আপডেট :

        প্রকাশ পেল তুফান সিনেমার ফার্স্টলুক

        নিউইয়র্কে রাস্তায় আচমকা নারীদের ঘুষি মারছে অজ্ঞাতরা

        যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

        পাপারাজ্জিকে ঘুষি: টেলর সুইফটের বাবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

        দশ বছরে ৬৪ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু, সাগরেই ৩৬ হাজার

        বাল্টিমোরে সেতুধসে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের সব ক্রু ভারতীয়

        কে হচ্ছেন নতুন বন্ড

        জাহাজের ধাক্কায় বাল্টিমোরে সেতু ধসের সর্বশেষ

        শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের ভালো করা উচিত: সাকিব

        রিকশাওয়ালাদের গেম শো

        আর্জেন্টিনায় ৭০ হাজার সরকারি কর্মীকে বরখাস্ত

        সর্বজনীন পেনশন স্কীম কার্যক্রমের উদ্বোধন

        ভুটানের রাজাকে গার্ড অব অনার ও বিদায়ী সংবর্ধনা

        গাজায় মানবিক বিপর্যয় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে পরিণত: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান

        ভুয়া পিতৃপরিচয় দিয়ে বৃদ্ধের সঙ্গে প্রতারণা

        বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভূয়সী প্রশংসায় ডোনাল্ড লু

        মস্কোতে আইএসের হামলা চালানো, বিশ্বাস হচ্ছে না মারিয়া জাখারোভার

        নগরীর অচল ১১০টি সিসি ক্যামেরা হল সচল

        একনেকে ১১ প্রকল্পের অনুমোদন

        স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে সিকৃবিতে আলোচনা সভা

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশও

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশও

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’র প্রতীকী ছবি (রয়টার্সের সৌজন্যে

হাসান মাহামুদ


মানুষের তৎপরতার কারণে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই গ্যাসের নির্গমন মাত্রা কমিয়ে আনার বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় জলবায়ু সম্মেলন। চূড়ান্ত চুক্তির খসড়ার বিষয়ে সমঝোতা হয় বিশ্বের ১৯০টির বেশি দেশের অংশগ্রহণে ওই সম্মেলনে। চুক্তিটিকেই বলা হয় ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’। এটি বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক দেশের সম্মতিতে তৈরি হওয়া একটি চুক্তি। এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বিশ্বের ১৭৫টি দেশ। ২০১৬ সালের এপ্রিলে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তিতে একদিনে এত বেশিসংখ্যক রাষ্ট্রের স্বাক্ষর করার এটি নতুন একটি রেকর্ড।


চুক্তি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এমন পর্যায়ে বেঁধে রাখার উদ্যোগে নেওয়া হবে, যাতে তা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলার এই চুক্তিকে জাতিসংঘের মহাসচিব অভিহিত করেছিলেন ‘ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি’ হিসেবে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দুটি দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। বিষয়টি বর্তমানে সারাবিশ্বেই স্বীকৃত। এই দুটো দেশও চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করে।  আমরা জানি, জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগের নাম এবং কারণ। আগামী সব প্রজন্মের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে। সমর্থনকারী সব দেশসহ নীতিনির্ধারকরাও আশা করেছিলেন, প্যারিস চুক্তি সবার ভবিষ্যতকে সুন্দরভাবে গড়ে দেবে। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় নতুন করে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে।


জলবায়ু চুক্তিটি নিয়ে প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনটি ছিল ২১তম কপ সম্মেলন বা ‘কনফারেন্স অব পার্টি’। এতে উপস্থিত থাকা বাংলাদেশের একটি গবেষণা সংস্থার নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে একবার সম্মেলনটি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন- ‘সম্মেলনের সময়ও রিপাবলিকান সিনেটরদের এ বিষয়ে অনীহার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।’ প্রসঙ্গত, তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থী বারাক ওবামা। সম্মেলনে চুক্তিটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আর্থিক দিক থেকে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন ডলার হবে। যদিও অনেকেই এই ব্যয় বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তিনি আরো বললেন- ‘তখন আমেরিকার প্রতিনিধিরা বলেছিলেন, তাদের ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু করতে পারে না। তাদের রিপাবলিকান সিনেটরদের বোঝাতে হয়। আবার, চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কিছু তারা করবে না।’ অবশ্য ডোনাল্ট ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। ‍২ জুন তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে বের করে আনেন।


কার্বন ব্রিফের তথ্য অনুযায়ী, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশের গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী। এছাড়া ৫৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে থাকে ৫৫টি দেশ। এই দেশগুলো চুক্তিতে অনুসমর্থন দিলেই কার্যকর হবে প্যারিস চুক্তি। বাকি দেশগুলোও এতে অনুসমর্থন জানালে বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণের পরিমাণ কমতে শুরু করবে কার্যকরীভাবে। সবকিছু প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোচ্ছিল। কিন্তু এখানে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ট্রাম্পের ঘোষণার মাধ্যমে কার্বন নির্গমনকারী সবচেয়ে বড় দেশটিই সরে গেল।


যদিও এর আগে গত ২৮ মার্চ ট্রাম্প আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জলবায়ু নীতির গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ‘ক্লিন পাওয়ার প্ল্যান’সহ অন্তত ছয়টি পদক্ষেপ বাতিল করে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ-বিরোধীসহ ছয়টির বেশি পদক্ষেপ বাতিল হয়ে গেল। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র কার্বণ নিঃসরণের অঙ্গীকার করেছিল। ওবামার ক্লিন পাওয়ার প্ল্যানের (সিপিপি) গ্রিন রুল কার্বন নিঃসরণে সহায়ক ছিল। ওই নীতি অনুযায়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে নিরুত্সাহিত করার কথা বলা ছিল। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। এমনকি সরকারি জমিতে কয়লা উত্পাদন এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণে অনুমতি না দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। এই পদক্ষেপকে ওবামার ‘কয়লাবিরোধী যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। ওবামার নীতি রিপাবলিকান পরিচালিত রাজ্যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।


এখন ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, নতুন নীতিতে কাজের ক্ষেত্র যেমন বাড়বে, তেমনি জ্বালানি আমদানিও কমে যাবে। ব্যবসায়ীরা তার পদক্ষেপের প্রশংসা করলেও পরিবেশবাদীরা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, এই পদক্ষেপ দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র যে অঙ্গীকার করেছিল তা নতুন আদেশে ভঙ্গ হবে। পরিবেশবাদীরা আইনের আশ্রয় নেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেছে এই ধরনের নির্বাহী আদেশে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অর্থহীন হয়ে পড়তে পারে। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর বিশ্বব্যাপী হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন নির্বাহী আদেশকে প্যারিস চুক্তি ভঙ্গের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে চীন। এই প্রেক্ষাপটে বেইজিং আশঙ্কা করছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখার ঐতিহাসিক অঙ্গীকার থেকে সরে আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তারা জানিয়েছে, তেমন ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রের ওই অঙ্গীকারের দায় চীন নেবে না। চীনের এই প্রতিক্রিয়ার পর আরো সংশয়ের মধ্যে পড়েছে জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের প্যারিস অঙ্গীকার।


এরই মধ্যে অনেকেই বলছেন, ট্রাম্পের আদেশের ফলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে বিঘ্ন ঘটবে। যুক্তরাষ্ট্র ২০২৫ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ২৬ থেকে ২৮ শতাংশ কমানোর যে অঙ্গীকার করেছিল, ট্রাম্প কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র চালু করলে সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কঠিন হবে। জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণে রেখে এই গ্রহকে পরবর্তী  প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য রাখা সত্যিই এক কঠিন চ্যালেঞ্জের  মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশন-এর ২০১৭ সালের এক যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, বাতাসে ক্ষতিকর কণার কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৪২ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। যার মধ্যে চীনে ১১ লাখ ৬ হাজার, ভারতে ১০ লাখ ৯০ হাজার এবং বাংলাদেশে ১ লাখ ২২ হাজার জন ২০১৫ সালে মারা গেছেন। এর থেকে প্রতিবেদনের জন্য জমা রাখার বিধানটি ছিল।


শিল্পোন্নত দেশগুলো পরিবেশ রক্ষায় কোনো বিধি-বিধান না মানায় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে। একদিকে সাগর জলের উচ্চতা বৃদ্ধি, আবার অন্যদিকে অসময়ের খরা, বৃষ্টি, ঝড়, জলোচ্ছাসের বৃদ্ধি ঘটছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। এর আর্থিকসহ বিভিন্ন ক্ষতির পরিমাণও বিশাল। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী না হয়েও বাংলাদেশ শুরুর দিকের কয়েকটি দেশের সঙ্গেই ওই চুক্তিতে অনুসমর্থন দেয়। বর্তমান সরকারেরও এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু আমরা সাধারণ জনগণের অনেকেই এখনো এই চুক্তিতে কি রয়েছে, তাই জানি না। সরকারের উচিত, চুক্তিটির সব বিষয় প্রকাশ করা।


তবে, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- চুক্তিটি বাস্তবায়ন না হলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবো। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আ্যান্টার্কটিকার বরফ পিণ্ড যেভাবে তার অবস্থান থেকে সরে আসছে, তেমনি মানবজাতির স্বার্থে পৃথিবী নামক এই গ্রহকে রক্ষার স্বার্থেই বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে না গিয়ে, এর সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবেন।


লেখক : সাংবাদিক।

 

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত