আপডেট :

        চিতাবাঘের আক্রমণে আহত জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার হুইটাল

        যুক্তরাষ্ট্রে গরুর দুধেও বার্ড ফ্লু শনাক্ত

        পবিত্র হজ পালনের অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

        গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

        পার্লামেন্টে জুতা চুরি, খালি পায়ে ঘরে ফিরলেন পাকিস্তানের এমপিরা

        অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

        কুড়িগ্রামে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু

        চীন সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন

        দেশে একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম আরও কিছুটা কমানো হয়েছে

        ২৮ এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি চলছে

        ইউক্রেনে গোপনে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

        আবহাওয়া বিবেচনায় খোলা হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

        ‘ব্ল্যাক’ ফিরে যাচ্ছে পুরনো লাইনআপে!

        অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি কামনায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসতিসকার নামাজ

        রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন

        উপজেলা ভোটে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে

        বাস দুর্ঘটনায় বাবা নিহত, মা-ছেলে মুমূর্ষু

        ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট বাড়বে শারীরিক অস্বস্তি

        মোবাইল ইন্টারনেট গতির সূচকে আরও ৬ ধাপ পিছিয়ে ১১২তম অবস্থানে

        মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বর্ডার গার্ড পুলিশের

করোনাতে কেন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লস এঞ্জেলেস

করোনাতে কেন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লস এঞ্জেলেস

ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্সে লস এঞ্জেলেসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ


প্রাণঘাতী কভিড-১৯ (করোনাভাইরাসে) এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি লোক মারা গেছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। দেশটিতে ৮ হাজারের বেশিও লোক মারা যায় সর্বনাশা করোনায়। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইউরোপেরই আরেক দেশ স্পেন। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬৫। 

এখন প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাস ইউরোপ ছেড়ে ধেয়ে আসছে উত্তর আমেরিকা তে।  যুক্তরাষ্ট্রই যে এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা অনুধাবন করার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। দৈনিক নতুন করে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা ও মৃতের হার দেখলে যে কেউ এই সমীকরণ মিলাতে পারবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের যে তিনটি স্টেট প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া অন্যতম। এবার আসি মূল শিরোনামে। ভাইরাসটিতে লস এঞ্জেলেস কাউন্টি কি কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নিয়ে এলএবাংলা টাইমসের আজকের এই আয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণগুলো এক এক করে তুলে ধরা হলঃ 

করোনার সংক্রমণ
ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ৬টি কাউন্টির স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য কি বলছে, চলেন এক নজর দেখে নেই। সান ডিয়েগো কাউন্টিতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হন মোট ২৪২ জন। আর মারা যায় সর্বমোট ২ জন। ভেনচুরা কাউন্টিতে আক্রান্ত হন ৫০ জন। তবে সেখানে মারা যায় ১ জন। সান বার্নার্ডিনো কাউন্টিতে আক্রান্ত ৫৫ জন, মৃতের সংখ্যা ৩ জন। রিভারসাইড কাউন্টিতে আক্রান্ত ১০৭, মৃত ৭ জন। অরেঞ্জ কাউন্টিতে আক্রান্ত হন মোট ২৫৬ জন, আর মৃতের সংখ্যা ১ জন। 

কি ভাবছেন? এই সংখ্যাটা তেমন বেশি কিছু নয়। তাহলে এবার শুনুন লস এঞ্জেলেস কাউন্টির তথ্য। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটিতে এখানে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২১৬ জন। আর মারা গেছে ২১ জন। এর মধ্যে শুধু গতকাল বৃহস্পতিবারে আক্রান্ত হয় ৪২১ জন। আর একই দিনে মারা যায় ৯ জন। কেন ঝুঁকিপূর্ণ বললাম জানেন? কারণ এটা কোন কোন গাণিতিক অঙ্ক বা সংখ্যা নয়। এটা আপনার, আমার মত রক্ত মাংসের তৈরি মানুষের মৃতের সংখ্যা। প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা। 

আপনার, আমার মত তারাও ভাবেননি যে, সংক্রামক এই ভাইরাসে তারা পরিবার, পরিজন, প্রিয়জন ছেড়ে চিরদিনের মত শেষ যাত্রা করবে। লস এঞ্জেলেস কাউন্টিতে এইভাবে জ্যামিতিকহারে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে, খুব বেশিদিন লাগবে না এই নগর, সভ্যতা, যান্ত্রিক ব্যস্ততা জনশূন্য হতে। 

প্রয়োজনীয় চিকিৎসা 
আপনার জন্য আগেই বলে রাখি, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটির এখনো পর্যন্ত কোন এন্টিবায়োটিক নেই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে টীকা আবিষ্কারের সফলতার খবর প্রকাশ হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বলছে, আগামী বৎসর অর্থাৎ ২০২১ সালের জুনের আগে কোন প্রকার প্রতিষেধক বা এন্টিবায়োটিক হাতে পাবার সম্ভাবনা দেখছে না তারা। 
এবার আসি লস এঞ্জেলেস কাউন্টির চিকিৎসা প্রস্তুতি নিয়ে। স্টেটের অর্থায়নে নগর প্রশাসন সম্প্রতি ভেরিটি হেলথ সিস্টেমের একটি পরিত্যক্ত হাসপাতাল লিজ নিয়েছে। কিন্তু এখানে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলবে নাকি তাদের কোয়ারেন্টাইন কাজে ব্যবহৃত হবে এই বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্তে আস্তে পারেনি কাউন্টি। রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে পেন্টাগন ‘ইউএসএনএস মার্সি’ নৌ হাসপাতাল লস এঞ্জেলেসে পাঠিয়ে দিয়েছে। এটা একটি আশার খবর। 

কিন্তু এর বাইরে আতঙ্কিত হওয়ার মত খবরও আছে। করোনাভাইরাসের বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। প্রায় প্রতিটি হাসপাতাল অতিরিক্ত চিকিৎসক, নার্স, বিছানা ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি চেয়ে চাহিদা পত্র পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে। তাছাড়া, দুইদিন আগে লস এঞ্জেলেস মেয়র স্থানীয় গার্মেন্টসে ৫০ লক্ষ সাধারণ মাস্ক তৈরির আদেশ দেন। 

এখনো পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সক্ষমতার বাইরে চলে যায়নি। কিন্তু চিকিৎসকরা জানাচ্ছে, সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী সপ্তাহে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। 

গৃহহীন মানুষ 
লস এঞ্জেলেস কাউন্টিতে হোমলেস পিপল বা গৃহহীন মানুষের সংখ্যা কত? তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে এই সংখ্যা ৪০ থেকে ৬০ হাজার বলে উল্লেখ করা হয় বিভিন্ন জায়গায়। এতো বিশাল সংখ্যক গৃহহীন মানুষ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে কতটুকু স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করবে, তা গবেষণা ছাড়া বের করা সম্ভব নয়। তবে এই সংখ্যাটি যে ভাইরাসের সংক্রমণের হারকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। 

তবে গতকাল লস এঞ্জেলেস মেয়র এরিক গারসেট্টি  এক  প্রশংসনীয় কাজ করেন। তিনি নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে গৃহহীনদের জন্য ৮টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেন। সেখানে যাওয়া সকলকেই করোনাতে শনাক্ত কিনা এই পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু যারা এখনো এ সমস্ত আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে রয়েছে?   

জেলবন্দীর মুক্তি 
সম্প্রতি প্রথমবারের মত লস এঞ্জেলেস জেলখানায় অন্তরীণ থাকা এক বন্দীর শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। জেলখানায় কর্মরত দুই কর্মকর্তাও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত বলে খবর প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। এসবের মধ্যেই লস এঞ্জেলেস শেরিফ প্রধান এলেক্স ভিলানুয়েভা কাউন্টির জেলে বন্দী থাকা ১ হাজার ৭০০ কয়েদীকে মুক্তি দিয়ে দেন। ভয়াবহ সংক্রমণের এই সময়ে তিনি ‘সেকেন্ড এমেন্ডমেন্ট’ যুক্তি দিয়ে নির্বাহী আদেশ ভঙ্গ করেন। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার অনুমোদন দিয়ে দেন তিনি।  অবশ্য ভদ্রলোকের মাথা যে মোটা তা কর্তৃপক্ষ কিছুটা বুঝতে পেরেছে। আর তাই ‘ইমারজেন্সি অপারেশন্স’ এর প্রধান দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন লস এঞ্জেলেস কাউন্টি বোর্ড অব সুপারভাইজার্স। 
এর বাইরে আরও অসংখ্য কারণ আছে এলএ কাউন্টিতে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার। প্রিয় পাঠক, আপনাদের আতঙ্কিত করতে নয়। আপনাদের সচেতন করতে আমাদের প্রচেষ্টা। আসুন আপনি, আমি, আমরা সবাই সচেতন হই। মেনে চলি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এলএ স্বাস্থ্যবিভাগের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলি। আর তবেই নিরাপদ থাকবেন আপনি, আমি, আমরা সকলে। নিরাপদ থাকবে আমাদের প্রিয় লস এঞ্জেলেস। নিরাপদে থাকবে পুরো বিশ্ববাসী। 

তাই আসুন, আমরা লস এঞ্জেলেস কাউন্টি ও ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসকারী সকল বাংলাদেশি বাঙালি নগর প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগের দেওয়া নির্দেশ মেনে নিরাপদে ঘরে থাকি। একসাথে মিলে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করি। অনুরোধে লস এঞ্জেলেস বাংলা টাইমস। 
          

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত

এ বিভাগের আরো খবর