বাংলাদেশ

পদ্মার ভাঙনে ভিটাহীন ৪০০ পরিবার, ঝুঁকিতে ১৫০০

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের পর এবার দৌলতদিয়ায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুই সপ্তাহে প্রায় ৪০০ পরিবারের বসতভিটা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার।

১৮ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার দৌলতদিয়ার ঢল্লাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় জামে মসজিদের কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, দিন শেষে পুরো মসজিদ নদীগর্ভে চলে যাবে। আগের দিন সোমবার মসজিদ থেকে কয়েক গজ দূরেই ছিল ঢল্লাপাড়া মাজার শরীফ। সোমবার সন্ধ্যার পর তা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। গ্রামের মানুষ সব বাড়িঘর দ্রুত সরিয়ে ফেলছে। নদীর কাছে অধিকাংশ বসতভিটা শূন্য পড়ে আছে।

মসজিদের পাশে গাছ কাটছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। তাদের সর্দার মাইনদ্দিন শেখ (৬০) জানান, তারা ৯ জন শ্রমিক পাঁচ দিন ধরে গাছ কাটছেন। কিন্তু ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারছেন না। সোমবার অনেক গাছ নদীতে চলে গেছে।

কথা হয় বাড়ি ভাঙন দেখতে গোয়ালন্দ থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. ইউনুস আলী শেখের সঙ্গে। তিনি এলাকায় এসে প্রথমেই বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করে নেন। বলেন, ‘বড় ভাই, চাচারা সবাই এখানে থাকতেন। নদীতে ভাঙনের খবর পেয়ে ছুটে এসেছি। মনে হয়ে আজকের মধ্যে সব নদীতে যাবে। বাবা-মায়ের কবর হয়তো আর জিয়ারত করতে পারব না। তাই শেষবারের মতো কবর জিয়ারত ও ভাই-চাচাদের খবর নিতে আসলাম।’

নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে রাস্তার ইট তুলে নেওয়া দেখছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জলিল সরদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা নদীগর্ভে চলে গেছে। শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও একটি মাজার বিলীন হয়েছে। ঢল্লাপাড়া জামে মসজিদও বিলীন হওয়ার পথে। নদী থেকে কয়েকশ গজ দূরে তার বাড়ি। কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবেন সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাপক ভাঙনে ঢল্লাপাড়া, আফছের শেখের পাড়া ও লালু মণ্ডল পাড়ার প্রায় ৩০০ পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়েছে। সেই সঙ্গে ১০০ পরিবার ভিটা ছেড়ে চলে গেছে। এ ছাড়া ছাত্তার মেম্বার পাড়া, সিদ্দিক কাজী পাড়া ও মজিদ শেখের পাড়ার প্রায় দেড় হাজার পরিবার ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী এবং জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু নাসার উদ্দিন বলেন, ‘দৌলতদিয়ায় বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার ৭০০ পরিবারের তালিকা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে তাদের মধ্যে ত্রাণের চাল ও শুকনা খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’