আপডেট :

        বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ৫৭ জন কর্মকর্তা

        সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়া তিন বিচারপতি শপথ নিয়েছেন

        রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরাইল-ইরান-প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ বন্ধ করতে উদাত্ত আহ্বান

        হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেল রাজ্য সরকার

        সরকারি ব্যাংকের ছয় উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে অন্য ব্যাংকে বদলি করা হয়েছে

        ময়নাতদন্তের জন্য দাফনের ১৫ দিন পর কবর থেকে এক ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ তুলা হলো

        মেটার রে-ব্যান স্মার্ট রোদচশমা,করা যাবে ভিডিও কল

        পানিসংকটের শঙ্কা ও শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে পূর্বনির্ধারিত গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল

        শেয়ারবাজারের টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে

        দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার জেরে উত্তপ্ত ফরিদপুর

        দেশে একদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে সোনার দাম কমলো

        বাংলাদেশ সিরিজের জন্য দল ঘোষণা

        মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিরা

        মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিরা

        যুক্তরাষ্টের শিক্ষকদের স্কুলে বন্দুক নিয়ে যাওয়া নিয়ে একটি বিল পাস হয়েছে

        যুক্তরাষ্টের শিক্ষকদের স্কুলে বন্দুক নিয়ে যাওয়া নিয়ে একটি বিল পাস হয়েছে

        র‍্যাবের মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত

        ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নেওয়া হচ্ছে পদক্ষেপ

        বিশেষ ট্রেনের ৩ বগি লাইনচ্যুত

        কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটার কতজন?

বিডিআর হত্যাযজ্ঞের বার্ষিকীতে লন্ডনে নাগরিক সমাবেশ

বিডিআর হত্যাযজ্ঞের বার্ষিকীতে লন্ডনে নাগরিক সমাবেশ

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীদের বিচার দাবি করেছেন- বৃটেনে বসবাসরত বাংলাদেশী সাবেক সেনা কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা।

বিডিয়ার বিদ্রোহ নামে ভয়াবহতম এ ঘটনার ৭ম বার্ষিকীতে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লন্ডনের ওয়াটার লিলি মিলনায়তনে সিটিজেন মুভমেন্টের বা নাগরিক আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘পিলখানা হত্যাকান্ড: বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বিশিষ্টজনরা বলেন- বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে পঙ্গু করতেই পিলখানায় সুক্ষ্ম কৌশলে সেনা হত্যাকান্ড চালানো হয়। দুনিয়ার কোনো যুদ্ধে এক সাথে এত সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার নজির নেই।

শত শত প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে দর্শক সারিতে বক্তব্য শোনেন  বিএনপির সিনিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। পরে আয়োজকদের অনুরোধে শোকাবহ এ দিনের ওপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমি শ্রদ্ধার সাথে সরণ করছি পিলখানায় নিহত শহীদ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ অন্যান্য নিহত সৈনিকদের। সেইসাথে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি নিহত সেনা অফিসারদের পরিবারের স্বজনের প্রতি। তিনি সেমিনারের ব্যানারে লেখা তিনটি শব্দের বিশ্লেষণ করে বলেন, একটি রাষ্ট্রে জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বাধাগ্রস্ত করার জন্যে ষড়যন্ত্র থাকতেই পারে। দ্বিতীয়টি হলো নিরাপত্তা, কিছু দিন আগে বৃটেনের সরকার তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ সফর করতে নিষেধ করেছে। এতেই বুঝা যায় বাংলাদেশের নিরাপত্তার কত নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। আর তৃতীয়টা হলো- সার্বভৌমত্ব। ৭১ সালে জনগণকে সাথে নিয়ে এই সেনারাই ঐক্যবদ্ধভাবে সার্বভৌমত্বকে ছিনিয়ে এনেছিলেন। ৫৭ সেনা অফিসারদের হত্যার মাধ্যমে যে মেসেজ দেয়া হয়েছে সেই প্রেক্ষিতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ নিয়ে তাদেরকেই আবারো এগিয়ে আসতে হবে।

নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক এমএ মালেকের সভাপতিত্বে এবং মানবাধিকার কর্মী মনোয়ার বদরুদ্দোজার পরিচালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব ও সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ, মুফতি সদরুদ্দিন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অবঃ) সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক, মেজর (অবঃ) জহির উদ্দিন, মেজর (অবঃ) এবি সিদ্দিক, মেজর (অবঃ) আশফাক, মেজর (অবঃ) শাহ আলম, ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কেএম আবু তাহের, ব্যারিস্টার এম এ সালাম, সিটিজেন মুভমেন্টের মিডিয়া কোর্ডিনেটর মুহাম্মদ নূরে আলম বরষণ, আমার দেশ পত্রিকার সহাকারী সম্পাদক মাহবুব আলী খানশূর প্রমুখ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ড. কামরুল হাসান বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ড ছিল পরিকল্পিত। এটা আওয়ামী লীগের নীলনকশার অংশ হিসেবে দেশ ও জাতিকে নিরাপত্তাহীন করে সংকটে পতিত করার এই বর্বর হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। এ ঘটনার মাধ্যমে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা দাবি করবো, বিএনপি ক্ষমতায় এলে জড়িতদের চিহ্নিত করে যথাযথ বিচার করা হবে।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান বলেন, যারা এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে, সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের শাস্তি দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। পিলখানা হত্যাকান্ডের সাত বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও কেন সেনাবাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি?

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ড বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়,  নিছক কেবল বিডিয়ার বিদ্রোহ নয়- এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ বা জেনোসাইড। সরকার সময় ক্ষেপন করে সেনা অফিসারদের হত্যার সুযোগ করে দেয়। বাংলাদেশকে ব্যর্থ, দুর্বল, অকার্যকর ও গণতন্ত্রহীন করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আর সেই ষড়যন্ত্র শুরু হয় তথাকথিত ১/১১ থেকে আর পূর্ণতা পায় ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন দেশপ্রেমিকের শাহাদাতের রক্ত বৃথা যাবে না। তথাকথিত বিচারের নামে দেড়শ’র বেশি ব্যক্তিকে ফাঁসিতে দন্ডিত করা হয়েছে যা নজিরবিহীন। ৫০ জন বিডিয়ার জওয়ানকে কারা হেফাজতেই মেরে ফেলা হয়েছে। এসব ছলচাতুরি করে ইতিহাসের এই ভয়াবহতম জঘন্য ঘটনাকে আড়াল করা যাবে না।

ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, আমরা প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। বিডিআর হত্যাকান্ডের যে তথ্য প্রমাণ আছে তা দিয়ে আবারো নতুন প্রকৃত খুনীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এই বর্বর হত্যাযজ্ঞের অবশ্যই বিচার আমরা করবো।

কেএম আবু তাহের বলেন, রাজনৈতিক কূটচালের অংশ হিসেবে পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। বিদ্রোহে অংশ নেয়া কতিপয় জওয়ান শুধু বিদ্রোহী নয়, তারা আওয়ামী লীগের এজেন্ট হয়ে এই হত্যায় অংশ নেয়।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অবঃ) এবি সিদ্দিক বলেন, কিছু প্রশ্নের জবাব-ই প্রমাণ করে দেয়, পিলখানা হত্যাকান্ডে কে বা কারা জড়িত। সেদিন প্রধানমন্ত্রী ডিএডি তৌহিদের সঙ্গে কেন দীর্ঘ বৈঠক করলেন? কেন তাকে শেরাটন থেকে খাবার এনে খাওয়ালেন? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে। দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, আক্রান্ত হওয়ার পর বিডিআর ডিজি শাকিল আহমদ ও কর্নেল গুলজার বিভিন্ন জনকে ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন। এমনকি সেনা প্রধান এবং সরকার প্রধানের কাছেও তারা ফোন করেছিলেন। তাদের উদ্ধারের জন্য আকুতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেন সময় ক্ষেপন করে নিহতের তালিকা দীর্ঘ করা হল এর রহস্য একদিন উদঘাটন করতে হবে। দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা আলোচনার নামে কালক্ষেপন করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী দেশ প্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অবঃ) জহির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের সেনা বাহিনী বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে যেমন ভূমিকা রাখে, তেমনি দেশের ভেতরেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকায় ছিল। পিলখানা হত্যার মাধ্যমে এই দুই অবস্থান থেকেই সেনা বাহিনীকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। আমরা এই দিবসকে জাতীয় শোক দিবস পালন করতে পারি নাই অজ্ঞাত কারণে। ক্রিকেট খেলা দিয়ে বিডিআর হত্যা দিবসের দিনে সরকার চাইছে মুছে ফেলতে।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অবঃ) সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের জন্য কেবল বাইরের ষড়যন্ত্রকে দায়ী করলে চলবে না। এই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী জেনেও কেনো তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হলো না - এ প্রশ্ন তোলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অবঃ) শাহ আলম বলেন, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর সেনাবাহিনীর যেসব কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, তার দায়ভার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, একজন সৈনিক কেবল ডালভাতের দাবি নিয়ে তার অফিসারকে হত্যা করতে পারে না। এর পেছনে রয়েছে সুদূরপ্রসারি  চক্রান্ত।

মেজর (অবঃ) আশফাক বলেন,  সেনাবাহিনীর পূর্ণ প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও সেদিন পিলখানায় সেনাহিনী প্রবেশ করতে পারেনি। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নিলে এরকম ভয়াবহ ঘটনা ঘটতো না। কার ইশরায় কিসের ইঙ্গিতে সেনাবাহিনীকে সেদিন পিলখানায় ঢুকতে দেয়া হয়নি- তার জবাব একদিন বেরিয়ে আসবেই।

সভাপতির বক্তব্যে সিটিজেন মুভমেন্টের আহ্বায়ক এমএ মালেক বলেন, এই বর্বর হত্যাকান্ডের আসল খুনিদের বিচার করতে হবে।  শেখ হাসিনার একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার পূর্বপরিকল্পনা হিসেবে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব চিরতরে বিনষ্ট করতে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। বাংলাদেশের মানুষ আজ তা পুনরুদ্ধারের লড়াই করছে। আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই বিচার করা হবে।

মুফতি সদরুদ্দীন বলেন, আবেগ আর বক্তৃতা দিয়ে কাজ হবে না।  জনগণকে জেগে উঠতে হবে। বিএনপির সিনিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশ রক্ষার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সেনা হত্যাকান্ডের ওপর নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল ভিডিও চিত্রে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ বলেন, আমার বাবা-মা সহ দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তি পাব না। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাব না। আমরা সবাই জানি, কে বা কারা এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী এবং কারা জড়িত।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত