আপডেট :

        উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল

        মানবাধিকারের উল্লেখযোগ্য উন্নতি

        প্রচণ্ড এই গরম থেকে মুক্তি পেতে বৃষ্টির জন্য বিভিন্ন জায়গায় নামাজ পড়ে দোয়া

        যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার

        এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো

        মার্কিন বিমান আটকে দিলো ‘যুদ্ধবিরোধী’ কুমির!

        চিতাবাঘের আক্রমণে আহত জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার হুইটাল

        যুক্তরাষ্ট্রে গরুর দুধেও বার্ড ফ্লু শনাক্ত

        পবিত্র হজ পালনের অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

        গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

        পার্লামেন্টে জুতা চুরি, খালি পায়ে ঘরে ফিরলেন পাকিস্তানের এমপিরা

        অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

        কুড়িগ্রামে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু

        চীন সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন

        দেশে একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম আরও কিছুটা কমানো হয়েছে

        ২৮ এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি চলছে

        ইউক্রেনে গোপনে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

        আবহাওয়া বিবেচনায় খোলা হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

        ‘ব্ল্যাক’ ফিরে যাচ্ছে পুরনো লাইনআপে!

        অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি কামনায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসতিসকার নামাজ

লন্ডনে মুসলিম তরুণদের ওপর নজরদারি-বিতর্ক বাড়ছে

লন্ডনে মুসলিম তরুণদের ওপর নজরদারি-বিতর্ক বাড়ছে

৪ মে’র বিকেলে পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় আলতাব আলী পার্কে জড় হয়েছিলেন শ খানেক মানুষ। প্রয়াত আলতাব আলীরই মৃত্যুবার্ষিকী ছিল সেদিন। ৩৮ বছর আগে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ঐ যুবক খুন হয়েছিলেন শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদিদের হামলায়।

বর্ণবাদের সেই সমস্যা অন্তত লন্ডনে এখন নেই বললেই চলে। কিন্তু ব্রিটেনের বাংলাদেশিরা হালে নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন – ইসলামী উগ্রবাদ। এবং তা তৈরি হয়েছে তাদের নিজেদের ভেতরেই।

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে যে সব ব্রিটিশ মুসলিম মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেটের হয়ে যুদ্ধ করতে গেছে, তাদের মধ্যে কয়েক ডজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশীও রয়েছেন। । বিশেষ করে গত বছর এই টাওয়ার হ্যামলেটসেরই একটি স্কুল থেকে তিন কিশোরীর সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না এলাকার বাংলাদেশীরা ।

তবে মুসলিম কিশোর তরুণদের উগ্রবাদ থেকে দুরে রাখতে ব্রিটিশ সরকার প্রিভেন্ট নামে যে কৌশল নিয়েছে তা নিয়ে সারা ব্রিটেনের মতো টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলাদেশীদের মধ্যেও বিতর্ক বাড়ছে। বিশেষ করে, শিক্ষকদের দিয়ে স্কুলে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছেলেমেয়েদের ওপর নজরদারির বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন তাদের অনেকেই।

'বাঙালিরা রক্ষণশীল হয়ে পড়েছে'

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল অর্থাৎ স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত ডেপুটি মেয়র শিরিয়া খাতুন বড় হয়েছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের ব্রিক লেনে। তিনি অকপটে স্বীকার করলেন ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের মধ্যে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ক্রমাগত বাড়ছে এবং সেই সাথে কিশোর-তরুণদের একাংশের মধ্যে উগ্রবাদের উত্থান উদ্বেগ তৈরি করেছে।

"আমাদের ফ্যামিলি অ্যালবামে দেখেছি এমনকি আমার মা উঁচু করে খোপা করেছেন, হাতা-কাটা ব্লাউজ। এখন এটা দেখিনা। বাঙালি সমাজ এখন অনেক রক্ষণশিল হয়ে পড়েছে।"

ঠিক কেন এই উগ্রবাদে দীক্ষিত হচ্ছে অনেক মুসলিম তরুণ-তরুণী - তা নিয়ে অনেকের মত তিনিও বিভ্রান্ত। উদাহরণস্বরূপ টাওয়ার হ্যামলেটসেরই একটি স্কুল থেকে যে তিন মুসলিম ছাত্রী পালিয়ে সিরিয়ায় চলে গেছে, তাদের প্রসঙ্গ টেনে বললেন, তারা সবাই অত্যন্ত ভালো ছাত্রী ছিলো।

অভিভাবকরাই সাহায্য চাইছেন

শিরিয়া খাতুন প্রিভেন্ট নিয়ে সমালোচনা করতে রাজী নন। “আমি মনে করি প্রিভেণ্টের অন্য নাম সুরক্ষা। বাচ্চারা দিনে সাত-আট ঘণ্টা স্কুলে তাকে, বাবা-মায়ের চেয়ে শিক্ষকরাই বেশি নজর রাখতে পারে।"

তিনি জানালেন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল থেকে আলাদাভাবে উগ্রবাদ থেকে শিশুদের দুরে থাকতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একজন কর্মকর্তা স্কুলে গিয়ে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে ওয়ার্কশপ করে উগ্রবাদের বিপদ নিয়ে কথা বলেন। একটি ট্রেনিং মেটিরিয়াল তৈরি হয়েছে যাতে অভিভাবকরা উগ্রবাদের লক্ষণগুলো বুঝতে পারেন।

শিরিয়া খাতুন বার বার বললেন, স্কুলে এই ধরণের ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছেনা, বরঞ্চ অভিভাবকরা সাহায্য চাইছেন।

“আমি নিজে ঘরে ঘরে যাই, মানুষজন আমার কাছে আসেন, তারা বার বার বলেন, তারা সাহায্য চান। কোন বাবা মা চায় তার চেয়ে বা মেয়ে সিরিয়ায় চলে যাক?।“

তবে প্রিভেন্টকে অনেকেই দেখেছেন একটি সম্প্রদায়ের ওপর গোয়েন্দাগিরির মত। যে কোনো মুসলিম কিশোর-তরুণই যেন সম্ভাব্য উগ্রবাদী।


শিক্ষক মহলে মতবিরোধ

স্পর্শকাতরতার কথা ভেবেই হয়ত খুবই রাখ-ঢাক করা হচ্ছে এ কৌশল নিয়ে । স্কুলগুলো এ নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নয়। অনেক অনুরোধের পর কথা বলতে রাজী হলেন টাওয়ার হ্যামলেটসের মালবেরি গার্লস স্কুলের অ্যাসোসিয়েট হেড টিচার জিল টাফি । তিনি কোনোভাবেই স্বীকার করলেন না, যে ধরণের নজরদারি নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটা অন্তত তার স্কুলে হচ্ছে।

“এটা সত্যি যে এ স্কুলের সব শিক্ষক সরকারের প্রিভেন্ট কৌশলের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কিন্তু আমরা যে কৌশল নিয়েছি তা হলো মেয়েদের এমন এমনভাবে শিক্ষা দেওয়া যাতে তারা যখন স্কুল ছেড়ে যাবে, তারা যেন পূর্ণ আস্থার সাথে ব্রিটিশ সমাজ ও জীবনে অংশ নিতে পারে, খোলা মন নিয়ে বিচার বিবেচনা করেতে করে। আমরা প্রিভেন্ট’কে এভাবেই নিয়েছি।“

“কিন্তু একইসাথে আমরা চোখ-কান খোলা রাখি । শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বিভেদ, উদ্বেগ যদি দেখা দেয়, তাহলে গোড়াতেই তার সমাধান করতে হবে। বিভেদ, সন্দেহ, বঞ্চিত হওয়ার মনোভাব থেকেই উগ্রতা-অসহিষ্ণুতার জন্ম হয়।“

তবে জিল টাফি প্রিভেন্ট কৌশলের কিছু কিছু বিষয় নিয়ে সন্দিহান। তার আশঙ্কা কোনো কিশোর তরুণের ভেতর উগ্র মনোভাবের লক্ষণ দেখা দিলেই তাগে আগেভাগেই অপরাধী হিসাবে বিবেচনা করাটা হিতে-বিপরীত হতে পারে।

মালবেরি স্কুলের শিক্ষক প্রিভেন্ট নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন নন, কিন্তু ব্রিটেনে স্কুল শিক্ষকদের প্রধান যে সমিতি -- ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব টিচার্স – তারা তাদের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনে শিক্ষকদের এ কাজ থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি দেওয়ার দাবি করেছে। তারা বলছে, এটা ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বিষাক্ত করে তুলতে পারে।

উগ্রবাদ ঠেকাতে ফুটবল

শুধু স্কুল নয়, মুসলিম কিশোর তরুণদের উগ্রবাদ থেকে দুরে রাখতে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থাকেও উৎসাহিত করছে ব্রিটিশ হোম অফিস অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দপ্তর।

লন্ডন টাইগার্স এমন একটি চ্যারিটি। মেসবাহ আহমেদ প্রায় তিরিশ বছর এটি শুরু করেছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটসে উদ্দেশ্য ছিল এলাকার পিছিয়ে পড়া পরিবারের শিশু কিশোরদের জন্য খেলাধুলোর ব্যবস্থা করা যাতে তারা কোনো অপরাধে না জাড়িয়ে পড়ে। অত্যন্ত সফল হয়েছে লন্ডন টাইগার্স। সারা লন্ডন জুড়ে কাজ করছে তারা। এখন তাদের নিজস্ব স্টেডিয়াম পর্যন্ত রয়েছে।

মেসবাহ আহমেদ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, সঠিক সুযোগ সৃষ্টি করে মানুষকে সুপথে আনা যায়, রাখা যায়। উগ্রবাদের দীক্ষা থেকেও বিরত রাখা যায়।

“এ শহরে অনেক কিশোর তরুণ আছে যারা পরিবার থেকে, স্কুল থেকে কোনো সাহায্য পায়না, এদের অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ার হুমকিতে থাকে, সেটা মাদক, গ্যাং বা উগ্রবাদ যে কোনো কিছুই হতে পারে ... এসব অপরাধে ঢুকে পড়ার আগেই তাদেরকে বিকল্প রাস্তা দিতে হবে, একবার ঢুকে গেলে ফিরিয়ে আনা কঠিন।“

মসজিদগুলো কি করছে?

উগ্রবাদের সাথে টাওয়ার হ্যামলেটসের নাম জড়িয়ে পড়া, তাকে যেভাবে সামলানোর চেষ্টা হচ্ছে, তা নিয়ে এলাকার ধর্মীয় নেতারা কি ভাবছেন? ব্রিক লেন মসজিদের মসজিদ কমিটির প্রেসিডেন্ট সাজ্জাদ মিয়া অকপটে স্বীকার করলেন, উগ্রবাদ বাংলাদেশী মুসলিম সমাজে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

“আমরা সবাই চিন্তিত, আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্বিগ্ন।“

সাজ্জাদ মিয়া জানালেন, কোনো ধরণের নজরদারির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরামর্শ তারা পাননি। তবে নিজে থেকেই মাঝে মধ্যে শুক্রবারের জুমার নামাজের খুতবায় ছেলেমেয়েদের ওপর নজর রাখার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

মসজিদের ইমাম নজরুল ইসলাম বলেন, ইসলামের সাথে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই—এই বার্তা যতটা পারেন তিনি দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে শুধু মুসলিমদের ওপর নজরদারিকে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। “সরকারের পক্ষ থেকে কোনো একটি সম্প্রদায়কে আলাদাভাবে দেখা হয়, এটা মোটেই ঠিক নয়।“

“এই দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা কোনো মুসলমান চাইতে পারেনা। এদেশ ডুবলে, মুসলমানও ডুববে ... প্রতিটি ধর্মেই কিছু অপরাধী থাকে.. পাঁচ লাখ মুসলিমের মধ্যে একশজন যদি সিরিয়া যায়, তার দায় সব মুসলমান কেন নেবে?

সরকারের নেওয়া সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখছে নিরপেক্ষ যে সংস্থা, তারা সম্প্রতি প্রিভেন্ট কৌশল পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলছে, প্রিভেন্ট ব্রিটিশ মুসলিমদের মধ্যে ভীতি এবং অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে। তবে সরকার যে সেই পরামর্শ কানে নিচ্ছে, তেমন কিছু শোনা যায়নি।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত