হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ দুটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর দুঃখপ্রকাশ করেছেন। এসব প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইহুদি ও মুসলিম শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য ও ঘৃণার অভিযোগ উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন—তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছেন এবং শিক্ষকদের ও সহপাঠীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করেছেন।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর হাভার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের একাডেমিক কার্যক্রম ও ভর্তি নীতিমালা পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—যা ছিল হোয়াইট হাউসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি। মার্কিন প্রশাসন অভিযোগ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্যাম্পাসে বেড়ে চলা ইহুদিবিদ্বেষ দমনে ব্যর্থ হয়েছে।
ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ ঘিরে প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভের পর হাভার্ডে গঠিত হয় দুটি বিশেষ টাস্কফোর্স, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিদ্বেষমূলক আচরণ নিয়ে তদন্ত চালায়।
মঙ্গলবার দেওয়া এক চিঠিতে প্রেসিডেন্ট গারবার লেখেন, “আমরা আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য যে উচ্চ মানদণ্ড নির্ধারণ করেছি, তা সবসময় বজায় রাখতে পারিনি—এই ব্যর্থতার জন্য আমি দুঃখিত।”
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণ এবং পরবর্তীতে গাজায় ইসরায়েলি হামলার ফলে হাভার্ড ক্যাম্পাসে আগে থেকে সঞ্চিত উত্তেজনা বিস্ফোরিত হয়।
“আমাদের অনেকে জানিয়েছেন, তারা তাদের পরিচয়ের কারণে টার্গেট ও উপেক্ষিত হয়েছেন,” বলেন ড. গারবার। “হাভার্ড ঘৃণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে এবং নেবে না।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করবে এবং এমন শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেবে যারা ভিন্নমতের প্রতি সহিষ্ণু, সহানুভূতিশীল ও সৌজন্যমূলক আলোচনায় সক্ষম।
তবে এই প্রতিক্রিয়াকে হোয়াইট হাউসের চাওয়া থেকে দুর্বল বলে মনে করছে অনেকে। সরকার চায় হাভার্ড সব ধরনের জাতি, বর্ণ, জাতীয়তা বা এ ধরনের ‘প্রক্সি’ বিবেচনা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ‘যোগ্যতা ভিত্তিক’ ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করুক আগামী আগস্টের মধ্যে।
ট্রাম্প প্রশাসন হুমকি দিয়েছে—হাভার্ড এই নীতিমালা বাস্তবায়ন না করলে তাদের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি নিষিদ্ধ এবং ট্যাক্স-ছাড়ের মর্যাদা বাতিল করা হবে।
এর জবাবে হাভার্ড সরকারকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছে, ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি সরকারি গবেষণা অনুদান আটকে দেওয়াসহ এসব হুমকিকে অসাংবিধানিক এবং একাডেমিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে দাবি করেছে।
জানুয়ারি মাসে এক চিঠিতে প্রেসিডেন্ট গারবার লেখেন, তিনি নিজেও হাভার্ডে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ইহুদিবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন—যদিও তিনি কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ করেননি। তিনি বলেন, “এই অভিজ্ঞতা আমাকে বুঝিয়েছে, একজন শিক্ষার্থীর জন্য এটি কতটা ক্ষতিকর হতে পারে।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম