আপডেট :

        উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল

        মানবাধিকারের উল্লেখযোগ্য উন্নতি

        প্রচণ্ড এই গরম থেকে মুক্তি পেতে বৃষ্টির জন্য বিভিন্ন জায়গায় নামাজ পড়ে দোয়া

        যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার

        এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো

        মার্কিন বিমান আটকে দিলো ‘যুদ্ধবিরোধী’ কুমির!

        চিতাবাঘের আক্রমণে আহত জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার হুইটাল

        যুক্তরাষ্ট্রে গরুর দুধেও বার্ড ফ্লু শনাক্ত

        পবিত্র হজ পালনের অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

        গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

        পার্লামেন্টে জুতা চুরি, খালি পায়ে ঘরে ফিরলেন পাকিস্তানের এমপিরা

        অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

        কুড়িগ্রামে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু

        চীন সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন

        দেশে একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম আরও কিছুটা কমানো হয়েছে

        ২৮ এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি চলছে

        ইউক্রেনে গোপনে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

        আবহাওয়া বিবেচনায় খোলা হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

        ‘ব্ল্যাক’ ফিরে যাচ্ছে পুরনো লাইনআপে!

        অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি কামনায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসতিসকার নামাজ

অবশেষে সেই পরিবারকে পুনর্বাসন

অবশেষে সেই পরিবারকে পুনর্বাসন

অবশেষে ঢাকার কলাবাগানে ওভার ব্রিজের নিচে আশ্রয় নেওয়া ফরিদা বেগম, তার স্বামী ও তিন সন্তানের পরিবারকে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নে পুর্নবাসন করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় পরিবারটিকে সদর ইউএনও আমিন আল পারভেজ পাঁচগাছীতে নিয়ে যান। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতের কোচে ঢাকা থেকে তাদের কুড়িগ্রামে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন ঢাকাস্থ কুড়িগ্রাম সমিতির মহাসচিব সাদুল আবেদীন ডলার।

সকাল সাড়ে ৭টায় পরিবারটি কুড়িগ্রাম শহরে পৌঁছলে তাদের কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে নিয়ে আসা হয়। এখানে নিজেদের জীবনের অসহায়ত্বের কথা বলেন ফরিদা বেগম (৪০) ও তার স্বামী আনছার আলী (৬০)।

ফরিদা ও তার স্বামী জানান, জেলার উলিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুর মৌজার মরাকাটি গ্রামে বাড়ি ছিল তাদের। ছিল আবাদী জমি। দুধের ব্যবসা করে ভালো চলছিল পরিবারটি। চরের মধ্যে প্রতিদিন দুই মণ করে দুধ সংগ্রহ করে ১৫ কিলোমিটার সাইকেল মাড়িয়ে কুড়িগ্রাম শহরে হোটেলে সরবরাহ করতেন আনছার আলী। এভাবে চলছিল তাদের সংসার। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ২০১৬ সালে এক মাসের মধ্যে বাড়িঘর, আবাদী জমি সব নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গৃহহীন হয়ে পড়ে পরিবারটি। তাদের সঙ্গে দেড়শ পরিবারের ভিটেমাটি নদের গর্ভে চলে যায়। শেষে আশ্রয় মেলে ইসলামপুরে চাচাত ভাইয়ের গোয়ালঘরে। সেখানে একমাস থাকার পর বেঁচে থাকার তাগিদে ঢাকায় চলে যান তারা।

ফরিদা বেগম জানান, ‘‘জন্মের পর থেকে অনেক কষ্টের জীবন আমার। জন্মের আগে বাবা ও জন্মের সাত দিনের মাথায় মা মারা যায়। তারপর আশ্রয় মেলে চিন্নমুকুল নামে একটি এনজিওতে। সেখানে সাত বছর থাকার পর এনজিওটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আবার নানার বাড়িতে আশ্রয় নেই। কিছু দিন সেখানে থাকার পর বিয়ে হয়। কিন্তু তিন মাসের মাথায় ছাড়াছাড়ি হয়। এর দুই বছর পর আনছার আলীর সঙ্গে বিয়ে হয়। তারও ডায়রিয়ায় বউ মারা যাওয়ায় আমার সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে।’’

আনছার আলী আর ফরিদা বেগম দম্পতির সংসারে অভাব-অনটন আর মাথা গোজার ঠাঁই না পেয়ে তারা গত বছরের নভেম্বর মাসে ঢাকায় পাড়ি জমান। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে শেষে আশ্রয় নেন কলাবাগান ওভার ব্রিজের নিচে। এখানে ধানমণ্ডি ক্লাবের দরোয়ান জামালের সহযোগিতায় মাঠের পাতা কুড়ানো কাজ করে দিনে আয় হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। সেই অর্থেই চলছিল মানবেতর জীবন যাপন। মাঝখানে কাজটাও বন্ধ হযে যায়। এ সময় প্রায় না খেয়ে থাকতে হচ্ছিল তাদের। সন্তানদের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ শরীর নিয়ে নিজে ভিক্ষাবৃত্তি করতে বেরিয়ে পড়েন ফরিদা বেগম। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে আকলিমা (১১) প্রতিবন্ধী, দ্বিতীয় কন্যা সন্তান আখিতারাকে (৭) গ্রামের বাড়িতে চাচির কাছে রেখে যান। একমাত্র ছেলে ফরিদুল (সাড়ে ৩ বছর) তাদের কাছে থাকে।

ফরিদা বেগম জানান, ঘটনার দিন দুই সন্তানকে নিয়ে কলাবাগান থেকে ল্যাব এইডের দিকে ভিক্ষা করতে বের হন। অসুস্থ শরীর নিয়ে বের হওয়ার ফলে ল্যাব এইডের কাছে অসুস্থ হয়ে ফুটপাতে পড়ে যান তিনি।

সেই স্মৃতি মনে করে ফরিদা বেগম জানান, বাচ্চা দুটা না খেয়ে ছিল। মা হয়ে কেমন করে বসে থাকা যায়। অসুস্থ শরীর নিয়ে ভিক্ষা করার জন্যে বের হয়েছিলেন। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় চোখে অন্ধকার দেখতে থাকলে সেখানেই পড়ে যান। মনে হচ্ছিল সেদিনই শেষ দিন ছিল। বড় মেয়ে তাকে ধরে থাকে। আর ছোট ছেলে মাথায় পানি ঢালে। তারপর কী হয়েছিল তা আর জানা নেই। পরের দিন লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া কুড়িগ্রামের এই পরিবারের ছবি নজরে আসলে তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেন জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন। সন্তানসহ পুরো পরিবারটি কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে আসলে তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেন সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে মেডিকেল টিম। এ সময় প্রাথমিকভাবে পরিবারটির খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, লবণসহ সমস্ত উপকরণ সরবরাহ করেন কুড়িগ্রাম গণকমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজ জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন এ পরিবারের জন্য অস্থায়ীভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। নিশ্চিত করা হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। তাদের তিন সন্তানকে স্কুলে ভর্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, অসহায় ফরিদার পরিবারকে জমিসহ স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।


এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত

এ বিভাগের আরো খবর