আমেরিকা

ফার্ম, হোটেল ও রেস্টুরেন্টে অভিবাসন অভিযান স্থগিত করল ট্রাম্প প্রশাসন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন আইনের কঠোর বাস্তবায়নে কৃষি খাত, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর, ট্রাম্প প্রশাসন এসব খাত থেকে অভিবাসন কর্মকর্তাদের অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। শনিবার এক সরকারি কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেন। হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির মূল পরিকল্পনাকারী স্টিফেন মিলার গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কঠোর অভিযান পরিচালনার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থার (ICE) কর্মকর্তারা প্রতিদিন অন্তত ৩,০০০ জনকে গ্রেপ্তার করবে, যেখানে এর আগে প্রতিদিন গড়ে ৬৫০ জন গ্রেপ্তার হতো। নিউ ইয়র্ক টাইমস অনুসারে, ICE-র হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের কর্মকর্তা ট্যাটাম কিং বৃহস্পতিবার একটি নির্দেশনায় জানান যে, মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ, কৃষিকাজ, রেস্টুরেন্ট ও হোটেল খাতের ওপর অভিযান আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা, যিনি জনসমক্ষে কথা বলার অনুমতি পাননি, তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে এই নির্দেশনার বিষয়বস্তু নিশ্চিত করেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগও এ নিয়ে কোনো আপত্তি তুলেনি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন বলেন, “আমরা প্রেসিডেন্টের নির্দেশনা মেনে চলব এবং দেশের রাস্তাগুলো থেকে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবৈধ অপরাধীদের সরিয়ে নিতে কাজ চালিয়ে যাব।” এই সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে বোঝায় যে, ট্রাম্পের গণডিপোর্টেশনের প্রতিশ্রুতি শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেললে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম Truth Social-এ লিখেন, “আমাদের অসাধারণ কৃষক ও হোটেল খাতের মানুষজন বলছেন, আমাদের অত্যন্ত কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে বহু দক্ষ, দীর্ঘদিনের কর্মী হারিয়ে যাচ্ছেন, যাদের বিকল্প খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।” তিনি আরও লেখেন, “এই কাজগুলোর জন্য এখন সেই অপরাধীরাই আবেদন করছে, যারা বাইডেনের নির্বোধ ‘ওপেন বর্ডার’ নীতির ফলে দেশে ঢুকেছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের কৃষকদের রক্ষা করতে হবে, তবে অপরাধীদের অবশ্যই আমেরিকা থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে। পরিবর্তন আসছে!” এদিকে, লস এঞ্জেলেসে ICE-র উপস্থিতি জাতীয় নজর কেড়েছে। ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা গার্ড ও মেরিন মোতায়েন করেছেন। কিন্তু দেশজুড়ে কৃষি খামার ও কারখানাগুলোতেও ICE অভিযান পরিচালনা করছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ফার্ম ব্যুরোগুলো জানায়, এই ধরনের অভিযান খাদ্য সরবরাহ চেইনে হুমকি সৃষ্টি করছে। লস এঞ্জেলেসের উত্তরে ভেনচুরা কাউন্টির স্ট্রবেরি, লেবু ও অ্যাভোকাডো খামারে অভিযান চালিয়ে ডজন ডজন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আতঙ্কে অনেক শ্রমিক কাজেও অনুপস্থিত থাকছেন। নেব্রাস্কার ওমাহাতে একটি খাদ্য প্যাকেজিং কারখানায় ICE মঙ্গলবার ৭০ জনের বেশি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক জানান, তারা স্বেচ্ছায় কর্মীদের বৈধতা যাচাইয়ের একটি সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল, তবে এখন মাত্র ৩০% সক্ষমতায় কাজ চালাতে পারছে। হোয়াইট হাউজের সীমান্ত নিরাপত্তা উপদেষ্টা টম হোম্যান জানান, “যেসব শহর আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না, সেসব ‘সাংচুয়ারি’ এলাকায় আমরা আরও বেশি অফিসার পাঠাবো।” তিনি বলেন, “জেলে যদি গ্রেপ্তার করতে না পারি, তাহলে রাস্তা থেকে ধরবো। আর রাস্তা থেকেও না পারলে, কাজের স্থানে গিয়ে ধরবো। পুরো এলাকা জুড়ে অভিযান বাড়বে।”

এলএবাংলাটাইমস/ওএম