যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক আলোচিত এক মামলায় কারেন রিড নামের এক নারীকে তার প্রেমিক, একজন বোস্টন পুলিশ অফিসারকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ থেকে দ্বিতীয় ডিগ্রির হত্যার অভিযোগে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই মামলাটি গোটা দেশের ট্রু-ক্রাইম ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছিল।
৪৪ বছর বয়সী কারেন রিডকে শুধু হত্যার অভিযোগেই নয়, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানো এবং দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করার অভিযোগ থেকেও খালাস দেওয়া হয়েছে। তবে আদালত তাকে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর (OUI) অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এই অপরাধে তাঁকে এক বছরের পর্যবেক্ষণমূলক সাজা (প্রোবেশন) দেওয়া হয়েছে, ফলে তাকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে না।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে এই মামলার প্রথম বিচার প্রক্রিয়া জুরি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় ভেঙে পড়ে। পুনরায় শুরু হওয়া বিচার প্রক্রিয়ায় কারেন রিড নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তাঁর আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, স্থানীয় পুলিশ তাকে ফাঁসিয়েছে এবং প্রকৃত অপরাধীরা এখনো ধরা পড়েনি।
বিচার চলাকালে ম্যাসাচুসেটস আদালতের বাইরে বিপুল সংখ্যক মানুষ সমবেত হন। রায় ঘোষণার সময় বাইরে থেকে উল্লাসধ্বনি শোনা যায়। অনেকেই গোলাপি পোশাক পরে রিডকে সমর্থন জানান। আদালত থেকে বেরিয়ে কারেন রিড তাঁর আইনজীবীদের জড়িয়ে ধরেন এবং কেঁদে ফেলেন। পরে বাইরে উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “জন ও’কিফের জন্য ন্যায়বিচারের জন্য আমার চেয়ে বেশি কেউ লড়েনি।”
সমর্থকরা "ফ্রি কারেন রিড" স্লোগান দেন, কেউ কেউ আমেরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে “আই লাভ ইউ” সংকেত দেন, আবার কেউ কেউ জাতীয় সংগীত "গড ব্লেস আমেরিকা" গেয়ে ওঠেন।
কারেনের বাবা উইলিয়াম রিড “সব কনটেন্ট নির্মাতাদের” ধন্যবাদ জানান, যারা এই মামলার বিষয়ে সচেতনতা বাড়িয়েছেন। ইতোমধ্যে এই মামলার ওপর ভিত্তি করে Hulu-তে একটি টিভি শো, নেটফ্লিক্সে আসছে একটি ডকুমেন্টারি, এবং বিভিন্ন পডকাস্ট তৈরি হয়েছে।
তবে নিহত পুলিশ অফিসার জন ও’কিফের পরিবার এখনো গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করেননি। মামলায় কিছু সাক্ষী এই রায়ের পর বলেছেন, “এটি একটি ভয়ানক বিচারিক ব্যর্থতা (miscarriage of justice)।”
তারা আরও বলেন, “এই মামলার বিচার পুরোপুরি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রে দুষিত হয়েছে, যেটা কারেন রিড, তার আইনজীবী এবং কিছু গণমাধ্যম ছড়িয়েছে।”
এ মামলার অন্যতম আলোচিত মুখ ব্লগার এইডেন ‘টার্টলবয়’ কার্নি, যিনি গোটা মামলায় তদন্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন এবং প্রকাশ্যে সাক্ষীদের জেরা করেন। রায়ের পর এনবিসি ১০-এ তিনি বলেন, “এই রায় যেন স্বপ্নপূরণের মতো অনুভূতি। ‘নট গিল্টি’ শব্দটা শোনার জন্য বহুদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম।”
তবে কার্নি নিজেও এখন সাক্ষী ভয়ভীতি প্রদর্শনের একাধিক মামলায় অভিযুক্ত, যা তিনি অস্বীকার করেছেন।
কারেন রিড পেশাগতভাবে ছিলেন বেন্টলি ইউনিভার্সিটিতে একজন অ্যাডজাঙ্ক্ট প্রফেসর এবং ফিডেলিটি ইনভেস্টমেন্টস-এর একজন ইকুইটি অ্যানালিস্ট। জন ও’কিফের সঙ্গে তার প্রায় দুই বছরের সম্পর্ক ছিল, যা prosecutors-এর মতে শেষের দিকে এসে হয়ে উঠেছিল অস্থির ও সংঘর্ষপূর্ণ।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতে বলেন, রিড তখন মদ্যপ ছিলেন এবং সম্পর্কে উত্তেজনা চলার সময় তিনি গাড়ি ব্যাক করে ও’কিফকে ধাক্কা মারেন। এরপর তাকে তুষারঝড়ের মধ্যে ফেলে চলে যান। অন্যদিকে, রিডের আইনজীবীরা বলেন, ও’কিফকে বাড়ির ভিতরে মারধর করে, কুকুর দিয়ে কামড় দিয়ে, পরে তুষারে ফেলে দেওয়া হয়। আর রিডকে ষড়যন্ত্র করে দোষী বানানো হয়।
চার দিনের জুরি পরামর্শের পর বুধবার বিকেলে আদালতে রায় ঘোষণা করা হয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, জুরি সদস্যদের নাম প্রকাশ করা হবে না।
এই মামলাটি শুধুই এক বিচারিক লড়াই নয়, বরং একটি সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিয়েছে— যেখানে ‘ন্যায়বিচার’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ ঘিরে তৈরি হয়েছে দুই বিপরীত শিবির।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম