আপডেট :

        প্রকাশ পেল তুফান সিনেমার ফার্স্টলুক

        নিউইয়র্কে রাস্তায় আচমকা নারীদের ঘুষি মারছে অজ্ঞাতরা

        যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

        পাপারাজ্জিকে ঘুষি: টেলর সুইফটের বাবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

        দশ বছরে ৬৪ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু, সাগরেই ৩৬ হাজার

        বাল্টিমোরে সেতুধসে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের সব ক্রু ভারতীয়

        কে হচ্ছেন নতুন বন্ড

        জাহাজের ধাক্কায় বাল্টিমোরে সেতু ধসের সর্বশেষ

        শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের ভালো করা উচিত: সাকিব

        রিকশাওয়ালাদের গেম শো

        আর্জেন্টিনায় ৭০ হাজার সরকারি কর্মীকে বরখাস্ত

        সর্বজনীন পেনশন স্কীম কার্যক্রমের উদ্বোধন

        ভুটানের রাজাকে গার্ড অব অনার ও বিদায়ী সংবর্ধনা

        গাজায় মানবিক বিপর্যয় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে পরিণত: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান

        ভুয়া পিতৃপরিচয় দিয়ে বৃদ্ধের সঙ্গে প্রতারণা

        বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভূয়সী প্রশংসায় ডোনাল্ড লু

        মস্কোতে আইএসের হামলা চালানো, বিশ্বাস হচ্ছে না মারিয়া জাখারোভার

        নগরীর অচল ১১০টি সিসি ক্যামেরা হল সচল

        একনেকে ১১ প্রকল্পের অনুমোদন

        স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে সিকৃবিতে আলোচনা সভা

নতুনের আহ্বানে এলো বৈশাখ

নতুনের আহ্বানে এলো বৈশাখ

চারদিকে সাজসাজ রব, বর্ণিল উৎসবের আয়োজন, বসন্তের বিদায়লগ্নে প্রকৃতিও বদলাচ্ছে নিজের রূপ, নতুনের আহ্বানে এসেছে বৈশাখ। পুরনো জীর্ণতাকে দূর করতে এলো নতুনের আহ্বান। কানে কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়োল্লাসের সেই আহ্বান- “ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবেশাখীর ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”
মহাকালের যাত্রাপথে হারিয়ে গেল বাংলা ১৪২৫ সন। আজ পয়লা বৈশাখ, ১৪২৬ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। আজ থেকে আরেকটি নতুন বছরের পরিক্রমা শুরু হলো বাংলা বর্ষপঞ্জিতে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতিতে পয়লা বৈশাখের স্থান সবার শীর্ষে। এর সাথে জড়িত আছে এদেশের মানুষের প্রবল ভাবাবেগ, রয়েছে শেকড়ের টান। দিনটি এলে বাংলা ভাষাভাষী বা বাংলাদেশীদের মধ্যে জাগ্রত হয় নিজস্ব স্বকীয়তা ও সংস্কৃতির চেতনার। স্বাধীন জাতিসত্ত্বার আত্মপরিচয়ে গর্বিত হয় সবাই।
আজ সেই দিন। নতুনের আবাহনে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে জাতি। সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রত্যাশা নিয়ে উদযাপন করবে নববর্ষ। একে অন্যকে বলবে `শুভ নববর্ষ'।

উৎসবের প্রেক্ষাপট:
ভারতবর্ষে মোগল সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর স¤্রাটগণ হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষিপণ্যের খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদের খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হতো। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মোগল স¤্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। স¤্রাটের আদেশ মতে, তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহ উল্লাহ সিরাজি সৌরসন এবং আরবি হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম চালু করেন। ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসনে আরোহণের সময় (৫ নভেম্বর ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে ‘বঙ্গাব্দ’ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। আকবরের সময়কাল থেকেই পয়লা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেকে বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত। এর পরদিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখে ভূমির মালিকেরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদের মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়, যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। বিক্রেতারা ক্রেতাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে। এ প্রথাটি এখনো অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষত স্বর্ণের দোকানে।
মূল অনুষঙ্গ :
নতুন বছরের উৎসবের সাথে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের বাড়ি বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয় এবং সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোনো খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলায় থাকে নানা রকম কুটির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানা রকম পিঠাপুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এই দিনের একটি পুরনো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন। এর মধ্যে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা কিংবা কুস্তি এক সময় প্রচলিত ছিল। বাংলাদেশে এ রকম কুস্তির সবচেয়ে বড় আসরটি হয় ১২ বৈশাখ, চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে, যা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিত। এ ছাড়া ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রমনার বটমূলের মেলা তো রয়েছেই। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধান তিনটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা রয়েছে, যাদের প্রত্যেকেরই বছরের নতুন দিনে উৎসব আছে। ত্রিপুরাদের বৈশুখ, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উৎসব। বর্তমানে তিনটি জাতিসত্তা একত্রে এ উৎসবটি পালন করে। যৌথ এই উৎসবের নাম বৈসাবি উৎসব। এ উৎসবের মধ্যে একটি হলো মারমাদের পানি উৎসব। বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়াও পৃথিবীর আরো নানান দেশে পয়লা বৈশাখ উদযাপিত হয়ে থাকে। মূলত প্রবাসী বাঙালিরা সেসব দেশে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করে থাকেন।
বাংলা নববর্ষ এখন আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসবও। প্রতিবছর এ উৎসব বহু মানুষের অংশগ্রহণে বিপুল থেকে বিপুলতর হয়ে উঠছে। তাই জাতীয় ও স্থানীয় সব পর্যায়ে নানা আয়োজনে পালিত হবে দিনটি। আজ সরকারি ছুটির দিন। নববর্ষ উপলক্ষে পত্র-পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। রেডিও-টেলিভিশনে পরিবেশিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। সিলেটেও প্রতি বছরের মতো এবারও জেলাপ্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজন করেছে বর্ষবরণের। তবে আইন-শৃঙ্খলার দিক থেকে এবার সবাইকে একটু সচেতন থাকতে হবে। এবার একটু বেশিই সতর্ক থাকবে পুলিশব প্রশাসন।
দেশের মতো বিদেশেও প্রবাসীরা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশে-দেশে নানা আয়োজন করছেন।


এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত

এ বিভাগের আরো খবর