আপডেট :

        স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে সিকৃবিতে আলোচনা সভা

        বিএনপি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করে না: ওবায়দুল কাদের

        বিএনপি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করে না: ওবায়দুল কাদের

        বিচারকবিহীন আদালত

        বাংলাদেশের গণতন্ত্র এগিয়ে নেওয়াই যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার

        সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেনের মৃত্যু

        জাতীয় ছাত্র সমাজের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

        দ্বিতীয় টেস্টে নেই হাথুরু

        ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলা ২০২৪’

        গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

        আত্মনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করতে হবে: সিসিক মেয়র

        রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

        মস্কো কনসার্ট হামলায় পশ্চিমা বিশ্ব ও ইউক্রেনের ইন্ধনের অভিযোগ রাশিয়ার

        র‍্যাবের পৃথক অভিযান, ১২ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

        পদ্মা সেতুতে ভুটানের রাজা

        মার্কিন কূটনীতিককে তলব

        স্বাধীনতা দিবস বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের ফসল: প্রতিমন্ত্রী

        সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংবিধান শক্ত অবস্থানে: সংসদ স্পিকার

        বাল্টিমোর সেতু দুর্ঘটনা ভয়াবহ: বাইডেন

        মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুজিব কোট’ উপহার দিলো প্রশাসন

ট্রাম্প-কিম সম্মেলন বাতিলে উত্তেজনা-অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা

ট্রাম্প-কিম সম্মেলন বাতিলে উত্তেজনা-অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা

উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে ১২ জুন অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্মেলন বাতিল হওয়ায় কোরীয় উপদ্বীপে আবারও উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার এক চিঠির মাধ্যমে কিম জন উনকে জানিয়ে দেন, ‘আপনার সঙ্গে বৈঠকের জন্য আমি খুবই উন্মুখ ছিলাম। দুঃখজনকভাবে, ভয়ানক ক্ষোভ এবং প্রকাশ্য শত্রুতার ওপর ভিত্তি করে দেওয়া আপনার অতি সাম্প্রতিক বিবৃতির প্রেক্ষিতে আমি মনে করি এটা বৈঠকের যথার্থ সময় নয়।’ জবাবে উত্তর কোরিয়া ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকেই ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন বলেছেন, এ ঘটনা জেনে তিনি ‘হতভম্ব।’

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্ত এসেছিল উত্তর কোরীয় কর্মকর্তার উচ্চবাচ্যের ১২ ঘণ্টা পার হতে না হতেই। উত্তর কোরিয়ার একজন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন। তিনি পেন্সকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘সম্মেলনের আগে যুক্তরাষ্ট্র যদি তার কথা বলার ভঙ্গিতে নমনীয় না হয় তাহলে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে শক্তি প্রদর্শন করবে’। এরপরই সম্মেলন বাতিল করার কথা জানিয়ে পাঠানো চিঠিতে ট্রাম্প কিমকে লিখেছেন, ‘আপনি আপনার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসেন কিন্তু আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র মজুত এত বিশাল ও ভয়ঙ্কর যে আমি প্রার্থনা করি ঈশ্বর যেন সেগুলো ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতিতে না ফেলেন।’

ট্রাম্পের চিঠি পাওয়ার পর উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, তারা ‘যেকোনও সময়’ ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। সরকারি সংবাদমাধ্যমকে উত্তর কোরিয়ার ভাইস মিনিস্টার কিম গে গোয়ান বলেছেন, ‘আমাদের নেতা কিম জং উন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি বিষয় মনোযোগ দিয়ে দেখছেন।’ তবে হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, খুব সহসা ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ পিয়ংইয়ং লাগাতার ‘প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছে’, যা তাদের বিশ্বাসকে নষ্ট করেছে। ওই কর্মকর্তা বিশেষভাবে কয়েকটি বিষয়ের কথা তুলে ধরেছেন। গত মাসে কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সিঙ্গাপুরে আহূত সভায় উত্তর কোরিয়ার যোগ না দেওয়ার বিষয়টি এগুলোর একটি। তাছাড়া মে মাসের ৯ তারিখে ‘লিবিয়া মডেল’ সংক্রান্ত বিবৃতি দেওয়ার আগে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি, সেটিও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আপত্তিকর মনে হয়েছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, সম্মেলন বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। এদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র–উত্তর কোরিয়ার সংলাপে মধ্যস্থতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতে বিশাল প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করে ওয়াশিংটন পোস্ট। সম্মেলন বাতিলের খবর জেনে ‘খুবই দিশেহারা ও দুঃখিত’ মুন বলেছেন, ‘কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করা একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব এবং তা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেওয়া যায় না।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও মার্কিন সিনেট কমিটির শুনানিতে বৃহস্পতিবার বলেছেন, সম্মেলন বাতিল হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখবে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তো বটেই এমনকি এক জাহজ থেকে আরেক জাহাজে পণ্য স্থানান্তরের সুযোগও পাবে না উত্তর কোরিয়া। দেশটিতে জ্বালানি তেলের সরবরাহও বাধাগ্রস্ত হবে।’ পম্পেওর ভাষ্য, ‘চাপে রাখার কৌশল বলবৎ থাকবে। সেটা বদলাবে না।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্মেলন বাতিল করে দেওয়ায় বরং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকা অবস্থায়ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে কিম জং উনের সাক্ষাৎ হওয়ার ঘটনায় এমনিতেই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি হালকা হয়ে গেছে। অপরদিকে কিমের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ট্রাম্প যা করলেন তাতে বিশ্বের কাছে কিম জং উনের অবস্থান বরং উঁচু হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান ই রাইস টুইটারে লিখেছেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা করেছে তা একটি দীর্ঘ ঘণ্টা জুড়ে চলা আনাড়ি প্রচেষ্টা।’

উত্তর কোরিয়া ওপর আস্থা রাখাটা ঠিক হবে না, ট্রাম্পকে এমন সতর্কবাণী অনেকবারই দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বুশ প্রশাসনের এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা ভিক্টর চা মন্তব্য করেছেন, ‘তাড়াহুড়ো করে সম্মেলন ডাকলে এমন অবস্থায়ই হয়। যদি এই সম্মেলন বাতিল হয়ে যাওয়ার অর্থ এটা হয় যে, উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র গবেষণায় আর বাধা দেওয়া যাবে না, তাহলে তা আমাদের জন্য খুব খারাপ হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন উত্তর কোরিয়ার সদিচ্ছার বিষয়ে সংশয় জ্ঞাপন করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, নিষেধাজ্ঞা এড়াবার জন্য উত্তর কোরিয়া আগেও নমনীয় হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করেনি। নিশ্চিতভাবে পরমাণু অস্ত্র ত্যাগে উত্তর কোরিয়াকে রাজি করাতে তিনি ‘লিবিয়া মডেলের’ প্রসঙ্গ টেনেছিলেন। যার অর্থ হচ্ছে নিশ্চিতভাবে সব পরমাণু অস্ত্রের স্থাপনা বন্ধ করে দেওয়া ও সব পরমাণু অস্ত্র দেশ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরই শুধু উত্তর কোরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

শান্তিপূর্ণভাবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব না হলে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তার ভাষ্য, ‘আশা করি উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে ভালো কিছু ঘটবে। যদি তা না ঘটে তাহলে জানিয়ে রাখতে চাই, আমরা যেকোনও সময়ের চেয়ে এখন বেশি প্রস্তুত।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসের সঙ্গে হওয়া আলোচনার কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছিলেন, ম্যাটিস মার্কিন সেনাবাহিনীকে ‘এখন পর্যন্ত বিশ্বের যেকোনও স্থানে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে গণ্য হওয়ার মতো’ সেনাবাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত