আপডেট :

        মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিরা

        যুক্তরাষ্টের শিক্ষকদের স্কুলে বন্দুক নিয়ে যাওয়া নিয়ে একটি বিল পাস হয়েছে

        যুক্তরাষ্টের শিক্ষকদের স্কুলে বন্দুক নিয়ে যাওয়া নিয়ে একটি বিল পাস হয়েছে

        র‍্যাবের মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত

        ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নেওয়া হচ্ছে পদক্ষেপ

        বিশেষ ট্রেনের ৩ বগি লাইনচ্যুত

        কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটার কতজন?

        বৈশ্বিক গড় উষ্ণতার চেয়ে দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে এশিয়া অঞ্চল

        বাংলাদেশের হিন্দু শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে

        বাংলাদেশের হিন্দু শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে

        বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় আজ বুধবার রাজধানী ঢাকা শীর্ষ ১০ এর বাইরে

        লোহিত সাগরের জিবুতি উপকূলে অভিবাসীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবি

        থাইল্যান্ডের উদ্দেশে রাজধানী ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী

        গোলাপি চাঁদের দেখা মিলবে রাতে

        ২ হাজার ডলার দাম কমলো টেসলা গাড়ির

        যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ বিষয়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

        মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী দুই দেশ—ইরান ও ইসরায়েলকে নিয়ে মহাবিপত্তিতে আছে জর্ডান

        বিনা ভোটে জিতে বললেন, ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পেয়েছি’

        বিনা ভোটে জিতে বললেন, ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পেয়েছি’

        অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসার সুদ বা মুনাফার ওপর থেকে কর প্রত্যাহার

করোনার কারণে দেশে উপার্জন কমেছে ৭৪ শতাংশ পরিবারে: জরিপ

করোনার কারণে দেশে উপার্জন কমেছে ৭৪ শতাংশ পরিবারে: জরিপ

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিম্নআয়ের মানুষকে অস্বাভাবিকভাবে প্রভাবিত করেছে। এর কারণে সংকটে আছে সমাজের প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেশের প্রায় ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত দুর্বলতার ঝুঁকিতে রয়েছে। করোনার কারণে প্রায় ৭৪ শতাংশ পরিবারের উপার্জন কমে গেছে।

ব্র্যাক, ডেটা সেন্স এবং উন্নয়ন সমন্বয় এর এক যৌথ সমীক্ষায় ওঠে এসেছে এসব তথ্য। ‘কোভিড-১৯ এবং জাতীয় বাজেট ২০২০-২০২১: নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক এই সমীক্ষার ফলাফল সোমবার এক ডিজিটাল সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন আইসোশ্যাল এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. অনন্য রায়হান। প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন।
সমীক্ষাটিতে ব্র্যাক, বিআইজিডি, পিপিআরসি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত গবেষণা-সমীক্ষার পর্যালোচনার পাশাপাশি একটি জরিপও পরিচালনা করা হয়েছে এবং প্রাপ্ত ফলাফল সমন্বয় করে মূল প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। জরিপটি দেশের ২৫ জেলায় দ্বৈবচয়নে নির্বাচিত ৯৬২ জন উত্তরদাতার অংশগ্রহণে মে মাসের ১৫-১৮ তারিখের মধ্যে সম্পাদন করা হয়।

গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, দেশে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে পাঁচ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র। এদের মধ্যে নতুন করে চরম দরিদ্র হয়ে পড়া পরিবারগুলোও রয়েছে। উচ্চ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকা চরম দরিদ্রের সংখ্যা চার কোটি ৭৩ লাখ এবং উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন তিন কোটি ৬৩ লাখ মানুষ। জরিপে দেখা যায়, কোভিড-১৯ এর কারণে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর বহুবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যেসব পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, এর মধ্যে ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য চাকরি হারিয়েছেন। মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গড় পারিবারিক উপার্জন ৭৪ শতাংশ কমে গেছে। দিনমজুরসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উৎপাদনখাতেও বড় ধাক্কা লেগেছে। উদাহরণ হিসেবে, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি এপ্রিল-২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ সালের এপ্রিলে ৮৪ শতাংশ কমেছে। এ বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকে ৭ এপ্রিলের মধ্যে এক হাজার ১১৬টি কারখানা বন্ধ ঘোষিত হয়েছে এবং চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক।

সমীক্ষায় আরও জানা যায়, নিম্নআয়ের মানুষের এই রোগের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এসব পরিবারের উপার্জনশীল সদস্যের মৃত্যু হলে নারী ও শিশুদের মধ্যে অনাহার এবং অপুষ্টির শিকার হওয়ার উচ্চ আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। দেশব্যাপী সমন্বয়ের অভাবের কারণে দরিদ্র ও অতি দরিদ্রদের কাছে সরকারের দেওয়া খাদ্য এবং নগদ সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে না বলে বিভিন্ন প্রতিবেদন ও গবেষণা-সমীক্ষা থেকে প্রতীয়মান হয়।

কোভিড-১৯ নতুন অর্থনৈতিক বিভাজন, সামাজিক বিভাজন এবং ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্টি করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কেবল ৩৪ শতাংশ পরিবারের স্মার্টফোন রয়েছে এবং ৫৪ শতাংশ পরিবারের টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে। অতএব নিচের অংশে বসবাসকারী শিশুরা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছে।

১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারানোর কারণে ফিরে এসেছেন বা দেশে ফিরে আসছেন।

কোভিড-১৯ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারগুলোকে আরও বেশি অসুবিধার মুখে ঠেলে দিয়েছে।

গবেষণার আলোকে আসন্ন বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য কিছু প্রস্তাব পেশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নিম্নআয়ের যেসব পরিবারের উপার্জনকারী কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে উপার্জনহীন হয়েছেন বা মারা গেছেন সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে অন্তত তিন বছরের জন্য নগদ সহায়তা প্রবর্তন করা। ২০২০-২০২১ অর্থবছর থেকে চরম দরিদ্র ও দরিদ্রদের জন্য এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছর থেকে অন্যান্য বেকার গোষ্ঠীর জন্য সার্বজনীন বেকারত্ব সুবিধা স্কিম চালু করা।
সরকারি পরিষেবা ও সুবিধাগুলো নাগরিকদের কাছে সহজলভ্য করতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে নাগরিকদের বয়স নির্বিশেষে সার্বজনীন পরিচয় ব্যবস্থা তৈরি এবং প্রবর্তন করা। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা স্কিম, ঋণ, সঞ্চয় এবং বিমা ইত্যাদি সুবিধা পাওয়ার জন্য সকল নাগরিককে সর্বজনীন ডিজিটাল পরিষেবা দিতে অন্তর্ভূক্ত করা। জীবিকা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য ১৬ বছরের বেশি বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য পৃথক ডিজিটাল যন্ত্রাদি এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা।

ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘মানুষকে আগে বাঁচাতে হবে, তারপর স্বপ্নপূরণ আর সুখে থাকার চিন্তা। তাই এবারের বাজেট হোক বেঁচে থাকার বা টিকে থাকার বাজেট।’

বর্তমানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা সবচেয়ে হুমকির মুখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মধ্যবিত্তরাই চিকিৎসাসেবা পাবেন কি না সেই আতঙ্কে আছেন, দরিদ্রদের অবস্থা তো আরও করুণ।’

ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষ হিসেবে বটম অফ দি পিরামিডে শুধু শ্রমিকেরা নয়, অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও আছেন। প্রণোদনা দেয়ার পরেও শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ বেতন দেওয়া হয়েছে। তাদের বাসা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ তো কমেনি। তাই এই মুহূর্তে বেঁচে থাকার জন্য যাদের প্রয়োজন বেশি তাদের প্রণোদনা বা ভর্তুকির ব্যবস্থা রাখতে হবে।’

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এখন নতুন তালিকা তৈরির সময়ক্ষেপণের দিকে না গিয়ে আগের তালিকা ধরেই কাজ করা শ্রেয়। ৭৮ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে যে ১০০ টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে, তা এখনই ৫০০ টাকায় উন্নীত করা দরকার। এতে করে সঠিক জায়গায় সহায়তা পৌঁছানো অনেকটা নিশ্চিত হবে।’

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত

এ বিভাগের আরো খবর