আমেরিকা

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে ২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ স্থগিত করলো ট্রাম্প প্রশাসন

হোয়াইট হাউসের দাবি প্রত্যাখ্যান করায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত ২.২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ফেডারেল ফান্ড স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তটি এসেছে এমন এক সময়, যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন এবং ইসরায়েল-গাজা সংঘাত ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে। হোয়াইট হাউস হার্ভার্ডকে একটি তালিকা পাঠায়, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, নিয়োগনীতি এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়—যার উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্পাসে অ্যান্টিসেমিটিজম দমন করা। তবে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা এসব চাপে নতি স্বীকার করবে না। হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার এক বিবৃতিতে বলেন, "সরকার যেসব পরিবর্তনের দাবি করছে, তার বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশে সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং স্বাধীনতা হরণ। আমরা আমাদের সংবিধানিক অধিকার, বিশেষ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিসর্জন দেব না।" হোয়াইট হাউসের চিঠিতে মোট ১০টি পরিবর্তনের প্রস্তাব ছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল: আমেরিকান মূল্যবোধবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত শিক্ষার্থীদের ফেডারেল সরকারকে রিপোর্ট করা প্রতিটি বিভাগে ‘ভিউপয়েন্ট ডাইভার্সিটি’ নিশ্চিত করা অ্যান্টিসেমিটিক হয়রানিতে জড়িত বিভাগগুলো নিরীক্ষা করার জন্য সরকার অনুমোদিত পক্ষ নিয়োগ শিক্ষক-কর্মীদের গবেষণাপত্রে প্লেজিয়ারিজম আছে কিনা তা যাচাই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিক্ষা বিভাগ হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ২.২ বিলিয়ন ডলার অনুদান এবং ৬০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। হার্ভার্ডের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড আরমিটেজ বিবিসিকে বলেন, “এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকস্বাধীনতা দমন করাই মূল লক্ষ্য।” হার্ভার্ড ছাড়াও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের দাবি মেনে নেয়, যখন তাদের ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড স্থগিত করা হয়। তবে সেটি নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের পুনঃনির্বাচনের পর থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর কড়া নজরদারি চলছে। গত মাসেই প্রশাসন জানায়, তারা হার্ভার্ডের ২৫৬ মিলিয়ন ডলারের বর্তমান এবং ৮.৭ বিলিয়ন ডলারের ভবিষ্যৎ অনুদান পর্যালোচনায় রেখেছে। হার্ভার্ড ইতোমধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে, যেখানে বলা হয়েছে প্রশাসন অবৈধভাবে একাডেমিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। এদিকে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের এক আয়োজক মোহসেন মাহদাভিকে নাগরিকত্ব ইন্টারভিউ চলাকালে গ্রেফতার করে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। এমনকি টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমাইসা ওজতুর্কসহ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে সম্প্রতি আটক করা হয়েছে। গ্যালাপের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমেরিকানদের আস্থা ধীরে ধীরে কমছে, বিশেষ করে রিপাবলিকানদের মধ্যে—তারা মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিক এজেন্ডা ঠেলে দিচ্ছে।

এলএবাংলাটাইমস/ওএম