আপডেট :

        প্রকাশ পেল তুফান সিনেমার ফার্স্টলুক

        নিউইয়র্কে রাস্তায় আচমকা নারীদের ঘুষি মারছে অজ্ঞাতরা

        যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

        পাপারাজ্জিকে ঘুষি: টেলর সুইফটের বাবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

        দশ বছরে ৬৪ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু, সাগরেই ৩৬ হাজার

        বাল্টিমোরে সেতুধসে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের সব ক্রু ভারতীয়

        কে হচ্ছেন নতুন বন্ড

        জাহাজের ধাক্কায় বাল্টিমোরে সেতু ধসের সর্বশেষ

        শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের ভালো করা উচিত: সাকিব

        রিকশাওয়ালাদের গেম শো

        আর্জেন্টিনায় ৭০ হাজার সরকারি কর্মীকে বরখাস্ত

        সর্বজনীন পেনশন স্কীম কার্যক্রমের উদ্বোধন

        ভুটানের রাজাকে গার্ড অব অনার ও বিদায়ী সংবর্ধনা

        গাজায় মানবিক বিপর্যয় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে পরিণত: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান

        ভুয়া পিতৃপরিচয় দিয়ে বৃদ্ধের সঙ্গে প্রতারণা

        বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভূয়সী প্রশংসায় ডোনাল্ড লু

        মস্কোতে আইএসের হামলা চালানো, বিশ্বাস হচ্ছে না মারিয়া জাখারোভার

        নগরীর অচল ১১০টি সিসি ক্যামেরা হল সচল

        একনেকে ১১ প্রকল্পের অনুমোদন

        স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে সিকৃবিতে আলোচনা সভা

আসাম যেন আরেক রাখাইন না হয়

আসাম যেন আরেক রাখাইন না হয়

আসামে নাগরিক যাচাইয়ের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নিবন্ধন তালিকায় ৭০ শতাংশ বাঙালি বাদ পড়েছেন। অন্য দিকে বাদ পড়েছেন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, এমপি, সাবেক মন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি। অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের প্রধান ও লোকসভার সদস্য বদরুদ্দিন আজমল তালিকায় স্থান পাননি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ সীমান্তের ডুবরির প্রভাবশালী কমিউনিটি লিডার তিনি। তার ভাই লোকসভার সদস্য সিরাজউদ্দিনের নামও তালিকায় ওঠেনি। তার দুই সন্তানও জায়গা পায়নি। একই দলের নেতা হাফিজ বশির আহমেদ কাসেমি ও তার পরিবারের সদস্যরা নাগরিক হিসেবে নিবন্ধন পাননি। বিরোধী দল কংগ্রেসের কয়েকজন সিটিং এমপি ও সাবেক মন্ত্রীও তালিকায় স্থান পাননি।
বিজেপি ঘরানার সাম্প্রদায়িক দলগুলোর আশীর্বাদপুষ্ট আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের’ নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। ১৯৮৫ সালে নাগরিকত্ব প্রশ্নে আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ‘আসাম চুক্তি’ স্বাক্ষর হয়। ওই চুক্তির আওতায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০০৫ সালে আসামের নাগরিকদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। আদালতকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সর্বোচ্চ দেবতা বানালেও সবাই জানে এর ওপরেও দেবতা রয়েছে। সেটি হচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার। বিজেপি সরকার আসামে ক্ষমতায় এলে এটি কার্যকর করার প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়। বিজেপির স্থানীয় নেতারা এ সময় নতুন করে জোর আওয়াজ তুলেছেনÑ আসাম প্রদেশের মুসলমানেরা বাংলাদেশ থেকে এসেছে। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, অনুপ্রবেশকারী মুসলিমরা হিন্দুদের কর্মসংস্থান নষ্ট করেছে। নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যে তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার শপথ নেয়। তাদের সেই শপথের প্রাথমিক বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ যাতে কোনো ধরনের প্রতিবাদ করতে না পারে, সে জন্য রাজ্যে ৬০ হাজার সেনা নিয়োগ করা হয়েছে।
নতুন এই নাগরিকত্ব নিবন্ধনের মানদণ্ড হচ্ছে ১৯৭১ সাল। ওই বছরের ২৫ মার্চের পরে যারা আসামে গেছেন, তাদের বিতাড়িত করা হবে। যে বিপুল নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তারা মূলত সংখ্যালঘু মুসলিম। তাদের কাছে এমন কাগজপত্র ও দলিল চাওয়া হচ্ছে, যা হয়তো তারা দাখিল করতে পারবেন না। রোহিঙ্গাদের কাছে যেমনটি মিয়ানমার সরকার চেয়েছে। আসাম রাজ্যসরকার জানিয়েছে, যেসব ব্যক্তি তাদের পরিবারের সদস্যদের ১৯৫১ সালের আগে এই রাজ্যে আসার তথ্য দিতে পারবে অথবা ভারতের নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী সদস্যরা যদি প্রমাণ করতে পারে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে তারা ও তাদের পরিবার আসামে এসেছিল, তাহলে তারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করার প্রক্রিয়া শুরু করে মিয়ানমার ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন দিয়ে। ওই আইনে বলা হয়, যারা ১৮২৪ সালের আগে থেকে দেশটিতে বসবাস করছে তারা মিয়ানমারের পূর্ণ নাগরিক। জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত সার্বজনীন মানবাধিকারের পরিপন্থী হলেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে এই অমানবিক আইনটিকে কাজে লাগিয়ে যচ্ছে। এবার ভারতের বাংলাদেশসংলগ্ন আসামে নাগরিকত্ব যাচাই কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে। ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনের (এনআরসি) প্রথম দফা খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়া হয়ে বাংলাদেশে আসবে, এমনটি মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। মিয়ানমার সেই প্রক্রিয়া নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। বাংলাদেশ সময়মতো সচেতনতা দেখায়নি। দেশটিতে যে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রতিবাদও করেনি। এমনকি মানবাধিকার নিয়ে জাতিসঙ্ঘে যখন প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে, মিয়ানমারের নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ পক্ষে অবস্থান নেয়নি। শেষে বাংলাদেশকেই তার চূড়ান্ত ভুক্তভোগী হতে হয়েছে। আসামে বিশাল একটি অংশ ভারতের নাগরিক নয় বলে যে আওয়াজ উঠতে যাচ্ছে, বাংলাভাষী এই মুসলমানেরা তাহলে কোন দেশের নাগরিক? তারা কি প্রতিবেশী মিয়ানমারের নাগরিক, যে দেশটি নিজের দেশের নাগরিকদের মুসলিম ও বাঙালি বলে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে? আসামে যে ষড়যন্ত্র ঘনীভূত হচ্ছে, আরেকটি বিশাল জনগোষ্ঠীর ভাগ্যেও কি রোহিঙ্গাদের পরিণতি অপেক্ষা করছে? তাহলে এই বিশাল রাষ্ট্রহীন মানুষের গন্তব্য কোন দেশ? এ প্রশ্নগুলো এখন ভাবতে হবে বাংলাদেশকে।
এখন ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ঘাড়ের ওপর উঠেছে। একটি সভ্য জাতি হিসেবে কোনোভাবে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেলে দিতে পারে না, কিন্তু সময়মতো সচেতনতার পরিচয় দিলে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। জাতিসঙ্গের সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ১৯৪৮ সালের সার্বজনীন মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী। রোহিঙ্গা সন্তানেরা জন্মগতভাবে মিয়ানমারের নাগরিক। নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন করে তাদের যখন রাষ্ট্রহীন করা হচ্ছিল, তখন বাংলাদেশ কোনো কথা বলেনি। নিষ্ঠুরভাবে তাদের যখন মৌলিক নানাবিধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তখনো কিছু বলেনি।
অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি না করে বাংলাদেশ আসলে কী অর্জন করেছে। আমরা কি মিয়ানমারের বন্ধুরাষ্ট্র্র হতে পেরেছি? বিগত তিন দশকে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব এক চুলও এগোয়নি, বরং আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রগুলো মিয়ানমারের সাথে তাদের সম্পর্কের উন্নতি করছিল, আমরা চুপচাপ থেকে সেটা দেখেছি। রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমার তার নাগরিকদের ওপর যে অন্যায় করেছে, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ফোরামে সেগুলো উত্থাপনের যথেষ্ট সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। মানবাধিকার সনদ লঙ্ঘনের বিষয়টি বাংলাদেশ জোরালোভাবে উত্থাপন করতে পারত। বাংলাদেশ তা করেনি, বরং যখন মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে, বাংলাদেশ চুপ থাকার নীতি গ্রহণ করেছে। অন্যায়কে এভাবে নীরবে সমর্থন করা কোনোভাবেই সঠিক হয়নি। তার দায় এখন বাংলাদেশকে বহন করতে হচ্ছে।
সাগরের বুকে জেগে ওঠা নতুন ভূমি বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ। এই দেশে মানুষের বসবাসের ইতিহাস খুব পুরনো নয়। ক্রমে দক্ষিণে যখন স্থলভাগ বিস্তৃত হয়েছে, উর্বর ভূমিতে এসে উত্তরের মানুষ বসতি গড়েছে। চূড়ান্ত বিচারে এখানকার মানুষ অভিবাসী। এখন যারা আগে বসতি গেড়েছে, তারা যদি পরে আসা লোকদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে, বিষয়টি কেমন দাঁড়াবে। মূলত ভারতের অধিবাসীরা এ অঞ্চলের (বাংলাদেশের) নবীন বাসিন্দা। পৃথিবীতে মানুষের আসার শুরু থেকে অভিবাসন চলছে। এটিকে অস্বীকার করার কারণে পৃথিবীতে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ছে।
ভারতে ধর্মের ভিত্তিতে যে মেরুকরণ চলছে, সেটা ভালো পরিণাম বয়ে আনবে না। ধর্ম পরিবর্তনও অভিবাসনের মতো একটি বিষয়। মানুষ বরাবরই পুরনোকে ত্যাগ করেছে। নতুন ও টেকসই ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছে। এ ধরনের বিবর্তন পৃথিবীর এক অনিবার্য প্রক্রিয়া। এটিকে অস্বীকার করা হচ্ছে বড় ধরনের সাম্প্রদায়িকতা। ভারতের হিন্দুরা যেমন দেশটির নাগরিক, একইভাবে অন্য ধর্মাবলম্বীরাও। এরা বাইরে থেকে এসেছেন কোনোভাবেই কথাটি সত্য নয়। মধ্যযুগের শুরুতে আরবেরা যেমন এসেছে, আধুনিক যুগের শুরুতে তেমনি ইউরোপীয়রা এসেছে। জাতপাতে বিভক্ত সনাতন ধর্মের মানুষকে মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল তৎকালীন আরবেরা। পরে ইউরোপীয়রা দিয়েছিল আধুনিকতার ছোঁয়া। আরব ও ইউরোপীয় কেউ এ ভূখণ্ডে থেকে যায়নি। ভারতীয় রক্তের সাথে তাদের মিশ্রণ হয়েছে খুব সামান্য।
উপমহাদেশে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন হয়েছে বিভিন্ন সময়। এখন অনুপ্রবেশকারী তকমা দিয়ে কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হলেও পুরো অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা আরো বাড়বে। আসামে চাকরি ও সরকারি সুযোগ সুবিধা কেড়ে নেয়ার যে অভিযোগ ওঠানো হচ্ছে, সে হিসাব করা যুক্তিযুক্ত হবে না। বাংলাদেশে চাকরি ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয়রা এক নম্বরে রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স নিয়ে যায় ভারত। যেখানে বাংলাদেশে উচ্চ বেকারত্ব বিরাজ করছে। এ ভারতীয়দের বেশির ভাগই বৈধভাবে বাংলাদেশে চাকরি করে না। বাংলাদেশে এর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিবাদ দেখা যায় না। বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে উদারতার পরিচয় দেয়। আসামের উর্বর ভূমি একসময় আশপাশের কৃষিজীবীদের আকৃষ্ট করেছে। বাংলাদেশ থেকেও কৃষকেরা একসময় সেখানে গেছে। যেমন ভারতীয় উপমহাদেশের অপেক্ষাকৃত নতুন ভূমি বাংলাদেশে বসবাস করছে উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা মানুষ।
আসামের মোট জনসংখ্যা তিন কোটি ৩০ লাখ। রাজ্যের জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশের বেশি মুসলিম। অর্থাৎ তাদের মোট সংখ্যা এক কোটির বেশি মুসলিম। ৯টি জেলায় মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। নাগরিক সনদ প্রদানের প্রথম দফায় ৬০ শতাংশকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাদ পড়েছে ৪০ শতাংশ। বাদ পড়া অংশটি মূলত মুসলিম ও বাঙালি। রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করা ছিল একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। এ জন্য তারা প্রথমে একটি নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন করে। যখন এই আইনটি রচিত হয়, তখন রোহিঙ্গারা একটি জাতিগোষ্ঠী হিসেবে দেশটিতে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাদের সদস্যরা জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিল। তাদের মধ্যে মন্ত্রীও হয়েছিলেন। অং সান সু চি এবং তার বাবার উপদেষ্টা পরিষদে রোহিঙ্গা সদস্যরা ছিলেন। ধূর্ত সেনাবাহিনী যখন এই পরিকল্পনার সূচনা করে কেউ সেটাতে নেতিবাচক কিছু দেখেননি।
নাগরিকত্ব আইন করার একপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মূলত সামরিক নেতাদের টার্গেট ছিল সাম্প্রদায়িক উসকানি দেয়া। এখন যেটা স্পষ্ট বোঝা যায়। স্থানীয় বৌদ্ধদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের মুসলিম পরিচিতির বিষয়টি উসকে দেয়া হয়। যখন দুই কমিউনিটির মধ্যে ধর্মীয় বিভাজন ছড়িয়ে দেয়া হলো, তখন এমন কিছু ঘটনা ঘটানো হলো উভয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হলো। বিগত ৩০ বছরের এমন অসংখ্য ঘটনা দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাদ চরম পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। এরপর বৌদ্ধদের নিয়ে স্থানীয় মুসলিমদের ওপর নৃশংস অভিযান চালানো হয়। এক একটি অভিযান আগের অভিযানের চেয়ে ছিল নিষ্ঠুর। এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেয়া।
অভিযান শেষ হলে মুসলিম জনপদগুলোকে অবরোধ আরোপ করা হয়। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ, চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। মাঝে মধ্যে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার উৎসবে মেতে ওঠা চলতেই থাকে। তাদের কাছে থাকা নাগরিক সনদের জন্য উপযুক্ত দলিল কেড়ে নেয়া হয়, যাতে করে পরে এগুলো প্রদর্শন করে নাগরিকত্বের দাবি না করতে পারে। এর ওপর কোনো উসিলা ধরে চূড়ান্ত গণহত্যা চালানো হয়। পুরো জনপদের মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়। তারা মানসিকভাবে ধরেই নেয় যে, মিয়ানমারে তাদের থাকা আর সম্ভব নয়। এ জন্য কোনো একটি এলাকা নতুন করে আক্রমণ হলে দলবেঁধে সবাই দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নেয়। দেশ থেকে বিতাড়নের জন্য এটা ছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি চক্রান্ত। তারা এটা দারুণভাবে সফল করেছে। রোহিঙ্গাদের প্রায় সবাই নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
আসামে অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজে মুসলমানেরা অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো প্রতিষ্ঠিত। যেমনটি মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা প্রতিষ্ঠিত ছিল। আসামে ধর্মীয় উত্তেজনা ও রায়টের কয়েকটি পর্ব ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। নাগরিক নিবন্ধনের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে এখনে রোহিঙ্গা লক্ষণ প্রকাশ পায়। আসামের উপজাতিরা সবাই নাগরিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর আগে সেখানে উপজাতিদের সাথে মুসলমানদের দাঙ্গা বাধিয়ে দেয়ার ইতিহাস আছে। এখন তালিকা থেকে মুসলমানেরা যখন বাদ পড়ছে, তাদের জন্য এটি একটি মানসিক প্রস্তুতির সময়কাল। সংবাদমাধ্যম এর মধ্যে খবর দিয়েছে, অনেকে আসাম ছাড়ছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে যে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেছে, তার বিভিন্ন ধাপ সামনে কি আসামেও দেখা যেতে পারে?


এলএবাংলাটাইমস/সিএলআরটি 

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত