আপডেট :

        স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে সিকৃবিতে আলোচনা সভা

        বিএনপি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করে না: ওবায়দুল কাদের

        বিএনপি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করে না: ওবায়দুল কাদের

        বিচারকবিহীন আদালত

        বাংলাদেশের গণতন্ত্র এগিয়ে নেওয়াই যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার

        সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেনের মৃত্যু

        জাতীয় ছাত্র সমাজের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

        দ্বিতীয় টেস্টে নেই হাথুরু

        ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলা ২০২৪’

        গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

        আত্মনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করতে হবে: সিসিক মেয়র

        রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

        মস্কো কনসার্ট হামলায় পশ্চিমা বিশ্ব ও ইউক্রেনের ইন্ধনের অভিযোগ রাশিয়ার

        র‍্যাবের পৃথক অভিযান, ১২ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

        পদ্মা সেতুতে ভুটানের রাজা

        মার্কিন কূটনীতিককে তলব

        স্বাধীনতা দিবস বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের ফসল: প্রতিমন্ত্রী

        সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংবিধান শক্ত অবস্থানে: সংসদ স্পিকার

        বাল্টিমোর সেতু দুর্ঘটনা ভয়াবহ: বাইডেন

        মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুজিব কোট’ উপহার দিলো প্রশাসন

লস এঞ্জেলেসে বাফলার ​স্মরণকালের সেরা প্যারেড

লস এঞ্জেলেসে বাফলার ​স্মরণকালের সেরা প্যারেড

বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে এই আমেরিকার মেগাসিটি লস এঞ্জেলেস গত দুইদিন হয়ে উঠেছিল যেন বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। গত ২৫ ও ২৬ মার্চ লস এঞ্জেলেসের প্রবাসীরা মেতেছিল উৎসবে; উৎসাহ আর উদ্দীপনা ছিলো সর্বত্র। বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের অংশগ্রহণে অত্যন্ত জমকালো, রঙিন, বর্ণাঢ্য ও বিশাল '১১তম বাংলাদেশ ডে প্যারেড ও ফেস্টিভ্যাল - ২০১৭' অনুষ্ঠিত হয়ে গেল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে গত এক দশক যাবৎ প্রবাসীদের নিয়ে বর্ণাঢ্য প্যারেড ও ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে আসছে বাংলাদেশ ইউনিটি ফেডারেশন অফ লস এঞ্জেলেস (বাফলা)। এবছরও দুই দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১১তম বাংলাদেশ ডে প্যারেড ও ফেস্টিভ্যাল - ২০১৭ সফলভাবে শেষ হলো। বর্ণালী ও বর্ণাঢ্য এ আয়োজনে সমগ্র লস এঞ্জেলেসের বাংলাদেশী কম্যুনিটি যেন রূপ নিয়েছিল প্রবাসীদের মিলনমেলায়।

 

২৫ মার্চ ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী দিনে বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত ও বাফলা'র থিম সং দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। তিনটি সঙ্গীত বাজানোর সাথে সাথে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও বাফলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন লস এঞ্জেলেস নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল প্রিয়তোষ সাহা। যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা উত্তোলন করেন বাফলা'র এডভাইজারি কাউন্সিল কর্ণেল (অবঃ) ওমর হুদা এবং বাফলার পতাকা উত্তোলন করেন প্রেসিডেন্ট ডাঃ আবুল হাশেম। এসময় উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত ও পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। এরপর অতিথিরা সকলে মিলে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ১১তম বাংলাদেশ ডে প্যারেড ও ফেস্টিভ্যাল ২০১৭-র উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।



১ম দিনে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও শিশু-কিশোরদের চিত্রাংকন ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হয়, প্রকাশ করা হয় বাফলা ম্যাগাজিন 'অপরাজেয়'; এদিন ১৯৭১-র ২৫ মার্চ কালো রাতে হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ও নিহতে স্মরণে প্রজ্জলন করা হয় একশত মোমবাতি। ১ম দিনেই প্রবাসীদের ভীড় ছিল মেলার বিভিন্ন স্টলগুলোতে। জমে উঠেছিল আড্ডা ও গান-গল্প। বিভিন্ন দেশি মুখরোচক খাবার, গহনা, হস্তশিল্পসহ রকমারী পণ্যের স্টল ছিল মেলায়। লস এঞ্জেলেসের ১৫২ নর্থ ভারমন্ট এভিন্যুতে, ভার্জিল মিডল স্কুলে অনুষ্ঠিত হলো বাফলা'র দুই দিনব্যাপী এই জমকালো আয়োজন। এদিন অত্যন্ত চমৎকারভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন রৌশনী আলম এবং তাকে সহযোগিতায় ছিলেন রোমানা শিকদার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিল্পীরা নাচ-গান-কবিতায় মাতিয়ে তুলেছিলেন দর্শক ও অতিথিদের। সাংস্কৃতিক পর্বের মূল দায়িত্বে ছিলেন বাফলা'র কালচারাল সেক্রেটারী শাহনাজ বুলবুল। ১ম দিনের বিশেষ অতিথি শিল্পী ছিলেন জনপ্রিয় মিউজিক স্টার কৃষ্ণা তিথি। তার সুললিত কন্ঠে আর গানের যাদুতে দর্শক-শ্রোতারা যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন সুরের জগতে।

২৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ১১তম বাংলাদেশ ডে প্যারেড। দুপুর ৩টায় নরম্যান্ডি এবং থার্ড স্ট্রীট থেকে প্যারেড শুরু হয়ে 'লিটিল বাংলাদেশ' ঘুরে ভার্জিল মিডিল স্কুলে গিয়ে শেষ হয়। প্যারেডে লস এঞ্জেলেসের রাজপথে নেমেছিল মানুষের ঢল। বাংলাদেশ ও আমেরিকার পতাকা, লাল-সবুজ পোষাক পরে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীর উপস্থিতিতে উক্ত প্যারেডে অনেক বিদেশী নাগরিকদেরও অংশ নিতে দেখা যায়। আমেরিকা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন থিম নিয়ে চমৎকার করে সাজানো একাধিক ফ্লোটস, বর্ণিল পদযাত্রা,  ঢোল, ব্যান্ড দল ও ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে প্যারেডটি হয়ে উঠেছিল সত্যিই অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বিশালাকৃতির স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, শহীদ মিনার, স্মৃতি সৌধ, পালতোলা নৌকা, বাংলাদেশের রিকশা, গ্রামীণ বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমারোহ ইত্যাদি ছিল এবারের প্যারেডের বিশেষ আকর্ষন। প্রধান সড়কে বেশ কিছু বড় সাইজের ডিজিটাল ব্যানার লাগানো ছিল- যা কিনা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এসব ব্যানারে দেশীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য শোভা পেয়েছে। সবকিছু মিলে এবারের প্যারেড সত্যিই হয়ে উঠেছিল স্মরণকালের সেরা প্যারেড।

 

১১তম বাংলাদেশ ডে প্যারেড মার্শাল ছিলেন লস এঞ্জেলেস সিটির পুণঃনির্বাচিত জনপ্রিয় মেয়র এরিক গারসেটি। এছাড়াও লস এঞ্জেলেস কাউন্টির সুপারভাইসার হিলডা সলিস, কাউন্সিল মেম্বার অফ লস এঞ্জেলেস ডেভিড রিউ, কাউন্সিল মেম্বার অফ লস এঞ্জেলেস পল কৃকোরিয়ান, বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল জনাব প্রিয়তোষ সাহা, কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান ডঃ কালী প্রদীপ চৌধুরী, ঢাকা হোমসের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন এবং অন্যান্য সরকারি ঊর্ধতন করমকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা, বাফলা'র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও বাংলাদেশী কম্যুনিটির নেতাদের সাথে প্যারেডে উপস্হিত ছিলেন। আরও উপস্হিত ছিলেন বাফলা'র সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ক্যাবিনেট সদস্যরা।

প্যারেডে সবার সামনে ছিল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বড় সাইজের দুটি পতাকা।  ৩টি ঘোড়া বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাফলা'র পতকা বহন করে, এছাড়াও প্যারেডে ছিল একটি সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি, বাংলাদেশ ও আমেরিকার পতাকা সম্বলিত ১২টি হার্লে ডেভিডসন মোটরবাইক, লস এঞ্জেলেসে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ৩টি ও শেরিফ ডিপার্টেমেন্টের ১টি কনভার্টেবল কার। বাফলা'র সকল সদস্য সংগঠনের সবাই পায়ে হেঁটে প্যারেডে অংশ গ্রহণ করেন। বিনোদনের জন্য প্যারেডের সাথে ছিলেন ২জন ঢোলবাদক, ভার্জিল মিডিল স্কুলের ব্যন্ড দল ও একটি ইয়ুথ সাংস্কৃতিক দল, তারা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ও কসরত দেখিয়ে সবাইকে আনন্দ দেয়। প্যারেডে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশীরা সবাই জাতীয় পতাকা, বিভিন্ন ধরণের প্ল্যাকার্ড, লাল-সবুজের পোষাক পরে নারী-পুরুষ, যুবক-তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরসহ সব সবয়সের প্রবাসী বাংলাদেশীরা অংশ নেন। এবারের প্যারেডে প্রচুর বিদেশী নাগরিককেও লাল-সবুজের পতাকা হাতে অংশ নিতে দেখা যায়। এসময় রাস্তার দু’পাশের বিদেশী নাগরিকরা জড়ো হয়ে হাত নেড়ে প্যারেডকে স্বাগত জানায়।



বাফলা'র প্রেসিডেন্ট ডাঃ আবুল হাশেম তাঁর বক্তব্যে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে উপস্থিত সবাইকে প্যারেডে অংশ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। বাফলা'র কেবিনেট সদস্য, সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দসহ যারা প্যারেড আয়োজনে সহযোগিতা করেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাফলার জেনারেল সেক্রেটারী ইলিয়াস শিকদার বলেন, এত ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের মহান স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। সেই স্বাধীনতা রক্ষায় সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। তিনিও সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বাফলা'র পাবলিক রিলেশন সেক্রেটারী মারুফ খান তার বক্তব্যে তিনি তাঁর বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে বাফলা'র সকল সদস্য, প্রবাসী কমিউনিটি, প্যারেডের অতিথি, সাংবাদিক, সংস্কৃতি কর্মীসহ উপস্থিত সবাইকে এই সুন্দর আয়োজনকে সফল করার জন্য বাফলা'র পক্ষ থেকে ধন্যবাদ এবং সকলকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান।

 

এদিন অনুষ্ঠান পরিচলনায় ছিলেন লস এঞ্জেলেসের জনপ্রিয় এমসি সাজিয়া হক মিমি। তার প্রাণবন্ত উপস্হাপনা দর্শক-শ্রোতা-অতিথিদের প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। এদিন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। প্যারেডে অংশগ্রহণকারী সেরা তিনটি সংগঠনকে ট্রফি দেয়া হয়। এবার কম্যুনিটিতে ভাল কাজ ও সার্ভিসের স্বীকৃতিস্বরূপ বাফলা এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় যথাক্রমে জনাব জসিম আশরাফী ও ইমদাদুল হক বব'কে। প্যারেডের পরে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সেমিনার। এবারের সেমিনারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল 'অধিকার'; সেমিনারটি পরিচালনা করেছেন জনাব আনিসুর রহমান। ফেস্টিভ্যালে চলাকালীন বিভিন্ন সময় অন্যান্যের মধ্যে গান প‌রি‌বেশন ক‌রেন জনপ্রিয় শিল্পী রেহানা মল্লিক, কৃষ্ণা পাল ও নতুন প্রজন্মের ব্যান্ড শিল্পী আসিফ ইসলাম শুভ। বেশ কিছু চমৎকার নৃত্য পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। এছাড়াও স্হানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় বিভিন্ন জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হয়। শেষদিনের প্রধান অতিথি শিল্পী ছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড 'প্রমিথিউস'-এর রকস্টার বিপ্লব। তার মিউজিক ও ড্যান্স দর্শক-শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেয়। ১১তম বাংলাদেশ ডে প্যারেড ও ফেস্টিভ্যালের মিডিয়া পার্টনার ছিল এনটিভি ও এলএ বাংলাটাইমস। সবকিছু মিলে অত্যন্ত সফল একটি প্যারেড ও ফেস্টিভ্যাল লস এঞ্জেলেসবাসীকে উপহার দিয়েছে বাফলা।


এলএবাংলাটাইমস/এলএ/এলআরটি

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত

এ বিভাগের আরো খবর