'বাগদাদি হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা'র প্রশ্নে দুই মার্কিন সংবাদমাধ্যমের দ্বন্দ্ব
দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে দুই মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ আর নিউ
ইয়র্ক টাইমস। বাগদাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত মার্কিন বাহিনীর এক
অভিযানের ব্যর্থতায় নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দায়ী করে খবর প্রকাশ করে ফক্স নিউজ।
ওই প্রতিবেদনকে ‘বিদ্বেষমূলক ও অযথার্থ’ বলে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের
আহ্বান জানিয়েছে টাইমস কর্তৃপক্ষ। ফক্স নিউজকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান
জানিয়েছে তারা। তবে ফক্স নিউজ কর্তৃপক্ষ ওই প্রতিবেদন নিয়ে টাইমস
কর্তৃপক্ষের প্রতিবাদ প্রকাশ করলেও ক্ষমা চাওয়ার দাবির ব্যাপারে কোনও
প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
২০১৫ সালের মে মাসে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে এক মার্কিন অভিযান থেকে প্রাণে
বেঁচে যান আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি। এ ঘটনায় নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দায়ী
করে শনিবার (২২ জুলাই) ফক্স নিউজ চ্যানেলের ‘ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ নামের
সকালের অধিবেশেন ওই প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। সেই প্রতিবেদনটিই প্রত্যাহার
এবং এটি প্রচারের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৫
সালের ওই অভিযানে বাগদাদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবু সায়াফ ওই অভিযানে নিহত হন।
সায়াফের স্ত্রী উম্মে সায়াফকে আটক করা হয় এবং বেশ কিছু নথি ও ল্যাপটপ জব্দ
করা হয়।
‘ফক্স এন্ড ফ্রেন্ডস’ শোটি মূলত টক শো ভিত্তিক। তবে
অনুষ্ঠানের শেষে বিহাইন্ড সিন হিসেবে ফুটেজ ছাড়া অর্থাৎ ফক্স নিউজের ওয়েব
থেকে কিছু সংবাদ ফক্স নিউজ.কম-নামে প্রচার করা হয়। শনিবার ফক্স নিউজে
প্রচারিত এমন এক খবরে বলা হয়, ‘ওই সময়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস এ প্রকাশিত এক
প্রতিবেদনের কারণে আল বাগদাদিকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্র। ফক্স
এন্ড ফ্রেন্ডস অনুষ্ঠানে মার্কিন বিশেষ অভিযান কমান্ডের প্রধান জেন টনি
থমাসকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘২০১৫ সালের অভিযানে টনির দল বাগদাদির কাছাকাছি
পৌঁছে গিয়েছিল। তবে ওই অভিযানের খবর একটি প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকে ফাঁস
হয়ে যাওয়ায় বাগদাদি গা ঢাকা দেন’। ফক্স নিউজের দাবি, তাদের শনিবারের সকালের
অধিবেশনে জেন টনি ২০১৫ সালের জুনে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি
প্রতিবেদনের ব্যাপারেই ইঙ্গিত করেছেন। কেননা, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো
কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করে এনেছেন তার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছিল
ওই প্রতিবেদনে।’
একইদিনে
ওয়াশিংটন পোস্টে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠদের রুশ সংশ্লিষ্টতার প্রতিবেদনের বিষয়ে
মন্তব্য করতে গিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রসঙ্গ তোলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
একে তিনি ডাকেন ফেইলিং নিউ ইয়র্ক টাইমস নামে। শনিবারের টুইটে ট্রাম্প
মন্তব্য করেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় অপরাধী আল-বাগদাদিকে হত্যার পরিকল্পনা
ভেস্তে গেছে ব্যর্থতায় নিমিজ্জত নিউ ইয়র্ক টাইমসের (ফেইলিং নিউ ইয়র্ক
টাইমস) কারণে। জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে তাদের ক্ষতিকর এজেন্ডা।’
পরদিন
রবিবার (২৪ জুলাই) নিউ ইয়র্ক টাইমস এর পক্ষ থেকে ফক্স এন্ড ফ্রেন্ডস
অনুষ্ঠানে প্রচারিত ওই খবরকে বিদ্বেষমূলক ও ভুয়া বলে উল্লেখ করে চিঠি
পাঠানো হয়। প্রতিবাদ জানিয়ে লেখা চিঠিতে সংবাদপত্রটির যোগাযোগ সংক্রান্ত
ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেনিয়েল রোয়াডেস হা লিখেছেন, “নিউ ইয়র্ক টাইমসের পক্ষ
থেকে আমি ফক্স এন্ড ফ্রেন্ডস এর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি তারা যেন ‘নিউ ইয়র্ক
টাইমস লিক অ্যালাউড আইএস লিডার টু স্লিপ অ্যাওয়ে’ শিরোনামে লেখা
‘বিদ্বেষমূলক ও অযথার্থ’ প্রতিবেদনটির জন্য সরাসরি সম্প্রচারে ক্ষমা চায়
এবং এ নিয়ে টুইট করে। রোয়াডেস-এর অভিযোগ, ফক্স নিউজের ওই প্রতিবেদনটিতে
ঘটনাপ্রবাহের প্রাসঙ্গিকতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়নি। এ ব্যাপারে নিউ
ইয়র্ক টাইমসের কাছ থেকে মন্তব্যও জানতে চাওয়া হয়নি।
মার্কিন
সংবাদমাধ্যম পলিটিকো জানিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্ক টাইমসের
প্রতিবাদমূলক চিঠিটিকে মূল স্টোরির সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়েছে ফক্স
কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে জুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এক বিবৃতি। এতে বলা হয়: “ফক্স নিউজ.কম
এর স্টোরিটি অনলাইনে আপডেট করা হয়েছে এবং পরদিন সকালে ফক্স এন্ড ফ্রেন্ডস
এর ফক্স নিউজ.কম-এ আপডেট স্টোরি দেওয়া হবে।’
গতমাসে রুশ
উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওলেগ সিলোমলোটভ বলেছিলেন, মে মাসের শেষদিকে সিরিয়ার
রাকা শহরের কাছে রাশিয়ার বিমান হামলায় ‘খুব সম্ভবত’ বাগদাদি নিহত হয়েছেন।
এছাড়া, লন্ডনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস সিরিয়ায় তাদের
নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে বাগদাদির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, আইএস বাগদাদির মৃত্যুর খবর প্রচার
করেছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, বাগদাদি নিহত হওয়ার কোনও
প্রমাণ তাদের কাছে নেই। যতদিন কোনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যাবে না ততদিন
বাগদাদিকে জীবিত হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
বাগদাদির
মাথার মূল্য ২৫০ লাখ মার্কিন ডলার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৩ সালে
আল-কায়েদা থেকে বেরিয়ে গিয়ে তিনি আইএস প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে
মসুলে প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল তাকে।
শেয়ার করুন