বাংলাদেশ

ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগের বিরুদ্ধে রাশেদের বাবার গুরুতর অভিযোগ

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী সংগঠনের যুগ্ন আহ্বায়ক রাশেদ খাঁনের পরিবারের সদস্যদের গুম করে ফেলার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

শনিবার বিকালে রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্রাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন রাশেদের বাবা নবাই বিশ্বাস।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে জড়িতদের ওপর নির্যাতন বন্ধে ও গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়।

নবাই বিশ্বাস বলেন, তার ছেলেকে গ্রেপ্তারের ঠিক আগের দিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ফোন করে তার পরিবারকে গুম করার হুমকি দিয়েছিল।

‘সেদিন দুপুরে ছাত্রলীগের সভাপতি আমাকে ফোন করে বলেন যে আপনি কেমন সন্তান জন্ম দিয়েছেন, আপনার সন্তান কুলাঙ্গার।’

‘আপনার ছেলেকে ওই পথ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন, তা না হলে আপনার পুরো পরিবার ধ্বংস করে দেয়া হবে, গুম করে দেয়া হবে।’

গত ফেব্রুয়ারিতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর নামে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের মুখে ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন কোটা থাকবে না।

সে সময় আন্দোলনকারীরা ক্লাসে ফিরলেও সম্প্রতি তারা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে অস্থিরতা দেখাচ্ছে। এর মধ্যে ২৭ জুন রাশেদ খাঁন ফেসবুকে লাইভে এসে বলেন, তার রক্ত গরম হয়ে গেছে। কঠোর কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়েছে, সবাই যেন মাঠে নামে।

একই দিন সংসদে প্রধানমন্ত্রী আবার বলেন, কোনো কোটা থাকবে না, তবে এতদিন ধরে চলে আসা পদ্ধতি বাতিলে কিছু সময় লাগবে।

তবে রাশেদ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে প্রতারণা উল্লেখ করে বলেন, ‘মনে হচ্ছে তার বাপের দেশ। সে একাই দেশের মালিক। ইচ্ছামতো যা ইচ্ছা বলবে, আর আমরা কোনো কথা বলতে পারব না।’

এই ভিডিওবার্তার পর পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়। হামলা হয় কোটা আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতার ওপর।

রাশেদ প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করেছেন, এমন অভিযোগে এক ছাত্রলীগ নেতার মামলার পর ১ জুন গ্রেপ্তার হন রাশেদ। ২ জুন তাকে নেয়া হয় পাঁচ দিনের রিমান্ডে।’

রাশেদের বাবা দাবি করেন, তার ছেলেকে গ্রেপ্তারের আগে তাকে ফোন করে সোহাগ গালিগালাজ করেন।

‘এর ঠিক বিশ মিনিট পরে ১০ টা মোটর সাইকেলে দুইজন তিনজন করে লোক আমার বাড়িতে এসে আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলেছে যে, আপনার ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। তা না হলে আপনার এই ঘাড় থাকবে না, মাথা থাকবে না। আমার স্ত্রী-কন্যাকেও তারা অপমান করেছে।’

সোহাগই যে ফোন করেছে, সেটি কীভাবে জানেন-জানতে চাইলে রাশেদের বাবা জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির ফোন নম্বর আগে থেকেই মোবাইলে সেভ করে রাখা ছিল।

রাশেদের বাবার এমন অভিযোগের ব্যাপারে সাইফুর রহমান সোহাগের কাছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ অভিযোগ পুরোটাই বানোয়াট আর সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

তিনি রাশেদকেই কখনো ফোন করেননি, আর তার বাবাকে ফোন করার প্রশ্ন আসে না বলেও দাবি করেন এ ছাত্রনেতা।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ১ জুলাই রাশেদের সঙ্গে কোটা আন্দোলনের নেতা মাহফুজ খানকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে মাহফুজের খোঁজ এখনও মেলেনি।

রাশেদ এবং তার সঙ্গে আন্দোলন করা অন্যদের মুক্তি চেয়েছেন নবাই বিশ্বাস। কোটা আন্দোলন নিয়ে অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব, আমার ছেলে চাকরির জন্য যৌক্তিক আন্দোলন করছে। যতদিন প্রজ্ঞাপন জারি না করা হবে ততদিন সে এ আন্দোলন করবে।’

রাশেদের পরিবার জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত বলে একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবাই বলেন, ‘যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়, তখন আমার বয়স ছয় মাস। আমি কখনো জামায়াত-শিবিরেরও কোনও রাজনীতি করিনি। আমাকে রাজাকার বলা হচ্ছে, আমার ছেলেকে শিবিরের কর্মী বলে অপবাদ দেয়া হচ্ছে। অথচ আমি সাধারণ দিনমজুর, কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের মানুষ করছি, শিক্ষিত করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে রাশেদের মা, বোন, স্ত্রীসহ  কোটা আন্দোলনের কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

 এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি