প্রবাস

ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত অস্থায়ী মিনারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানের শ্রদ্ধা নিবেদন

বৃহত্তর ওয়াশিংটন ডিসিতে মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে। শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ভার্জিনিয়ার আর্লিংটন কাউন্টির কেনমোর মিডল স্কুল অডিটোরিয়ামে এই দিবসটি পালন করা হয়। ভার্জিনিয়ার আর্লিংটন কাউন্টি এবং আর্লিংটন আর্টস এর সার্বিক সহযোগিতা ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই ফোরাম, ইনক. - ডুয়াফির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশী আমেরিকান আইটি প্রোফেশনালস অর্গানাইজেশন (বাইটপো), বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ভিসি (বাগডিসি), বাংলাদেশি এন্টারপ্রেনার্স সোসাইটি অব ট্যালেন্টস (বেষ্ট), জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন ইন ডিসি ও একাত্তর ফাউন্ডেশনসহ ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া ও মেরিল্যান্ড নিয়ে গঠিত বৃহত্তর ওয়াশিংটন ডিসির ২৫টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট 'ডিসি একুশে এলায়েন্স'-এর উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গীত প্রচারের পর দলীয় কোরাস 'আসছে মৃত্যুঞ্জয়ী' পরিবেশন করা হয়। এরপর অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্ময়ক ড. ইসরাত সুলতানা মিতা সংগঠনের প্রেসিডেন্টদের মঞ্চে ডেকে নিয়ে দিবসটি পালনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং ২৫টি সংগঠনের পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান। এছাড়াও আর্লিংটন কাউন্টি বোর্ড এর চেয়ারম্যান ক্রিশ্চিয়ান ডরসি, আর্লিংটন কাউন্টি বোর্ড এর সদস্য টাকিস কেরান্তোনিস, মিস কেটি ক্রিস্টল, ইউ.এস. সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার এর আঞ্চলিক পরিচালক মিস. তানিয়া ট্যালেন্টো এবং আর্লিংটন আর্টস কমিশন এর চেয়ারম্যান অ্যান কার্লে উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান একুশে ফেব্রুয়ারিকে বাঙ্গালীর জাতির জন্য এক গৌরব এবং অহংকারের দিন হিসেবে উল্লেখ করে দেশের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মধ্যদিয়ে মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে আরো শানিত করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি একটি শোকের হলেও এটি গৌরব, অহংকার আর স্বাতন্ত্র্য রক্ষা দিন। সেইসাথে দিনটি একত্রে কাজ ও সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে। তিনি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বিলুপ্তির সম্মুখীন ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় নতুন করে অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। আর্লিংটন কাউন্টি বোর্ড চেয়ারম্যান খৃশ্চিয়ান ডোরসি বলেন, বাংলা একটি ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ঐতিহ্য ছাড়াও আরও কিছু। তিনি ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের মহান ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে এই সংগ্রামকে পুরো বিশ্বের জন্য একটি উপহার হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করেন। টাকিস কেরান্তোনিস বলেন, ভাষা হচ্ছে ইতিহাস, পরিচয় এবং ভবিষ্যত। আর্লিংটনের জনগোষ্ঠী ৯০টিরও অধিক ভাষায় কথা বলে। আমরা এই বৈচিত্র্যকে সম্মান, সংরক্ষণ এবং সহায়তা করি বলে আমাদের কমিউনিটি অত্যন্ত শক্তিশালী। আর্লিংটনের এই বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে আজ একত্রে মহান মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে শিশুদের কোরাস - 'আমি বাংলায় গান গাই' এবং 'নতুন একটা ভোর' পরিবেশন কর হয়। শিশুদের আর্টস কম্পিটিশন ও ভালো লেখার জন্য তাদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এর আগে ভাষা আন্দোলনের উপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র একুশে: একটি অবিস্মরণীয় দিন - তুলে ধরা হয়। বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী লায়লা হাসানের পরিচালনায় নাচ - একুশ আমার অহংকারে, ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়" এবং "ও আমার বাংলা ভাষা" পরিবেশিত হয়। অতপর বাংলা ভাষার নাটক - শহীদ মিনার ও নৃত্য নাট্য পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে বলিভিয়ান কালচারাল গ্রুপ তাদের স্বদেশী ভাষা কিচুয়া রক্ষার সংগ্রামে টিংকু -২০২৩ নৃত্যও পরিবেশন করে। এরপর রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান এবং আগত অতিথিরা ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী মিনারে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সবশেষে ডুয়াফির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এবারের একুশে এলাায়েন্সের প্রধান সমন্ময়ক ড. ইসরাত সুলতানা মিতার ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আয়োজক সংগঠনগুলোর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান হয়। ড. আমিনুর রহমান ও বিশিষ্ট উপস্থাপিকা ড. রুনা হক এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে স্থানীয় আমেরিকান, বহুজাতিক সাংস্কৃতিক সম্প্রদায় ও বৈচিত্র্যের গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং বৃহত্তর ওয়াশিংটন ডিসি'র বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন।