্ধনের স্লোগান দেওয়া হলেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, এখানে বড় হওয়া বা জন্ম নেওয়া প্রজন্ম ধরেই নিয়েছে, তাদের পূর্বসুরীদের সঙ্গে সংযোগহীনতা অবশ্যম্ভাবী। পারিবারিকভাবে নতুন প্রজন্মকে ধর্মের নামে বা নিজেদের সংস্কৃতির নামে যে চাপে রাখা হয়, তা হিতে বিপরীত হতে দেখা যাচ্ছে। স্বদেশি অনুষ্ঠানে সেই একই গান ‘সোনা বন্ধুরে...’ শোনার জন্য মা-বাবার সঙ্গে নতুন প্রজন্মের প্রবাসীরা অনুষ্ঠানে পর্যন্ত যেতে চায় না। পেছনে ব্যানার, মঞ্চে বসা একদল লোক, দুর্বোধ্য সব ভাষায় বক্তার চিৎকার আর দীর্ঘ কথনে বিরক্ত নতুন প্রজন্ম স্বদেশি অনুষ্ঠান শুনলে ভয় পায়। তাদের সঙ্গে সেতু বন্ধন তৈরির যে পরিকল্পনা দরকার, তার কিছুই করা হচ্ছে না।
সমস্যা চিহ্নিত করে, বাংলাদেশ সোসাইটি প্রবাসীদের নানা ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমেরিকায় উদীয়মান অভিবাসী গোষ্ঠী হিসেবে বাংলাদেশিদের করার অনেক কিছুই ছিল। প্রবীণ সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান, তিন দশক থেকে নিউইয়র্কে আছেন। জানালেন নিজের হতাশার কথা। বললেন, ‘একসময় মনে হয়েছিল বাংলাদেশ সোসাইটিকে আমরা অন্য আরও দু-চারটি সংগঠন থেকে আলাদা করে দেখব। নিজেদের স্বার্থেই এই সংগঠনটি সব প্রবাসীর মুখপাত্রে পরিণত হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি, হয়ে ওঠেনি।’
সোসাইটির নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করতে গেলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কিছু হয়নি বলে আমাদের হাল ছেড়ে দিলে হবে না। আমেরিকায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের মুখপাত্র হিসেবে বাংলাদেশ সোসাইটিকে গড়ে তোলার জন্য প্রবাসীদের নিজেদেরও উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসা নেতৃত্ব সাধারণ প্রবাসীদের আকাঙ্ক্ষা কিছুটা ধারণ করতে পারলে ব্যয়বহুল এই আয়োজন কিছুটা হলেও কমিউনিটির কাজে লাগবে।’

এলএবাংলাটাইমস/এএল/এলআরটি

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত

এ বিভাগের আরো খবর