রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচনাকারী ও বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যাচেষ্টার জেরে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
রাশিয়ার বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার উপর ও প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জো বাইডেনের ওই কর্মকর্তা জানান, নাভালনিকে বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টার পিছনে রাশিয়া সরকারের হাত রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য রয়েছে। গত বছর সাইবেরিয়া থেকে মস্কো আসার সময় বিমানে থাকা অবস্থায় নাভালনিকে বিষ প্রয়োগ করা হয়।
তবে মস্কো সরাসরি এই হত্যাচেষ্টার দায় অস্বীকার করেছে। তবে পশ্চিমা অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা জানান, নাভালনিকে নোভিচক নামক রাশিয়ান বিষ দিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়।
নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে কী বলছে যুক্তরাষ্ট্র?
রাশিয়ার উপর বাইডেন প্রশাসন এবারই প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় সংবাদ মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তা জানান, নাভালনিকে বিষ প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার সাথে রাশিয়ার সাত সরকারি কর্মকর্তাসহ ১৪ জনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তবে কারা কারা এর পিছনে দায়ী, সেই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে পুতিনের বেশ সুসম্পর্ক ছিলো। তবে জো বাইডেন নির্বাচনে জয়ের পর রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ আবারো সামনে চলে এসেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নও রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মঙ্গলবার জানায়, নাভালনিকে হত্যাচেষ্টার দায়ে তারা রাশিয়ার চারজন সরকারি কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়ার চার সরকারি কর্মকর্তা হলেন- রাশিয়ার প্রিজন সিস্টেমের প্রধান আলেক্সেন্ডার কালাশনিকোভ, ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির চেয়ারম্যান আলেক্সেন্ডার বাস্ট্রিকিন, প্রধান অভিশংসক আইগর ক্রেসনোভ এবং ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান ভিক্টর যলোটোভ।
এই চারজনকে ইউরোপের দেশগুলোতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
কে এই অ্যালেক্সেই নাভালনি?
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচনাকারী নাভালনি। ৪৪ বছর বয়েসী এই রাজনীতিবিদ দেশটির প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা। তিনি তরুণ বয়স থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত এবং তৃণমূল পর্যায়ে তার ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। তার রাজনৈতিক নেটওয়ার্কও বেশ শক্তিশালী এবং তরুণ ও স্বতন্ত্রদের মধ্যে তার ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে।
নাভালনি পেশায় একজন আইনজীবি। ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে অনেক আগে থেকেই পুতিনের সমালোচনা করে আসছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে।
মূলত তার সমালোচনার কারণে বরাবরই বেশ অস্বস্তিতে থাকতে হয়েছে পুতিনকে। রাশিয়ার জন্য নাভালনি পুতিনের থেকে আরো ভালো একজন শাসক হবেন বলেও মনে করা হয়।
গত বছর মস্কোতে ফেরার পথে নাভালনিকে বিষপ্রয়োগ করা হয়। আর এর জন্য দায়ী করা হয় পুতিন প্রশাসনকে। তবে এই দায় এড়িয়ে গেছে ক্রেমলিন।
উল্টো দেশে ফিরেই গ্রেফতারের মুখোমুখি হোন নাভালনি। রাশিয়ায় ফেরার পর জামিনের নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৪ সালের আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি মামলায দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল নাভালনিকে। তবে আদালত তিন বছর সাজা দিলেও কারাগারে দিন কাটাতে হয়নি তাকে। কারণ, দোষী সাব্যস্ত হলেও নাভালনির সাজা মওকুফ (‘সাসপেন্ডেড সেন্টেন্স’) করে দেওয়া হয়। কিন্তু শর্ত মোতাবেক তাকে থানায় বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সময়ে সময়ে হাজির দিতে হয়।
কিন্তু জার্মানিতে চিকিৎসাধীন থাকার কারণে থানায় উপস্থিত হতে পারেননি নাভালনি। আর এজন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে নাভালনির সমর্থকেরা বলছেন, তাকে মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণ গ্রেফতার করা হয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম