আপডেট :

        নগরীর অচল ১১০টি সিসি ক্যামেরা হল সচল

        একনেকে ১১ প্রকল্পের অনুমোদন

        স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে সিকৃবিতে আলোচনা সভা

        বিএনপি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করে না: ওবায়দুল কাদের

        নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের মৃত্যু

        বিচারকবিহীন আদালত

        বাংলাদেশের গণতন্ত্র এগিয়ে নেওয়াই যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার

        সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেনের মৃত্যু

        জাতীয় ছাত্র সমাজের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

        দ্বিতীয় টেস্টে নেই হাথুরু

        ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলা ২০২৪’

        গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

        আত্মনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করতে হবে: সিসিক মেয়র

        রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

        মস্কো কনসার্ট হামলায় পশ্চিমা বিশ্ব ও ইউক্রেনের ইন্ধনের অভিযোগ রাশিয়ার

        র‍্যাবের পৃথক অভিযান, ১২ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

        পদ্মা সেতুতে ভুটানের রাজা

        মার্কিন কূটনীতিককে তলব

        স্বাধীনতা দিবস বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের ফসল: প্রতিমন্ত্রী

        সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংবিধান শক্ত অবস্থানে: সংসদ স্পিকার

ঐতিহাসিক রোজ প্যারেড: কয়েক মিলিয়ন দর্শকের সামনে বাংলাদেশকে তুলে ধরবেন লস এঞ্জেলেস প্রবাসী তরুণী

ঐতিহাসিক রোজ প্যারেড: কয়েক মিলিয়ন দর্শকের সামনে বাংলাদেশকে তুলে ধরবেন লস এঞ্জেলেস প্রবাসী তরুণী

যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক রোজ প্যারেডের ১৩১ তম আসরে রয়্যাল কোর্টের এম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশী তরুণী রুকান সাইফ। যাকে রোজ প্রিন্সেসও বলা হয়। কয়েক মিলিয়ন দর্শকের সামনে লাল-সবুজের পতাকা উড়াবেন লস এঞ্জেলেস প্রবাসী এই তরুণী।


আগামী ১লা জানুয়ারি বুধবার অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহাসিক রোজ প্যারেড। উক্ত প্যারেডের জন্য এম্বাসেডর হিসেবে রয়্যাল কোর্টের সাত সদস্যের নাম ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি পাস্যাডেনা প্লে-হাউসে ২০২০ সালের রোজ প্যারেডের এম্বাসেডর বা রোজ প্রিন্সেসদের মধ্যে এতে রয়েছেন বাংলাদেশি রুকান। এই সাতজন টুর্নামেন্ট রোজেস, প্যাসাডেনা কমিউনিটি এবং বৃহত্তর লস এঞ্জেলেস এলাকার এম্বাসেডর বা রোজ প্রিন্সেস হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং সেইসাথে প্রত্যেকে পাবেন ৭,৫০০ ডলারের শিক্ষাবৃত্তি।

প্যাসাডেনা’র ৪৫টি এলাকা থেকে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা সাক্ষাত্কার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল। এই তালিকায় ছিল রুকানের স্কুলও। এতে আবেদন করে ৭০০ শিক্ষার্থী। সেখান থেকে বাছাই করে আনা হয় ২৫ জনকে। এই ২৫ থেকে চূড়ান্ত তালিকায় আসেন ৭ জন।

৭ রোজ প্রিন্সেসের সাথে রুকান সাইফ



‘রোজ কুইন’ টুর্নামেন্ট ও ‘কোর্ট কমিটি অংশগ্রহণকারীদের পাবলিক স্পিকিং দক্ষতা, একাডেমিক কৃতিত্ব, ইয়ুথ লিডারশীপ, কমিউনিটি ও বিদ্যালয়ের সাথে জড়িত  সহশিক্ষা কার্যক্রমসহ বেশ কয়েকটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ‘রয়্যাল কোর্ট’ বাছাই করেন।


নিজেকে এই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে দেখে খুবই আনন্দিত রুকান সাইফ। রোজ প্যারেডের মতো এমন একটি বিশাল প্লাটফর্মে জায়গা করার পর অনুভুতি ব্যক্ত করেন রুকান সাইফ। এলএ বাংলা টাইমসের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, প্রথম বাংলাদেশী আমেরিকান প্রিন্সেস হিসেবে এটি আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশি তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি গর্বিত। তিনি প্রবাসী অন্যান্য তরুণদেরও মূল ধারার সাথে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।


নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে রুকান সাইফ বলেন, আপনাকে বিশ্বাস রাখতে হবে আপনি পারবেন। আপনি দেখতে কেমন সেটা মূখ্য নয়। আপনার যদি ইচ্ছা থাকে তবে আপনি করতে পারবেন। ‌


রুকান সাইফ আর্কিডিয়া হাইস্কুলের একজন শিক্ষার্থী। রুকান নিজ স্কুলের ‘মাই ফ্রেন্ড অ্যান্ড আই’ ক্লাবের বর্তমান প্রেসিডেন্ট। একইসাথে তিনি ‘ন্যাশনাল অনার সোসাইটির’ ভাইস-প্রেসিডেন্ট, জাগো ফাউন্ডেশনের একজন অনলাইন শিক্ষক এবং স্পিচ অ্যান্ড ডিবেট টিমের ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আগামী বছর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবেন। মেজর ইন হিস্টরি অথবা আমেরিকান স্টাডিতে উচ্চ শিক্ষা নিতে আগ্রহী তিনি।  রুকান জর্জিটাউন বিশ্ববিদ্যালয় বা ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস এঞ্জেলেসে পড়তে আগ্রহী।


প্যারেডে অংশ নেওয়ার জন্য সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানিয়েছেন রুকান সাইফ।


রুকান সাইফের বাস ক্যালিফোর্নয়ার টেম্পল সিটিতে। রুকানের বাবা সাইফ হারুন পেশায় একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক ছিলেন। পিএইচডি সম্পন্ন করে ১৫ বছর ধরে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করছেন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় একজন নিবন্ধিত পেশাদার প্রকৌশলী। বর্তমানে একটি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থায় অপারেশন ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত।


মা রুমানা রশিদ মলিকুলার বায়োফিজিক্সে পিএইচডি সম্পন্ন করে সিটি অফ হোপে একটি বায়ো ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থায় লিড সায়েন্টিস্ট হিসাবে কর্মরত আছেন।
 
রোজ প্যারেডে অ্যাম্বেসেডার বা প্রিন্সেস হিসেবে সুযোগ পাওয়া রুকান সাইফের মা রুমানা রশিদ বলেন, আমার একমাত্র মেয়ে রুকান সাইফ প্রথম বাংলাদেশী আমেরিকান মুসলিম প্রিন্সেস রোজ প্যারেডে। এখনো মনে হচ্ছে স্বপ্নের মতো। সে বাংলাদেশের হিসেবে আমেরিকাতে এত বড় একটা সুযোগ পেয়েছে। এত আমাদের পুরা বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য গৌরবের ব্যাপার। আমরা খুব আনন্দিত, গর্বিত।


রুকানের বাবা সাইফ হারুন বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম যে কোন বাচ্চা যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারে যদি তারা চায়। রুকানের এই অর্জন তার উদাহরন। এজন্য তারা নিজেদের প্রতি খেয়াল করতে হবে। আমরা আমাদের মেয়েকে নিয়ে গর্বিত। ও অনেক দূর এগিয়ে যাক এই কামনা করি।

৭ রোজ প্রিন্সেসের সাথে রুকান সাইফ


বাংলাদেশের বাচ্চাদের জন্য রুকানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি গত গৃষ্মকালীন ছুটিতে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। আমার অনেক আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। জাগো ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের সাথে কিছু কাজ করেছি। জাগো ফা্ন্ডউশন শিক্ষা নিয়ে কাজ করে। আমি কিছু ক্লাস করিয়েছি বাচ্চাদের। তাদের সাথে আমি একটি চমৎকার সময় কটিয়েছি। আর আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য পাঠ্যসূচির আরও উন্নয়ন প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।


রুকন প্রিয়জনের সাথে সময় কাটাতে ও মারিম্বা বাজাতে পছন্দ করেন। তাছাড়া তিনি কবিতা লিখতে, বই পড়তে এবং হাইকিং উপভোগ করেন।


২০২০ সালের রয়্যাল কোর্টের গ্র্যান্ড ফিনাল অনুষ্ঠানটি হোন্ডা’র উপস্থাপনায় ১৩১তম রোজ  প্যারেডে অংশগ্রহণ করবে। একইসাথে, ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি নর্থ-ওয়েস্টার্ন মিউচুয়াল কর্তৃক উপস্থাপিত ১০৬তম ‘রোজ বল’ গেমসে অংশ নেবে।  ‘সিটিজেন বিজনেস ব্যাংক’র  স্পনসরে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানের সীমিত সংখ্যক টিকিট পাওয়া যাবে ‘শার্প সিটিং কোম্পানির’ কাছে। যা যে কেউ চাইলে ক্রয় করতে পারবে।

‘রোজ প্যারেড’ টুর্নামেন্টটির প্রচলন শুরু হয়েছিল ১৮৯০ সালে। পাসাডেনার ভ্যালি হান্ট ক্লাবের স্পনসরে প্রতিবছর অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়ে থাকে। মৃদু শীতের আবহাওয়াবেষ্টিত ক্যালিফোর্নিয়াতে সারা বছর ধরে যে ফুল ফোটে তার প্রদর্শন ও এই বিষয়ে নতুন ক্যালিফোর্নিয়ানদের পরিচিত করানোর জন্যই আয়োজকদের এমন আয়োজন।   


উত্সবটিতে অন্তর্ভুক্ত হয় মোটর চালিত ফ্লোট প্যারেড পর্যবেক্ষকদের পাশাপাশি অশ্বারোহী। একইসাথে স্থানীয় স্কুল এবং কমিউনিটি ভিত্তিক মার্চিং আয়োজনটিকে সম্প্রসারিত করে। এই উপলক্ষে টাউন পার্কে বিভিন্ন ইভেন্টের খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং পুরো শহরটি হয়ে উঠে উৎসব মুখর।


মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে, উত্সব এবং প্যারেড অনুষ্ঠান ইতিমধ্যে জাতীয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রিকায় প্যারেড সম্পর্কিত ছবি এবং নিবন্ধ প্রকাশিত হতে থাকে। ইভেন্টটির জনপ্রিয়তার ফলস্বরূপ ১৮৯৫ সালে রোজ অ্যাসোসিয়েশনের একটি নতুন টুর্নামেন্ট গঠিত হয়, যে সংগঠনটি আজও প্যারেড পরিচালনা করে।

সাক্ষাতকার গ্রহণের পর বাবা-মা সহ রুকান সাইফের সাথে রোজ টুর্নামেন্ট হাউজে এলএ বাংলা টাইমসের সিইও আব্দুস সামাদ


১৯০২ সালে অনুষ্ঠানের মূল আয়োজনের সাথে একটি ফুটবল খেলাও যুক্ত হয়েছিল।  প্রথম বৎসরের এই ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন স্ট্যানফোর্ড এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়। স্ট্যানফোর্ড প্রথম খেলায় মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে হেরে যায়। এরপর ফলশ্রুতিতে আয়োজনে ফুটবলের অংশটি বাতিল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৯১৬ সালে তা পুনরায় চালু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ বৎসর পর এই ফুটবল ইভেন্টের জন্য একটি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করেন আয়োজকরা, যা দ্রুত  ‘দ্য রোজ বল’ নামে পরিচিত হয়ে উঠে। ১৯৪৭ সাল থেকে প্রতি বছর এই ফুটবল আয়োজন আজ ঐতিহাসিক হয়ে উঠেছে।


বর্তমানে রোজ প্যারেড এবং এই সংশ্লিষ্ট আয়োজিত সমস্ত অনুষ্ঠান প্যাসাডেনা অঞ্চলের হাজার হাজার লোকজনকে আকর্ষণ করে। একইসাথে কয়েক মিলিয়ন মানুষ এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য উচ্চ প্রযুক্তির অ্যানিমেশন সহ অত্যাধুনিক ফ্লোট উপভোগ করতে টেলিভিশনের সামনে বসে।


প্যারেড বাস্তবায়নের জন্য এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক ৮০ হাজার ঘণ্টা কাজ করেন। প্যারেডের সবগুলো ফ্লট সাজানো হয় কাচা গোলাপ ফুল দিয়ে।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত

এ বিভাগের আরো খবর