তদবির করতেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভারত যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শুক্রবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস বিদেশ এমন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যখনই বললেন-আমরা বিদেশিদের পরামর্শ নেই না। পরক্ষণেই শুনলাম যে, ওবায়দুল কাদের সাহেব একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে তদবির করতে ভারতে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎসই হচ্ছে বিদেশ।’

স্ববিরোধীতা আওয়ামী লীগের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এমনটা জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কথার বিপরীত কাজে বিশ্বাসী। এ ধরনের কথা বলার কারণ হচ্ছে তাদের আর জনগণ ও যথার্থ প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের প্রয়োজন নেই।’

‘বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে বেআইনিভাবে সমাবেশ করতে যাওয়ায় পুলিশ বাধা দিয়েছে’ বলে ওবায়দুল কাদেরের যে বক্তব্য দিয়েছেন সে ব্যাপারে সমালোচনা করেন রিজভী। বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবদের বক্তব্য মিথ্যাচারের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। প্রতিদিন প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে, সরকারের মন্ত্রী-নেতারা সেসব অনুষ্ঠান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছেন, অথচ সেগুলোতে বাধা দেয়া হচ্ছে না। কেবলমাত্র বিএনপির মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই বাধা দেয়া হচ্ছে।’

বিএনপি এই নেতা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছিলেন-অফিস দিনে কোনো কর্মসূচি পালন করবে না আওয়ামী লীগ। আমরা কি দেখলাম গত বুধবার বিনা নোটিশে ২০টি সড়ক বন্ধ করে সমাবেশ করেছে তারা। স্কুল-কলেজ ও মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মাধ্যমে জোর করে শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে আওয়ামী লীগের সমাবেশস্থলে আসতে বাধ্য করছে। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এতটাই দেউলিয়া হয়ে পড়েছে যে, তাদের সমাবেশে টাকা দিয়ে জোর করে লোক আনতে হয়।’

রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী করার পর বিএনপি ঘোষিত সকল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে মানুষের ঢল দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার। তাই বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে দমনে নিষ্ঠুর খেলায় মেতে উঠেছে তারা।

বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালাচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘পুলিশ টিয়ারশেল ছুঁড়ে, গরম পানি মেরে, লাঠিচার্জ করে বিএনপির সকল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। রাজনৈতিক সকল শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দকেও লাঞ্ছিত করতে কুন্ঠাবোধ করছে না সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

সংবাদ সম্মেলনে ৭ মার্চ আওয়ামী লীগের জনসভায় আসার পথে নারী লাঞ্ছনার বিষয়েও কথা বলেন রিজভী। বলেন, ‘ওই ঘটনায় সারাদেশে ধিক্কারের ঝড় বইছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের এটি নতুন নয়। ছাত্রলীগ দেশজুড়ে ব্যাপক অনাচারের মধ্যে একটি কুদৃষ্টান্ত হলো কয়েক বছর আগের ইডেন কলেজের ঘটনা। সেই ধারাবাহিকতারই এক নতুন ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা হচ্ছে গত পরশু দিনের নারী লাঞ্ছনার ঘটনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত পরশু দিনের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে লোক দেখানো বিচারের কথা বললেও গতকাল ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন-সমাবেশের বাইরে সংঘটিত এ ধরনের ঘটনার দায় নেবে না দল। তাহলে কী ওবায়দুল কাদের সাহেব বিচারের পরিবর্তে নারী লাঞ্ছনাকারিদের আরর উৎসাহিত করছেন? এই ঘটনায় দেশের সম্ভ্রম লুন্ঠিত হলেও আওয়ামী নেতাদের টনক নড়ছে না। আওয়ামী অঙ্গ সংগঠন বর্তমানে নারী সমাজের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়াম্যান ডা. এজেড জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালীসহ সংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি