প্রবাস

আমেরিকায় 'বাংলাদেশি উইমেন অ্যাম্পাওয়ারমেন্ট নেটওয়ার্ক' গঠিত

যুক্তরাষ্ট্রে তথ্য-প্রযুক্তির রাজধানী খ্যাত সিলিকন ভ্যালি এবং সানফ্রান্সিসকো এলাকার পেশাজীবী বাঙালি নারীরা সংঘবদ্ধ হলেন। পারিবারিক মূল্যবোধ জাগ্রত রাখার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সন্তানকে আগলে রাখার পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসন অটুট রাখার সংকল্পও ব্যক্ত করা হয় সংঘবদ্ধ এ নারী সমাজের বৈঠক থেকে। তবে জোর-জবরদস্তি নয়, স্নেহ-ভালবাসার মধ্য দিয়ে সন্তানের হৃদয় জয় করতে সকলে সংকল্প ব্যক্ত করেন।
গত রবিবার পড়ন্ত বিকেলে শতাধিক গৃহবধূর অংশগ্রহণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয় সানফ্রান্সিসকো বে এলাকাবেষ্টিত হেওয়ার্ডে। এ সংগঠনের নাম দেয়া দেয়া হয় ‘বাংলাদেশি উইমেন অ্যাম্পাওয়ারমেন্ট নেটওয়ার্ক।' পারিবারিক সম্প্রীতি অটুট রাখার পর বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজের অঙ্গীকারও করেন সমবেত নারীরা।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও এর সাথে সকলের সম্পৃক্ততা ঘটলো এই সভার মধ্য দিয়ে। এর সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন লীনা বদরুজ্জামান। জেনারেল সেক্রেটারি হয়েছেন ওয়াহিদা রশীদা। নূজহাত চৌধুরীকে কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে। নির্বাহী সদস্য হয়েছেন ড. বেগম ফিরদাউস, রোজিনা সাজিদ এবং নাসরীন রহমান। তারা ৬ জনই পেশাজীবী এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংস্থার নেতৃত্বে রয়েছেন। কর্মকর্তাদের নাম ঘোষণার পর সকলে সংকল্প নেন যে, ভিন্ন পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠা সন্তানদের ভালবাসা আর মমতায় জড়াজড়ি করে নিজেদের বন্ধনে রাখতে হবে। একইসাথে বাংলাদেশ থেকে আগত মা-বাবা-ভাই-বোনদেরকেও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজে নিযুক্ত এবং প্রবীণদের একাগ্রতা ঘুচাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। মাঝেমধ্যেই সকলে একত্রিত হয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক আরো মধুর করতে হবে। উদ্ভূত যে কোন পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং নতুন প্রজন্মকে আরো উদ্যমী হবার ক্ষেত্র প্রসারিত করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে লীনা বদরুজ্জামান বলেন, বলতে দ্বিধা নেই যে, এখানকার মায়েরা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন। কেউ গৃহিনী, কেউ কর্মজীবী মা, প্রবীন মা। সকলেই এসেছেন বাংলাদেশ থেকে। অবস্থান করছেন সন্তান-স্বামীর সাথে। অনেকের সন্তান জন্মেছে এই দেশে। স্কুল-কলেজে তারা সময় কাটাচ্ছেন ভিন্ন এক পরিবেশে। বাসায় চেষ্টা করা হয় বাঙালি সংস্কৃতি জিইয়ে রাখতে। অর্থাৎ সন্তানেরা বিপরীতমুখী পরিবেশে বড় হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে মা এবং সন্তানের জন্যে উপযোগী একটি পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করতে হবে আমাদের সকলকে।
আলোচনা পর্বের সঞ্চালনা করেন এনওয়াই ইউ থেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারী রেবেকা রশীদ। ৮৩ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকা (ইডেন গার্লস কলেজ) শামসুন্নাহার হক তার বক্তব্যে বৃটিশ আমলে কলেজ ডিগ্রি লাভ করা কেমন কঠিন সময় ছিল সে স্মৃতিচারণ করেন।
উল্লেখ্য, এপ্রিলের শেষার্ধে এই এলাকার সান হোজে সিটিতে গোলাম রাব্বি (৫৯) এবং তার স্ত্রী শামীমা রাব্বি (৫৭)-কে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তাদের দুই পুত্র হাসিব (২২) এবং ওমর (১৭)-কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই দম্পতি ৩০ বছরের অধিক সময় সময় এ এলাকায় বাস করছিলেন। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই উচ্চ বেতনের চাকরি করছিলেন। একইসাথে তারা ছিলেন ধর্মভীরু। দুই পুত্রও আয়েসী জীবন-যাপন করছিলেন। জ্যেষ্ঠ পুত্র কলেজে এবং ছোট ছেলে একাদশ গ্রেডের ছাত্র। এমনি অবস্থায় দুই পুত্র কেন তাদের মা-বাবাকে হত্যা করলো-এ প্রশ্নের সঠিক জবাব কারো কাছে নেই। এ নিয়ে গোটা কম্যুনিটি হতভম্ব, বিব্রত। আর কোন পরিবারে যেন এমন করুণ পরিস্থিতির অবতারণা না হয় সে জন্যে গৃহবধূরাও সজাগ থাকতে চান। চলমান পরিস্থিতির আলোকে সন্তান এবং অভিভাবকের মধ্যে বন্ধুত্বসূলভ সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর সকলে গুরুত্বারোপ করেন। সন্তানকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে বড় হবার চমৎকার পরিবেশ ঘর থেকেই সৃষ্টি করা সহজ। শৈশব ও কৈশোর থেকে যদি তারা পারিবারিক মূল্যবোধে জাগ্রত হয় তাহলে কখনোই সমস্যা হবার কথা নয়।