আপডেট :

        আওয়ামী লীগের সমাবেশ স্থগিত করা হলো

        বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি; যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা

        বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি; যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা

        বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি; যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা

        আমিরাতের বন্দরে ভিড়ল এমভি আবদুল্লাহ

        আমিরাতের বন্দরে ভিড়ল এমভি আবদুল্লাহ

        মালয়েশিয়ায় মহড়া চলাকালীন হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

        প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

        ইরানে ব্যাপক হামলা করতে চেয়েছিল ইসরায়েল

        ঢাকার ফুটপাত দখল ও বিক্রি বন্ধে পদক্ষেপের অগ্রগতির নির্দেশ

        দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে

        শাহি লাচ্ছি ও শসা-লেবুর শরবতের রেসিপি

        টঙ্গীতে ঝুটের গোডাউনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে

        অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি ১২৭ জনের

        তিন সপ্তাহে ফোনের বিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ডলার

        টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ক্লান্ত মোস্তাফিজকে চায় না বিসিবি

        জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র

        ম্যানহাটনের আদালতের বাইরে নিজের গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু

        যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে বন্দুকধারীর হামলা, মৃত ২

        সুদহার কমানো নিয়ে ফেডের নতুন ভাবনায় আরও শক্তিশালী মার্কিন ডলার

রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাট কেন, কিভাবে ও কারা?

রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাট কেন, কিভাবে ও কারা?

সাম্প্রতিককালের কয়েকটি ঘটনা এখন আর কেবল ক্ষমতাসীনদের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। ঘটনাগুলোর ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া পুরো জাতিকে অক্টোপাসের মতো গিলে খেতে চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জিএসপি বন্ধ করে দেয়া, আমাদের দেশের নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে একাধিক শুনানি এবং এ ব্যাপারে বিরূপ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের ভারি বেকায়দায় ফেলেছে। অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক আমাদের দেশের রফতানিপণ্য বহনকারী বিমান তাদের দেশে ল্যান্ড করার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল, তা এখন বর্ধিত কলেবরে ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল হয়েছে। গ্রেট ব্রিটেন কর্তৃক অস্ট্রেলিয়ার মতো একই কায়দায় বাংলাদেশী পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তা লিখিতভাবে জানানোর পর এ দেশের সরকারের মধ্যে বেশ অস্থিরতা শুরু হয়ে গেছে।

সরকারের এসব অস্থিরতার মাঝে নতুন করে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে দুনিয়া কাঁপানো আরেকটি আর্থিক কেলেঙ্কারি। ফিলিপাইনের পত্রিকাগুলো প্রথমে সংবাদটি প্রকাশ করে। তারপর তাবৎ দুনিয়ার সব মিডিয়ায় বিদ্যুৎগতিতে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মানুষ খবরটি শোনার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা আমেরিকার ফেডারেল ব্যাংকে জমা ছিল। একদল হ্যাকার বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সুইফট’ কোড এবং পাসওয়ার্ড হ্যাক করে ব্যাংকের সার্ভারে ঢুকে পড়ে। তারপর অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৮০০ কোটি টাকা সরিয়ে নেয়। পৃথিবীর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিভিন্ন বুথ, শাখা বা ভল্টে হ্যাক হওয়ার কথা শোনা যায়। কিছু দিন আগে বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু ফেডারেল ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের মতো অঘটন বাংলাদেশ তো নয়ই, দুনিয়ার কোথাও ঘটেনি। ফলে সারা পৃথিবীর ফেডারেল রিজার্ভ-ব্যবস্থায় বড় ধরনের একটি ধাক্কা লেগেছে। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়ার ফেডারেল ব্যাংকগুলো ঘটনাটির তদন্তে এবং আসামিদের শনাক্ত করার জন্য আদাজল খেয়ে নেমেছে। বাংলাদেশ ইচ্ছে করলেও তাদের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮০০ কোটি টাকার প্রসঙ্গ ইতঃপূর্বে সংঘটিত বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির মতো ধামাচাপা দিতে পারবে না।

আন্তর্জাতিক মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখে চুরির ঘটনা ঘটেছে। মার্কিন ফেডারেল ব্যাংক তাদের স্বীকারোক্তিতে বলেছে, অনলাইনে ৮০০ কোটি টাকা ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার দু’টি ব্যাংকে পরিশোধের নির্দেশনা পাওয়ার পর তারা বিধি মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংককে তা অবহিত করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে তারা নিয়ম মোতাবেক ৮০০ কোটি টাকা ট্রান্সফার করে দেয়। দুর্ঘটনাটি ঘটার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রায় এক মাস তা গোপন রাখে। জনগণ, মিডিয়া এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তো দূরের কথা তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ডকেও ঘটনাটি জানায়নি। পরে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর প্রচার হলে এবং ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সে দেশের সরকার পাচারকৃত অর্থের লেনদেনকারী ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করলে বাংলাদেশের সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকার করে নিতে বাধ্য হন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন আইটি বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ ব্যাংকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, হ্যাকারদের যদি বাংলাদেশের প্রভাবশালী গোষ্ঠী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সাহায্য না করত, তবে কোনো অবস্থাতেই মার্কিন ফেডারেল ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা সরিয়ে নেয়া সম্ভব হতো না। এ দিকে, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর খুবই দ্রুত কিছু অদ্ভুত ও আজগুবি ঘটনা ঘটতে থাকে, যা মানুষের সন্দেহের যাত্রা বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। গভর্নর আতিউর রহমান ভারতে চলে গেলেন একটি পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে যোগদানের জন্য। সেখানে গিয়ে তিনি মিডিয়ার কাছে সর্বপ্রথম মুখ খোলেন। তার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল তিনি বা তার প্রতিষ্ঠানের অন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনা এক মাস ধরে সরকারের কাউকে জানাননি। গভর্নর ভারতীয় মিডিয়ার কাছে বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। অন্য দিকে রাকেশ নামে এক ভারতীয় আইটি বিশেষজ্ঞকে রহস্যজনকভাবে তড়িঘড়ি করে, এমনকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে না জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইটি পরামর্শক হিসেবে মৌখিকভাবে নিয়োগ দেয়া হয়। মৌখিকভাবে নিয়োগ পেয়ে রাকেশ মিডিয়ার সাথে কথা বলা শুরু করেন এবং তার কোম্পানির লোকজন বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরো আইটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তারা অনেক বিভাগের চলমান সফটওয়্যার মুছে নতুন সফটওয়্যার ইনস্টল করেছে। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, রাকেশ পুরনো সফটওয়্যারের যাবতীয় তথ্য কোনো ব্যাকআপ ছাড়াই মুছে ফেলেছেন। ওই দিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত বিশ্বব্যাংকের এক কর্মকর্তা হ্যাকিংয়ের ঘটনা, বাংলাদেশ রিজার্ভের উচ্চগতি এবং জাতীয় গর্ব নিয়ে একটি ব্যঙ্গাত্মক কবিতা লিখে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

পত্রপত্রিকার মাধ্যমে দেশবাসী খুব ভালো করেই জানেন, পাঁচ-ছয় বছর ধরে গভর্নর আতিউর এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মালের সম্পর্ক তিক্ততার সর্বোচ্চ সীমায় ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো বিষয়ে মন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ফলে মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যেও দ্বন্দ্ব বেধে যায়। দেশের পুরো ব্যাংকিং খাতের লুটপাট, নৈরাজ্য, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি ও অন্যান্য বড় আর্থিক অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রধান কারণ ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং মন্ত্রণালয়ের বিরোধ। আর্থিক খাতের চোর-বাটপাড়, টাউট, লুটেরা ও দুর্নীতিবাজেরা রাতারাতি একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। দুই-তিনজন বিতর্কিত ব্যবসায়ীকে সিন্ডিকেটের প্রধান বানানো হয়, যারা দেশের ব্যাংক-বীমা পরিচালনার সাথে যুক্ত এবং একই সাথে ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোয় অবাধ বিচরণে সক্ষম। এই চক্রটি অত্যন্ত কৌশলে মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে করায়ত্ত করে ফেলে। তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ড গঠিত হওয়া কিংবা প্রধান নির্বাহী পদে নিয়োগ পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। দেশের খেলাপি ঋণ কিভাবে রিশিডিউলড হবে, কার ঋণের সুদ মওকুফ হবে, কে ঋণ পাবে ইত্যাদি বিষয় কথিত সিন্ডিকেট কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হওয়া শুরু হলো।

সিন্ডিকেটটির হাতে যখন অযাচিত অর্থ চলে এলো, তখন তারা সেই অর্থ দেশ-বিদেশে পাচার এবং বৈধ ও অবৈধ উপায়ে বিনিয়োগের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করল। সোনা চোরাকারবার, বিদেশে অর্থ পাচার, মাদক ব্যবসা এবং ক্যাসিনো ব্যবসার আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে সিন্ডিকেটটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ল। ঢাকা বিমানবন্দর এবং দেশের স্থলবন্দরগুলোকে তারা এসব চোরাচালানের গেটওয়ে বানিয়ে ফেলে। চার-পাঁচ বছরে ঢাকা বিমানবন্দর এবং কক্সবাজার উপকূলে স্বর্ণ ও মাদকের যে চালান ধরা পড়েছে, তা তামাম দুনিয়ার রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, চোরাকারবারিরা ইচ্ছে করেই প্রতি এক হাজারটি চালানের মধ্যে একটি চালান ধরিয়ে দেয়। সেই হিসেবে, ধরা পড়া স্বর্ণ ও মাদকের পরিমাণকে এক হাজার দিয়ে গুণ করলে এই অবৈধ ব্যবসার পরিমাণ এবং লেনদেনকৃত অর্থের যে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠবে, তা আমাদের দেশের গোয়েন্দারা হিসাব না করলেও পশ্চিমা দেশের গোয়েন্দা এবং সরকারি প্রশাসন খুব ভালো করেই জানে।

ঢাকা বিমানবন্দর, কার্গো ভিলেজ, উত্তরা ও বিমানবন্দর সড়কটির নিয়ন্ত্রণ যে প্রথমত চোরাকারবারিদের দখলে এবং দ্বিতীয়ত, উল্লিখিত সিন্ডেকেটের প্রভাবাধীনে চলছে এই নির্মম সত্যটি যদি সরকার অনুধাবন করত এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিত তাহলে অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন তাদের দেশে বাংলাদেশের পণ্যবাহী বিমান অবতরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারত না। যারা আন্তর্জাতিক এভিয়েশন ব্যবসা বোঝেন এবং আইয়াটা (IATA) সম্পর্কে জানেন, তারা পশ্চিমা দেশের সন্দেহ বা উদ্যোগকে মোটেও সমালোচনা করবেন না। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, দেশী-বিদেশী চক্রান্ত, সরকারের অগণতান্ত্রিক ও একগুঁয়ে পথ চলা, বিরোধী দলগুলোর বিনাশ সাধন, আইএস বা জেএমবি নামক জঙ্গিদের অপতৎপরতার কারণে আমাদের ভূখণ্ডের যেকোনো মারাত্মক সমস্যা বিমানযাত্রার মাধ্যমে যেকোনো দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

বাংলাদেশের লুটেরা চক্রের সিন্ডিকেটটি দেশ-বিদেশের ব্যাংক-বীমা, শেয়ার মার্কেট, বিমান ব্যবসা, হোটেল ব্যবসা, মাদক চোরাচালান, স্বর্ণ চোরাচালান, আইটি ব্যবসা, দেশের টেলিফোন ও ইন্টারনেট গেটওয়ের ব্যবসা, স্যাটেলাইট সম্প্রচার, বিতরণ এবং পরিবহন ব্যবসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। রাষ্ট্র ও সরকারের স্পর্শকাতর স্থানের হাঁড়ির খবর তাদের নখদর্পণে। তারা নিয়ন্ত্রণ অথবা প্রভাব বিস্তার করতে পারে না বাংলাদেশে এমন কোনো স্থান বা ক্ষেত্র বোধ হয় নেই। তাদের সিন্ডিকেটের কয়েক সদস্য আন্তর্জাতিক ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। নেপাল, ফিলিপাইন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা প্রদেশের নামকরা কয়েকটি ক্যাসিনো ও রিসোর্টের মালিকানা রয়েছে সিন্ডিকেট সদস্যদের। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পাঁচতারা মানের হোটেল ও রিসোর্টেও তাদের মালিকানা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের লুট করা টাকা ফিলিপাইনের ক্যাসিনোতে গেছে এটাকে যদি কেউ কু হিসেবে গ্রহণ করে তবে অনেক কিছুর রহস্যই দ্রুত উদঘাটন করা সম্ভব। সরকার যদি অত্যন্ত সৎসাহস ও দৃঢ়তা নিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট এবং বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের লোপাট হওয়ার নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়, তবে ঘোর অমানিশার ভয়ঙ্কর অন্ধকার এ দেশের অর্থনীতিকে গ্রাস করে ফেলবে। একটি বিষয় বোঝার জন্য বলছি কেন ফিলিপাইন সরকার, মার্কিন ফেডারেল ব্যাংক ও এফবিআই বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার এবং অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে? কেন বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা কবিতা রচনা করছেন? এ কাহিনীর পরবর্তী পর্ব কী হতে পারে? এ ব্যাপারে বক্তব্য পেশ করে আজকের নিবন্ধের ইতি টানব।

প্রথমত, মনে রাখতে হবে, ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো হ্যাকাররা কোনো একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ লোপাট করল। এটি আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থাপনার ফেডারেল সিস্টেমের জন্য একটি বিরাট অশনি সঙ্কেত। কোনো একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক হলে কিংবা কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপরাধী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার কারণে অন্য যেকোনো দেশের ফেডারেল ব্যাংকের নিরাপত্তা যে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে, তা আলোচ্য অপকর্মের মাধ্যমে ধরা পড়েছে। এ ঘটনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সেখানকার ব্যাংকিং-ব্যবস্থা মারাত্মক ইমেজ সঙ্কটে পড়ে গেছে। আগামী দিনে হ্যাকার চক্রটি আরো বড় কোনো অপকর্ম যে করবে না, এ কথা কেউ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারবে না। কাজেই মার্কিন ও ফিলিপাইন সরকার সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির হোতাদের খুঁজে বের করার জন্য।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সাথে বিশ্ব অর্থনীতির মোড়ল বলে খ্যাত বিশ্বব্যাংকের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তিক্ততার তলানিতে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের দেয়া অতীত ঋণ এবং চলমান প্রকল্পের জন্য তারা বাংলাদেশের সাথে কাজ করছে বটে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব পোষণ করে আসছে। বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানটিই তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা কিং মেকার এবং কিং ডেস্ট্রয়ারের ভূমিকায় সফলতা দেখিয়ে আসছে। জাতিসঙ্ঘের অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের পর বিশ্বব্যাংককেই সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী সংগঠন বলে বিবেচনা করা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বব্যাংকের সাথে সম্পর্কের অবনতি এবং উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে বিশ্বমোড়ল বেশ বেকায়দায় পড়েছে। তারা গত সাত বছরে প্রকাশ্য বিরোধিতায় বাংলাদেশের সাথে পেরে ওঠেনি। ফলে কূটনৈতিকভাবে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা তৎপরতা শুরু করে দেয়। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ তিনটি প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করার জন্য তারা অর্থায়ন করেছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোয় সব সময় তাদের মনোনীত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই কাজ করে থাকে। খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ ব্যাংকের অটোমেশনের কাজটি করেছিল ফিলিপাইনের একটি কোম্পানি। কাজেই আলোচ্য লুটপাট-বাংলাদেশী সিন্ডিকেট এবং বিশ্বব্যাংক কর্তার কবিতাকে কু হিসেবে নিয়ে তদন্ত করলে অনেক কিছু জানা যাবে বলে আশা করা যায়।

তৃতীয়ত, কেন্দ্রীয় রিজার্ভের ৮০০ কোটি টাকা চুরির ব্যাপারে সরকার যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তবে মার্কিন ফেডারেল ব্যাংকও অন্য বড় নামকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ জমা রাখতে অস্বীকার করতে পারে। অথবা বাংলাদেশের সাথে অনলাইন ব্যাংকিং বন্ধ রাখতে পারে। আল্লাহ না করুন যদি এরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তবে আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, জনজীবনসহ দেশের সার্বিক অবস্থার কী অবনতি হবে তা ভাবতেই মাথা ঘুরে ওঠে। সরকারকে বলব বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার জন্য। সরকারের পদক্ষেপগুলোর একটিও সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখেনি এবং হয়তো রাখবেও না। একজন গভর্নরের চাকরিচ্যুতি, দুইজন ডেপুটি গভর্নরকে অব্যাহতি, একজন সচিবকে ওএসডি করা ইত্যাদি কর্মে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে হয়তো কিছুটা আইওয়াশ হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এসব কর্ম সরকারের জন্য বুমেরাং বলেই বিবেচিত হচ্ছে। সুতরাং নতুন কিছু করতে হবে। বিদেশী বন্ধুদের বুদ্ধি কিংবা সহযোগিতা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। খাঁটি বাঙালি রক্ত ধারণ করে, এমন প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ এবং ব্যাংকিং-বিশেষজ্ঞ খুঁজে আনতে হবে দরকার হলে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকেও আনা যেতে পারে।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত