মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসের পূর্ব দিকের অংশ ইস্ট উইং সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা হবে, যাতে সেখানে একটি নতুন ২৫০ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ১৮৬ মিলিয়ন পাউন্ড) বিশাল বলরুম নির্মাণ করা যায়।
সোমবার থেকে ওই অংশের ধ্বংসকাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস-কে জানিয়েছেন, সপ্তাহের শেষ নাগাদ ইস্ট উইং পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হবে।
এই প্রকল্পটি ট্রাম্পের পূর্ববর্তী ঘোষণার চেয়ে অনেক বড় পরিসরে বিস্তৃত হচ্ছে। গত গ্রীষ্মে ট্রাম্প বলেছিলেন, নতুন বলরুম নির্মাণ “বর্তমান ভবনের কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না”। তবে এখন তিনি বলছেন, “বিদ্যমান কাঠামো সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করাই সঠিক সিদ্ধান্ত।”
বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমরা পুরো প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছ থেকেছি — এর চেয়ে বেশি স্বচ্ছতা আগে কেউ দেখায়নি।”
তবে সংরক্ষণবিদ ও বিরোধী রাজনীতিকরা এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের দাবি, হোয়াইট হাউসের মতো ঐতিহাসিক ভবনের পরিবর্তনে আরও কঠোর পর্যালোচনা হওয়া উচিত ছিল।
হোয়াইট হাউস যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হিস্টরিক প্রিজারভেশন অ্যাক্ট ১৯৬৬-এর আওতার বাইরে, ফলে সাধারণ ঐতিহাসিক ভবনের মতো জনমত যাচাইয়ের বাধ্যবাধকতা নেই। তবুও, আর্কিটেকচারাল হিস্টোরিয়ানস সোসাইটির হেরিটেজ কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রিয়া জৈন বলেছেন, “অতীতে হোয়াইট হাউসে এ ধরনের প্রক্রিয়া না মানা হবে, এটা ভাবা কঠিন। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী ও প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া, যা হাজারো ঐতিহাসিক ভবনে অনুসরণ করা হয়।”
হোয়াইট হাউস গত দুই শতাব্দী ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইস্ট উইং প্রথম নির্মিত হয় ১৯০২ সালে, এবং সর্বশেষ সংস্কার করা হয় ১৯৪২ সালে। এটি মূলত ফার্স্ট লেডির কার্যালয়, সহকারী কর্মীদের অফিস, ও বিশেষ সভা-অনুষ্ঠানের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ট্রাম্প বলেন, “ইস্ট উইং বছরের পর বছর অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। এর মূল কাঠামো অনেকটাই বদলে গেছে। অন্তত ১৫০ বছর ধরে এই পরিবর্তনের দাবি ছিল।”
তিনি আরও জানান, নির্মাণের পুরো অর্থ তিনি নিজে এবং “কিছু বন্ধু ও দাতা” বহন করছেন। এছাড়া মার্কিন সেনাবাহিনীও প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে।
সোমবার এক সামাজিক মাধ্যম পোস্টে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, “নতুন বলরুমের জন্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়েছে, মাটি খোঁড়া সম্পন্ন।” তিনি আরও বলেন, ইস্ট উইং “হোয়াইট হাউসের মূল ভবন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হলেও সংযুক্ত একটি অংশ।”
প্রশাসনের কর্মকর্তারা সিবিএস-কে জানিয়েছেন, ইস্ট উইং আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা শুরু থেকেই ছিল — নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য। তবে পরিকল্পনা পর্যালোচনার সময় বোঝা যায়, পুরো অংশটি ধ্বংস করে নতুন করে নির্মাণ করাই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের পর ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর হিস্টরিক প্রিজারভেশন নামের এক অলাভজনক সংস্থা হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি পাঠিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, “হোয়াইট হাউস জাতীয় ঐতিহাসিক নিদর্শন, তাই প্রকল্পের আগে জনসম্মুখে পর্যালোচনা প্রক্রিয়া চালানো উচিত।”
এদিকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডেমোক্র্যাট নেতা হিলারি ক্লিনটন এক্স (X)-এ পোস্ট করে লিখেছেন, “হোয়াইট হাউস ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বাড়ি নয় — অথচ তিনি সেটি ধ্বংস করছেন।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম