আপডেট :

        উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল

        মানবাধিকারের উল্লেখযোগ্য উন্নতি

        প্রচণ্ড এই গরম থেকে মুক্তি পেতে বৃষ্টির জন্য বিভিন্ন জায়গায় নামাজ পড়ে দোয়া

        যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার

        এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো

        মার্কিন বিমান আটকে দিলো ‘যুদ্ধবিরোধী’ কুমির!

        চিতাবাঘের আক্রমণে আহত জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার হুইটাল

        যুক্তরাষ্ট্রে গরুর দুধেও বার্ড ফ্লু শনাক্ত

        পবিত্র হজ পালনের অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

        গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

        পার্লামেন্টে জুতা চুরি, খালি পায়ে ঘরে ফিরলেন পাকিস্তানের এমপিরা

        অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

        কুড়িগ্রামে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু

        চীন সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন

        দেশে একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম আরও কিছুটা কমানো হয়েছে

        ২৮ এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি চলছে

        ইউক্রেনে গোপনে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

        আবহাওয়া বিবেচনায় খোলা হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

        ‘ব্ল্যাক’ ফিরে যাচ্ছে পুরনো লাইনআপে!

        অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি কামনায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসতিসকার নামাজ

মঞ্চে জীবন নাটক

মঞ্চে জীবন নাটক

প্রায় এক দশক আগে এমনই কোন এক গ্রীষ্মকালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সপরিবারে প্রথম এসেছিলাম । গন্তব্য শহর থেকে গ্রামে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে, এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত এ মহাদেশটি এতটাই উন্নত যে - এখানে চিরচেনা 'গ্রাম' এর দেখা মেলা ভার ! অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার সর্বোচচ ব্যবহার করে প্রতিটি শহরতলী থেকে শহর গড়ে তোলা হয়েছে। গ্রাম বা শহুরে জীবনযাপনে আহমরি তফাৎ চোখে পড়ে না এদেশে । আগুন্তুক হিসেবে আমি যা দেখতাম, তাতেই মুগ্ধ হতাম ! তবুও দিন শেষে কোথায় যেন অতৃপ্তি ! ছোট্ট যে শহরে আমি ছিলাম, আশেপাশে কোন বাঙালি ছিলো না। মাইল খানেক দূরত্বে কয়েকটি বাংলাদেশী পরিবার বাস করতো । মাঝেমধ্যে দেখা হতো। একেবারেই ছোট পরিসরে আয়োজন হতো দেশীয় উৎসব-পার্বনের।

ওখান থেকে বানিজ্যিক নগরী সিডনির দূরত্ব পাঁচশত মাইল। অস্ট্রেলিয়ায় সর্বাধিক বাংলাদেশীদের বসবাস সিডনিতে । বৃহৎ পরিসরে বিস্তৃত বাঙালি কমিউনিটি । কমিউনিটি প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি বাংলাদেশীদের উদ্যোগ এবং অংশগ্রহণে নানান সাংস্কৃতিক-সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা। সেসব আমাকে আপ্লুত করতো তখন! গভীরভাবে উপলদ্ধি করতাম—একটি জাতির আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশের প্রধান মাধ্যম তার মাতৃভাষায়। প্রবাসে আমাদের সন্তানেরা আধো বাংলা-ইংরেজী মিশ্রনে কথা বলে।  তা শুনতে কতটা শ্রুতিমধুর সে হিসাবে  বড়ই গড়মিল ! শংকিত হই এই ভেবে যে—তৃতীয়-চতুর্থ বা পরের প্রজন্ম গল্পের ছলে না বলে বেড়ায়, ‘আমাদের পূর্বপুরুষদের ভাষা ছিল বাংলা  এবং একদা আমরা বাঙালি ছিলাম' !

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে একটি গান খুব শোনা হতো তখন, "মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে, স্মৃতি যেন আমার এ হৃদয়ে বেদনার রঙ্গে রঙ্গে ছবি আঁকে"। পরবর্তীতে সিডনিতে স্থায়ী বসবাস শুরু । সিডনি বাঙালি কমিউনিটি'তে নিজেকে সম্পৃক্ত করা । এরইমধ্যে কমিউনিটির বিভিন্ন কাজে যথাসাধ্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি এবং যাবো। গত এক দশকে একজন প্রবাসী হিসেবে আমি দেখছি, বাংলাদেশীরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই বসবাস করছেন, অবধারিতভাবেই সেখানে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন-প্রতিষ্ঠান ।
বলাবাহুল্য, প্রায় পঞ্চাশ/ষাট দশকের সিডনি বাঙালি কমিউনিটি এখন অনেক বেশী বিস্তৃত ! সাংস্কৃতিক বিস্তৃতি হয়েছে সব'চে বেশী । সম্প্রতি সংযোজন হয়েছে মঞ্চ নাটক । মঞ্চ নাটক এর আগেও প্রদর্শিত হয়েছে সিডনির
মঞ্চে । তবে, গত কয়েক মাসে পরপর প্রদর্শিত হয়েছে ভিন্ন সংগঠন আয়োজিত মঞ্চ নাটক—দর্শক চাহিদার কারনে কোনটি দ্বিতীয়, তৃতীয়বারও মঞ্চস্থ হয়েছে । প্রতিটি প্রদর্শণীই ছিলো দর্শক মুখর এবং অবশ্যই তা পকেটের টাকায় টিকেট ক্রয় করে। ভাবতেই ভালো লাগে, ঢাকার নাটক পাড়া বেইলি রোড হতে যাচ্ছে সিডনিতে । সর্বশেষ আমি সপরিবারে দেখতে গিয়েছিলাম 'রিফিউজি বিভ্রাট' । অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে মঞ্চায়িত এ নাটকটির পটভূমি রচিত হয়েছে, সমুদ্রপথে দেশটিতে আসা শরণার্থীদের নিয়ে—শরণার্থী বা রিফিউজিদের হাসি-কান্না, ফেলে আসা স্মৃতি, স্বপ্ন-স্বপ্নভঙ্গের কাহিনী নিয়েই গড়ে উঠেছে নাটকটি ।

নাটকটি লিখেছেন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশী নাট্যকার বেলাল হোসেন ঢালী। রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি । গত ২৩ ডিসেম্বর' ২০১৮ সিডনির ব্যাংকস টাউনের ব্রায়ান ব্রাউন থিয়েটারে নাটকটি মঞ্চায়িত হয়।

ইন্দোনেশিয়া থেকে সমুদ্রপথে ট্রলারে করে অস্ট্রেলিয়ায় আসা একদল শরণার্থীর কর্মকান্ড ফুটিয়ে তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাসরত স্থানীয় বাংলাদেশী শিল্পীবৃন্দ । সমুদ্র যাত্রা ও বেআইনিভাবে অস্ট্রেলিয়া প্রবেশের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন, মো. আবদুল কাউয়ুম, ফজলুল হক শফিক, রহমত উল্লাহ, নুরে আলম লিটন, হাবিবুর রহমান হাবিব, কামরুল ইসলাম, আমেনা আক্তার সাগর, মেরিনা জাহান, মো. মাসুদুর রহমান প্রমুখ। প্রসঙ্গত, এর আগে সিডনিতে বেলাল হোসেন ঢালীর রচনায় ও নির্দেশনায় সিটিজেন, আদমখানা ও বিদ্রোহী নাটক মঞ্চায়নের পর দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

বেলাল ঢালী'কে ধন্যবাদ সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত জীবন যুদ্ধের গল্প তুলে ধরার জন্য। ঘটনা প্রবাহে হাস্যরসাত্মক সংলাপগুলো কঠিন জীবন সংগ্রাম সহজ করে তুলেছে । দর্শকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে । মঞ্চসজ্জায় ছিলেন পরিচিত মুখ লরেন্স ব্যারেল । সব কিছু মিলিয়েই পরিচ্ছন্ন ছিলো নাটকটি ।

বিনোদনের মাধ্যমে কমিউনিটি-সমাজে যদি কোন ম্যাসেজ দেয়া যায়, সেটা গুরুত্ব বহন করে । এ নাটকটির মাধ্যমে অভিবাসন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পাবে শরণার্থীরা । এছাড়াও আমার ব্যক্তিগত অভিমত, সংগঠন-আয়োজক-উদ্যোক্তা সকলের সহযোগিতায় অন্যান্য শাখায় ও সংযোজন হোক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের, সেই সাথে চর্চা হোক দেশীয় ভাষার। বাঙালি কমিউনিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখুক মাল্টিকালচারাল এ মহাদেশটিতে ।

শুভকামনা নাটকটির পরিচালক, কলাকুশলী ও সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য । বিভ্রাটের কবল থেকে মুক্ত হোক রিফিউজিরা।

এলএবাংলাটাইমস/ই/এলআরটি

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত