বাংলাদেশ

অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকার গাড়ি

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৮২টি গাড়ি জব্দ করেছিল শুল্ক গোয়েন্দারা। জব্দকৃত এসব গাড়ির মূল্য ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু এতদিনেও গাড়িগুলোর ব্যাপারে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে অবহেলা আর রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে গাড়িগুলো।

জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুল্ক ফাঁকিসহ নানা জালিয়াতির অভিযোগে ৮২টি গাড়ি জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

যার মধ্যে রয়েছে- পাজোরো, টয়োটা, বিএমডব্লিউসহ অত্যাধুনিক মডেলের বিভিন্ন গাড়ি। জব্দকৃত এসব গাড়ি রাখা হয়েছে বিভিন্ন কাস্টম হাউসে।
ঢাকা কাস্টমস হাউসের ভবনের পেছনে পড়ে থাকা দুটি গাড়ি। ছবি: প্রিয়.কম

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি গাড়ি রয়েছে ঢাকা কাস্টম হাউসে। সেখানে খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে গাড়িগুলো। রোদ বৃষ্টিতে পড়ে থাকায় রঙ চটে যাচ্ছে। যন্ত্রাংশগুলোতে মরিচা ধরছে। কোনো শেড বা অবকাঠামো না থাকায় বিভিন্ন সময়ে জব্দ করা বিলাসবহুল গাড়ি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি।

ঢাকা কাস্টমস হাউজে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের পেছনে মসজিদের পাশে খোলা আকাশের নিচে অযত্ন-অবহেলায় অর্ধ শতাধিক গাড়ি পড়ে নষ্ট হচ্ছে। সেখানে হয় কোনো গাড়ির বাতি নষ্ট হয়ে গেছে কিংবা কোনটির ভেঙে গেছে কাচ। আবার কয়েকটিতো মরিচা পড়ে প্রায় ধ্বংস হওয়ার উপক্রম। অথচ এইসব বিলাসবহুল গাড়িগুলো নিলামে তুললে সরকার অনেক টাকা রাজস্ব পাবে।

শুল্ক গোয়েন্দারা মনে করছেন, বিকল ও নষ্ট হওয়া গাড়িগুলো প্রকৃত মূল্যের ৬০ শতাংশ না হলে নিলামে তোলা যায় না। ফলে নিলামে তুললেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এ পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে জব্দ গাড়িগুলো আদালতের মাধ্যমে সরকারি কাজে (বিভিন্ন দফতরে) ব্যবহার করার জন্য উদ্যোগ নেওয়ারও কথা ভাবছেন তারা।

গত ৫ জুলাই রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরের একটি রাস্তায় তিন কোটি টাকা মূল্যের নম্বরপ্লেটহীন টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮ মডেলের একটি গাড়ি ফেলে যান ব্যবহারকারী। সেই সময় তিনি গাড়ির ভেতরে একটি চিরকুটও লিখে রেখে যান। তাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় গাড়িটি রাস্তায় রেখে গেলাম। কিন্তু গাড়িটির আমদানিকারক আমি নই। দেশের আইনের প্রতি আমি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল; আমদানিকারককে আইনের আওতায় নেওয়ার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কাছে বিনীত অনুরোধ রইল।’

এ ঘটনার ঠিক আগের দিন সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) অভিযান চালিয়ে বিলাসবহুল ১১টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছিল। যার মূল্য ছিল ৩০ কোটি টাকা। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে হাতিরঝিল এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় চার কোটি টাকা মূল্যের পোরশে কায়ানে ৯৫৫ মডেলের একটি গাড়ি জব্দ হয়েছিল। ওই মালিকও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে অভিযুক্ত গাড়িটি ফেলে গিয়েছিলেন।

সব মিলিয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত ১৩টি গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সাথে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত শুল্ক গোয়েন্দারা ৮২টি গাড়ি জব্দ ও উদ্ধার করে। উদ্ধার বা জব্দকৃত এসব গাড়ির মধ্যে শুধু দেশীয় কোটিপতিই নয়, এরমধ্যে কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত, ইউএনডিপির প্রতিনিধিসহ বিদেশি নাগরিকদের গাড়িও রয়েছে।

২০১৫ সাল থেকে যাদের গাড়ি শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে জব্দ করা হয়েছিল তারা হলেন- মিসরের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জতের রেঞ্জ রোভার, ধনকুবের প্রিন্স মুসা বিন শমসেরের রেঞ্জ রোভার জিপ, আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের বিএমডব্লিউ, আশিকুল হাসিব তারিকের মিতসুবিশি, বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি মিজ মির্ভা তুলিয়ার টয়োটা রেভ-৪ ও মৃদুলা সিংহের টয়োটা প্রিমিও, আইএলওর কর্মকর্তা মি. ফ্রান্সিস দিলীপের টয়োটা সিডান ও জুনিয়র প্রফেশনাল মিজ নিস জ্যানসেনের পাজেরো জিপ, ইউএনডিপি প্রতিনিধি স্টিফেন প্রিজনারের মিতসুবিশি, সন্তোস প্রতাপের বিএমডব্লিউ, উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিক মি. হ্যান সন ইকের ঘোস্ট মডেলের রোলস রয়েসসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গাড়ি।

এসব গাড়ি শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়েই দেশে আনা হয়েছিল। তার মধ্যে কয়েকটি গাড়ি বিদেশি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনলেও পরে সেগুলো আর ফেরত নেয়নি। জব্দকৃত এসব গাড়ির আনুমানিক মূল্য ৩১১ কোটি পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার ৯৭৪ টাকা বলে জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গত কয়েক বছরেও এসব গাড়ি নিলামে তোলা হয়নি বা তার মালিককে ফেরত দেওয়া হয়নি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, এসব মামলায় জটিলতা রয়েছে। এ কারণে গাড়িগুলো বুঝেও পাচ্ছেন না মালিকরা।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. শহীদুল ইসলাম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জব্দকৃত গাড়িগুলো ঢাকা কাস্টমসহ বিভিন্ন কাস্টমস হাউজে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন তারাই।’

এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি