আমেরিকা

চীনের আধিপত্য রুখতে বিরল খনিজ সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্র–অস্ট্রেলিয়া ঐতিহাসিক চুক্তি

চীনের বাজার আধিপত্য মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া বিরল খনিজ (Rare Earths) এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সরবরাহ বাড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির লক্ষ্য হলো দুটি দেশকে এমন এক কৌশলগত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া, যেখানে তারা চীনের ওপর নির্ভর না করেই নিজস্ব খনিজ সরবরাহ ও প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা গড়ে তুলতে পারবে। বর্তমানে চীন বিশ্বে প্রায় ৭০ শতাংশ বিরল খনিজ উত্তোলন এবং ৯০ শতাংশ প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, কম্পিউটার চিপ, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজে জানান, এই চুক্তির আওতায় প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার (অস্ট্রেলিয়ান মুদ্রায় ১৩ বিলিয়ন) মূল্যের প্রস্তুত প্রকল্পগুলোকে সহায়তা দেওয়া হবে। এসব প্রকল্প অস্ট্রেলিয়ার খনিজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতাকে আরও বিস্তৃত করবে। তিনি বলেন, “এই সমঝোতা আমাদের অংশীদারিত্বকে এক নতুন স্তরে নিয়ে যাবে।” চুক্তির কাঠামো অনুযায়ী, আগামী ছয় মাসে দুই দেশ মিলে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রকল্পে মোট ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। পাশাপাশি দুই দেশ যৌথভাবে মূল্য নির্ধারণ, অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং খনিজ খাতের কোম্পানি বিক্রির সরকারি পর্যালোচনা নীতিমালা তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় বছরে ১০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি উন্নত গ্যালিয়াম শোধনাগার নির্মাণে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া মার্কিন এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক প্রায় ২.২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ প্রকল্পগুলোকে আরও এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। এই উদ্যোগের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিল্পের কাঁচামাল নির্ভরতা কমবে এবং উভয় দেশের অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা জোরদার হবে। চুক্তির ঘোষণার পর অস্ট্রেলিয়ার বিরল খনিজ কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্য হঠাৎ বেড়ে যায়। পার্থভিত্তিক কোম্পানি Arafura Rare Earths এর শেয়ার প্রায় ৭.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, Iluka Resources এর শেয়ারও ৩ শতাংশের বেশি বাড়ে। এছাড়া Lynas Rare Earths, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে টেক্সাসে একটি প্রকল্পে কাজ করছে, তার শেয়ারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। চুক্তির সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যৌথ সাবমেরিন প্রকল্প Aukus নিয়েও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “সব কিছু সম্পূর্ণ গতিতে এগোচ্ছে।” এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছিল, তারা এই সাবমেরিন চুক্তির বিস্তারিত পর্যালোচনা করবে “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে। এতে আশঙ্কা তৈরি হয় যে, অস্ট্রেলিয়া হয়তো নির্ধারিত মার্কিন সাবমেরিনগুলো পাবে না। তবে ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, “না, তারা অবশ্যই সাবমেরিনগুলো পাচ্ছে।” এই চুক্তি শুধু অর্থনৈতিক নয়, ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন যখন বিরল খনিজ রপ্তানিতে কৌশলগত প্রভাব বিস্তার করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া এই সমঝোতার মাধ্যমে সরবরাহ শৃঙ্খলকে নিরাপদ করার চেষ্টা করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে শক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। এলএবাংলাটাইমস/ওএম