আপডেট :

        কুড়িগ্রামে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু

        চীন সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন

        দেশে একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম আরও কিছুটা কমানো হয়েছে

        ২৮ এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি চলছে

        ইউক্রেনে গোপনে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

        আবহাওয়া বিবেচনায় খোলা হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

        ‘ব্ল্যাক’ ফিরে যাচ্ছে পুরনো লাইনআপে!

        অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি কামনায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসতিসকার নামাজ

        রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন

        উপজেলা ভোটে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে

        বাস দুর্ঘটনায় বাবা নিহত, মা-ছেলে মুমূর্ষু

        ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট বাড়বে শারীরিক অস্বস্তি

        মোবাইল ইন্টারনেট গতির সূচকে আরও ৬ ধাপ পিছিয়ে ১১২তম অবস্থানে

        মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বর্ডার গার্ড পুলিশের

        বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ৫৭ জন কর্মকর্তা

        সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়া তিন বিচারপতি শপথ নিয়েছেন

        রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরাইল-ইরান-প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ বন্ধ করতে উদাত্ত আহ্বান

        হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেল রাজ্য সরকার

        সরকারি ব্যাংকের ছয় উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে অন্য ব্যাংকে বদলি করা হয়েছে

        ময়নাতদন্তের জন্য দাফনের ১৫ দিন পর কবর থেকে এক ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ তুলা হলো

সিলেটের প্রকৃতি ও প্রিয় মানুষগুলো

সিলেটের প্রকৃতি ও প্রিয় মানুষগুলো

আজ সকালে ফেসবুক সিলেট নিয়ে একটা মেমরি মনে করিয়ে দিল। অনেকবার ভেবেছি সিলেট নিয়ে কিছু লিখি। কিন্তু চেষ্টা করেও পারিনি। কি লিখব এই প্রিয় শহরটা নিয়ে? সিলেটের রূপের বর্ণনা করার মত সাহিত্যিক উপমা আমার স্টকে নেই। আর প্রথম আলোর সুবাদে সিলেটের ব্রিদটেকিং বিউটি নিয়ে সবাই কম বেশি জানে।আমি চিন্তা করতে লাগলাম সিলেটের সব চেয়ে কি বেশি ভালো লেগেছে আমার কাছে। সিলেটের চমৎকার আবহাওয়া, ঝরঝরে পাতলা বাতাস, ওখানকার ঘন সবুজ চা বাগান, টিলা, গভীর রাতের বৃষ্টি, সিলেটের মেঘ সব কিছু ছাপিয়ে আমার বোধহয় সবচেয়ে ভালো লেগেছে সিলেটের মানুষগুলো।

মানুষ ভালো লাগার মত কিছু কিনা এই প্রশ্নটা এসেছে আমার মনে। চিন্তা করে দেখলাম সিলেটের মেয়েরা খুব ভালো। বিশেষ করে বউ হিসেবে। অধিকাংশ সিলেটি ছেলেদের বাজার করার মত পেইনফুল কাজটা করতে তীব্র অনীহা দেখেছি। বাড়ির বউয়েরাই বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনার পথে কিম্বা কোচিংয়ে দিয়ে আসার সময়, নিদেনপক্ষে বাইরে না বেরুলে ওই ভ্যানওয়ালাদের কাছ থেকেই টুকটাক সবজী, মাছ কিনে নেয়। চাল ডাল তেল নুন মাসে একবার কিম্বা পাশের মুদী দোকান থেকে ঐ মেয়েরাই করে নেয়। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল দিতে হবে, বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে, ঈদের শপিং, রোজায়-ঈদে ননদের শ্বশুরবাড়ি ইফতার বা মাংস পাঠানো এই দায়িত্বগুলাও দেখি মেয়েরা ছেলেদের কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান না করে অবলীলায় নিষ্ঠার সাথে পালন করে যায়।

আমি সিলেটি মেয়েদের শ্বশুর শাশুড়িকে অসম্ভব ভক্তি শ্রদ্ধা করতে দেখেছি। কি হিন্দু, কি মুসলিম এখোনো জয়েন্ট ফ্যামিলি টিকে আছে সিলেটে। আর জয়েন্ট না টিকলেও চাচা চাচি ফুফু ফুফা মিলে এমন বন্ডিং আসলে অন্যান্য অনেক এলাকাতেই দেখা যায়না।

সিলেটি ছেলেরা তুলনামূলক অলস প্রকৃতির। আমি আমার ছোটবেলা থেকে দেখেছি ‘লাইফ ইজ এ রেস, ইফ ইউ ডোন্ট রান ফাস্ট ইউ আর লাইক ব্রোকেন আন্ডা’ টাইপ রেস সব জায়গায়। কিন্তু সিলেটি ছেলেরা কেমন একটা বিন্দাস, মানমৌজি ধরণের পরিবেশ পায়। লেখাপড়া করতে হয় বলেই করা। চাকরি তো কোন সিলেটি ছেলের দুঃস্বপ্নেও আসে না মনে হয়। সিলেটের বাইরে যেতে হবে শুনলে গায়ে জ্বর আসে তাদের। সিলেটের বাইরে একটাই জায়গা আছে যাওয়ার মত তা হল লন্ডন। ইন্টার চলা অবস্থায় অথবা পাশের পর লন্ডনে থাকা চাচা, মামা কিম্বা ফুফুর ঘরের ভাই বা খালার ঘরের ভাইকে ফোন দিয়ে বলবে, “দ্যাশো বালা লাগের না বা, নৌক্কাগি তুমার টাইন” তো বাস এসে গেলো তোমার লন্ডনের টিকেট। এরপর পাঁচ/দশ বছর বিদেশে বসে কষ্ট করবে এরপর দেশে এসে কোন একটা মার্কেটে ভালো একটা দোকান নিয়ে বা রেস্টুরেন্ট খুলে বসে পড়বে।

সিলেটি মানুষজন ব্যবসা করতে বা স্বাধীন পেশা বেছে নিতে পছন্দ করে। সিলেটে এমন বহু গ্রাজুয়েট আছে যারা জীবনে একটিবারের জন্যেও কোন পাবলিক পরিক্ষায় বসেনি। পারবে না এজন্য নয়, বরং ঢাকা গিয়ে পরিক্ষা দিতে হবে, কোথায় না কোথায় গিয়ে চাকরি করা লাগবে, সেখানকার পরিবেশ, খাবার স্যুট করবে কিনা এইজন্য। সিলেটিদের ঢাকা প্রীতি কম, ভীতি বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে আমি এমন বহু এলাকার মানুষ দেখেছি যারা ঢাকায় আসার পর ঢাকার বাইরে নিজেদের জীবন কল্পনা করতে পারেনা। ঈদে, পূজায় বাড়িতে গিয়েও এরা বেশিদিন থাকতে পারেনা। অথচ আমি এমন একটা সিলেটি ছেলের গল্প জানি যে ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেয়ে পরে ওসমানীতে মাইগ্রেট করার বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষপর্যন্ত সাস্টে ইকনোমিক্স নিয়ে পড়েছে।

তবে একটা জিনিস কি এই মনমৌজে চলা টেনশান ফ্রি মানুষগুলোর টাকা আমার কাছে খুব হালাল, খুব পবিত্র মনে হয়। ভালো একটা চাকরির জন্য সেই শিশুকাল থেকে করা ইঁদুর দৌড় আর নানা রকম রাজনীতি দূর্নীতির কঠিন ভয়াবহ পরিনতির পেরোনোর চেয়ে বেলা এগারোটায় ঘুম থেকে উঠে বারোটার সময় নাস্তাপানি সেরে মজাসে একটা পান চিবুতে চিবুতে ছোট্ট একটা দোকান খুলে বসা সিলেটি মানুষগুলোকে আমার ভীষন ভালো লেগেছে।

লেখক : সাবেক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিলেট জজ কোর্ট।
[লেখাটি লেখকের ফেইসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া]

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত