আপডেট :

        প্রচণ্ড এই গরম থেকে মুক্তি পেতে বৃষ্টির জন্য বিভিন্ন জায়গায় নামাজ পড়ে দোয়া

        যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার

        এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো

        মার্কিন বিমান আটকে দিলো ‘যুদ্ধবিরোধী’ কুমির!

        চিতাবাঘের আক্রমণে আহত জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার হুইটাল

        যুক্তরাষ্ট্রে গরুর দুধেও বার্ড ফ্লু শনাক্ত

        পবিত্র হজ পালনের অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

        গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

        পার্লামেন্টে জুতা চুরি, খালি পায়ে ঘরে ফিরলেন পাকিস্তানের এমপিরা

        অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

        কুড়িগ্রামে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু

        চীন সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন

        দেশে একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম আরও কিছুটা কমানো হয়েছে

        ২৮ এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি চলছে

        ইউক্রেনে গোপনে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

        আবহাওয়া বিবেচনায় খোলা হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

        ‘ব্ল্যাক’ ফিরে যাচ্ছে পুরনো লাইনআপে!

        অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি কামনায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসতিসকার নামাজ

        রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন

        উপজেলা ভোটে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে

তৃতীয়বার স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের: হেরেও দুঃখ নেই টাইগারদের, কথা রেখেছেন মাশরাফি!

তৃতীয়বার স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের: হেরেও দুঃখ নেই টাইগারদের, কথা রেখেছেন মাশরাফি!

এ নিয়ে তৃতীয়বার স্বপ্নভঙ্গ হলো বাংলাদেশের। এর আগে ২০১২ সালে ওয়ানডে ফরম্যাটে এবং ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে টাইগাররা। প্রথমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ রানের হারে বেদনাদায়ক চিত্রনাট্য রচিত হয়। আর সবশেষ টি-টোয়েন্টি সংষ্করণে ভারতের কাছে ৮ উইকেটে হেরে দ্বিতীয়বার স্বপ্নভঙ্গ হয়। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটল না।

এর চেয়ে আর উত্তেজনা ছড়াতে পারে না কোনো ম্যাচ! পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকল নাটক আর রোমাঞ্চ। কে হবে এবারের এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন, বাংলাদেশ না ভারত? অপেক্ষা করতে হলো চিত্রনাট্যের শেষ পর্যন্ত। অবশেষে শেষ হাসি হাসল টিম ইন্ডিয়া। চূড়ান্ত মহারণে টাইগারদের ৩ উইকেটে হারিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের মুকুট পরল রোহিত বাহিনী। এ নিয়ে সব মিলিয়ে ৭বার এশিয়ার রাজা হওয়ার গৌরব অর্জন করল তারা।
এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশের দেয়া ২২৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে চড়াও হয়ে খেলেন শিখর ধাওয়ান। স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটাতে থাকেন তিনি। তবে তার এ ঝড় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দলীয় ৩৫ রানে তাকে ফিরিয়ে টাইগারদের প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন নাজমুল ইসলাম অপু। সৌম্যর ক্যাচ বানিয়ে তাকে ফেরান তিনি। কিছুক্ষণ পর মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করে আম্বাতি রাইডুকে ফেরান মাশরাফি। তাতে ম্যাচে উত্তেজনা ফিরে আসে।

ধাওয়ানের পর খানিক ব্যবধানে ফিরে গিয়েছিলেন রাইডু। তবে থেকে গিয়েছিলেন রোহিত। দারুণ খেলছিলেন তিনি। বাজে বল পেলেই তা সীমানাছাড়া করছিলেন। এতে দুরন্ত গতিতে ছুটছিল ভারত। তবে তাতে বাদ সাধেন রুবেল হোসেন। দলীয় ৮৩ রানে অসাধারণ এক ডেলিভেরিতে নাজমুল অপুর তালুবন্দি করে দুর্দান্ত খেলতে থাকা রোহিতকে (৪৮) ফেরান তিনি। এতে খেলায় ফেরে বাংলাদেশ।

৮৩ রানে টপঅর্ডারের ইনফর্ম ৩ ব্যাটসম্যান হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। সেখান থেকে মাহেন্দ্র সিং ধোনিকে নিয়ে দলকে টেনে তোলেন দিনেশ কার্তিক। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন ধোনি। হঠাৎই থামতে বাধ্য হন কার্তিক (৩৭)। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাকে ফেরান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এতে ফের চাপে পড়ে ভারত। সেই চাপের মধ্যেও বুক চিতিয়ে লড়েন ধোনি। এক পর্যায়ে সেই বিষদাঁতও ভেঙে দেয় টাইগাররা। দুর্দান্ত অফকাটারে তাকে ফিরিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর আরো চাপ বাড়ান মোস্তাফিজুর রহমান। এর পরই পায়ের পেশিতে টান পেয়ে (রিটায়ার্ড হার্ট) মাঠ ছাড়েন কেদার যাদব।

পরে সেই চাপটা ভালোভাবে অব্যাহত রাখতে পারেননি বাংলাদেশি বোলাররা। দ্রুত ভুবনেশ্বর কুমার ও রবীন্দ্র জাদেজার জুটি ভাঙতে পারেননি তারা। শেষদিকে জাদেজাকে ফিরিয়ে একটু উত্তেজনা বাড়ান রুবেল। দুর্দান্ত খেলতে থাকা ভুবনেশ্বরকে ফিরিয়ে তাতে বাড়তি পারদ জোগান মোস্তাফিজ। টাইগারদের দৌড় ছিল সেই পর্যন্তই। শেষ অবধি ৩ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করে ভারত। বাংলােদশের হয়ে মোস্তাফিজ ও রুবেল নেন ২টি করে উইকেট।

ফাইনালি লড়াইয়ে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। গোটা টুর্নামেন্টে ওপেনিং সমস্যায় ভুগছিল টাইগাররা। তা কাটিয়ে উঠতে মেহেদী হাসান মিরাজকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে চমক দেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। এতে যেন সমাধানের পথ খুঁজে পায় বাংলাদেশ। লিটন দাস-মিরাজ মিলে এনে দেন উড়ন্ত সূচনা। উদ্বোধনী জুটিতে তারা তোলেন ১২০ রান।

মিরাজ শুধু সাপোর্ট দিয়ে যান। অন্য প্রান্তে ঝড়ো গতিতে রান তোলেন লিটন। তাদের জুটি ভাঙেন পার্টটাইমার কেদার যাদব। তাকে তুলে মারতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়েন মিরাজ (৩২)। এরপরই পথ হারায় বাংলাদেশ। যুজবেন্দ্র চাহালের বল ইমরুল কায়েসের প্যাডে লাগলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। পরে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। তাতে দেখা যায়, বল বাইরে পিচ করে স্ট্যাম্পে আঘাত হানছে। তবে আম্পায়ার কল হওয়ায় সাজঘরে ফিরতে হয় বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে।

খানিক পরই কেদারের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে জাসপ্রিত বুমরাহর তালুবন্দি হয়ে ফেরেন ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিকুর রহিম। এরপর দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউটের শিকার হয়ে ফেরেন ইনফর্ম মোহাম্মদ মিঠুন। এতে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সেই বিপর্যয়ের মুখে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কুলদ্বীপ যাদবের বলে অযাচিত বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে বুমরাহর হাতে ধরা পড়েন তিনি।

সতীর্থদের যাওয়া-আসার মাঝে একপ্রান্ত আগলে রাখেন লিটন। শুরু থেকেই স্বভঙ্গিমায় খেলে যান তিনি। চরম বিপর্যয়ের মধ্যেই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন এ ডানহাতি ওপেনার। মাত্র ৮৭ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। করুণ পরিস্থিতিতে লড়ে যাচ্ছিলেন লিটন। শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত আউট থামিয়ে দেয় তাকে।

সেঞ্চুরির পর হাত খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন লিটন। ঠিক সেই মুহূর্তে কুলদ্বীপের বলে মাহেন্দ্র সিং ধোনির স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি। ফাঁদে পড়েন বললে ভুল হবে, তাকে ট্র্যাপে ফেলা হয়। চায়নাম্যান বোলারের বলটি মিস করলেও পা দাগের মধ্যেই ছিল লিটনের। তবু রিপ্লে দেখেন আম্পায়ার। কয়েকবার জুম করে দেখার পর তাকে আউট দিয়ে দেন তৃতীয় আম্পায়ার রড টাকার। এতে থামে তার লড়াই। এর আগে ১১৭ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১২১ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন প্রতিশ্রুতিশীল ও সম্ভাবনাময়ী এ ওপেনার।

এতে বাংলাদেশের বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে যায়। পরক্ষণেই কুলদ্বীপের বলে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। শেষদিকে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন সৌম্য সরকার। আম্বাতি রাইডু ও ধোনির যৌথ প্রচেষ্টায় রানআউটে কাটা পড়লে তার লড়াইও থামে। ৪৫ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ৩৩ রান করে ফেরেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ফেরার এ ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত দেড় ওভার বাকি থাকতেই ২২২ রানে গুটিয়ে যায় মাশরাফি বাহিনী। ভারতের হয়ে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন কুলদ্বীপ। ৪৫ রান খরচায় তিনি নেন ৩ উইকেট। ২ উইকেট ঝুলিতে ভরেন কেদার।
হেরেও দু:খ নেই:
কিন্তু মাশরাফি যে আগেই কথা দিয়েছিলেন শেষ বল পর্যন্ত লড়াই যাবেন। কিন্তু এত মামুলি সংগ্রহ নিয়ে ব্যাটিং তারকায় ঠাসা ভারতের বিরুদ্ধে শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করার চিন্তা কার মাথায় থাকে?

দল হেরেছে, হারুক। এতে খুব একটা আফসোস নেই মাশরাফি ভক্তদের। বরং এত স্বল্প পুঁজি নিয়েও ভারতের মতো দলের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় তাই দেখিয়ে দিয়েছে মাশরাফিরা।

৫০ ওভারের শেষ বলটি পর্যন্ত খেলতে হয়েছে ওয়ানডে ক্রিকেট র‌্যাংকিংয়ের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতকে। যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে কেন এত ঘাম ঝরাতে হলো এ নিয়ে এখন চলছে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ।

আজকের ম্যাচে সতীর্থদের কাছ থেকে সেরাটি আদায় করে নেয়ার পাশাপাশি নিজের ১০ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৩৫ রান। এরই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তুলে নিয়েছেন ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান রাইডুকে। টিভিতে দেখা যাচ্ছিল, গ্যালারিতে বসা নীল জার্সি পরিহিত ভারতীয় সমর্থকদের চোখে ছিল বেদনার রঙ! যেন শরীর ও মন দুটোই একাকার হয়ে গিয়েছিল নীলের ছটায়।

টাইগার বোলারদের দাপটে প্রতিটি ডট বল যেন তাদের হৃদয় ছিঁড়ে দিয়েছে, আর উইকেট পতনের পর গ্যালারিতে তাদের কান্নার দৃশ্যও দেখা গেছে। বিশেষ করে ভারতীয় সমর্থক শিশুদের কান্না দেখে সহানুভূতিও জেগেছে অনেকের মাঝে।

এর আগে এমন নাকানিচুবানি খায়নি কোনো দলের কাছে। দাপটেই উঠেছিল কপিল দেবের উত্তরসূরীরা।

ইনিংসের শেষ ওভারে জেতা শ্বাসরুদ্ধকর এ ম্যাচ শেষে ভারতের সাবেক অধিনায়ক রবি শাস্ত্রীও বাংলাদেশের বিপক্ষে ২২৩ রানের টার্গেটটা অনেক চ্যালেঞ্জ হিসেবেই তুলে ধরলেন। তিনি বাংলাদেশি বোলারদের কৃতিত্ব না দিয়ে বরং রোহিতের অধিনায়কত্বের সাফাই গাইলেন। তার কথায় মনে হলো-বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে ২২৩ রান করাই এখন বিশেষ চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জে রোহিতের ‘ব্রিলিয়ান্ট’ ক্যাপ্টেন্সিতেই দল জিততে পেরেছে।

খেলা শুরুর আগে যা বলেছিলেন মাশরাফি:
ভারতের বিপক্ষে জেতার জন্য শেষ বল পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

খেলা শুরুর আগ মুহূর্তে ইএসপিএনকে দেয়া সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে মাশরাফি বলেন, ‘ফাইনালে উঠার জন্য সব অবদান আমাদের খেলোয়াড়দের। শেষ ম্যাচগুলোতে আমাদের খেলোয়াড়রা দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন। আজ আমরা কঠিন ম্যাচের মুখোমুখি হয়েছি। জেতার জন্য আমরা শেষ বল পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো।’

নাজমুল হোসেন অপুকে নেয়ার বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের দলে একজন স্পিনারের ঘাটতি ছিল। তা পূরণ করার জন্য মুমিনুলের পরিবর্তে অপুকে দলে নেয়া হয়েছে। আজ আমাদের বড় সুযোগ এসেছে। বিশ্বের সেরা দল হিসেবে তারা (ভারত) আমাদের চেয়ে বেশি চাপে থাকবে। আমরা যদি চাপ সামলে নিয়ে নিজেদের সেরাটা দিয়ে এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই। ’

এলএবাংলাটাইমস/এস/এলআরটি

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত