বাংলাদেশ

এদেশের নামি দামিরা মানুষকে মানুষ মনে করে না : রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেছেন, ‘এ দেশের রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, বড় বড় আমলা, বিচারপতি পুলিশের আইজি, সেনাবাহিনী প্রধান, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারী, কেবিনেট সেক্রেটারী, সচিব এবং এই ধরণের যারা আছে তারা একটু বড় হইয়া গেলে, নামিদামি হয়ে গেলে, মানুষকে আর মানুষ মনে করে না। এটা একদম ঠিক না। মানুষকে মানুষ মনে করতে হবে এবং জনগনের প্রতিনিধি যারা তাদেরকে আরো বেশি মানুষকে মানুষ মনে করতে হবে। কারণ জনগনের ভোটেই তারা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। জনগনের ভোটে প্রতিনিধি হইয়া তাদের উপরেই আবার মাতাব্বরি দেখাইবা বেডাগিরি দেখাইবা এটাতো হতে পারে না। জনগনের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি রাজনীতি করে যে এতো বড়ো হয়েছি এর অবদান কিশোরগঞ্জের সাধারণ মানুষের। আমার রাজনীতির তীর্থস্থান, পীঠস্থান যাই বলেন এ শহরের প্রতিটি দোকানদার এবং যারা জুতা সেলাই করতো, জুতার মধ্যে কালি করতো, পান চুন বিক্রি করতো, সব দোকানদারের কাছ থেকে আমি পাকিস্তান আমলে চান্দা তুলে রাজনীতি করেছি। কিশোরগঞ্জের প্রতিটি মানুষ, তাদের কাছে আমি ঋনী। কিশোরগঞ্জের রিকশাওয়ালাদের কাছে আমি ঋনী, কারণ রাজনীতি করার সময় যখন আমি হরতাল করেছি তখন তারা আমার কথায় রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামে নাই। উপরন্তু তারা আমাকে পয়সা দিয়ে সাহায্য করেছে। এরজন্য আমি কিশোরগঞ্জের মানুষের কাছে ঋনী। সাধারণ মানুষের কাছে ঋনী। তাদের প্রতিটি সুখ দুঃখে আমি পাশে থাকতে চাই। আমি কোনোমতেই অস্বীকার করতে পারবো কিশোরগঞ্জের মানুষের অবদানের কথা। এরজন্যই আমি মনে করি আমি যে রাষ্ট্রপতি, এই যে আমার সম্মান, এটা কিশোরগঞ্জবাসীর সম্মান, এটা তাদেরই পাওনা।’

সোমবার বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের সরকারি গুরুদয়াল কলেজ মাঠে কিশোরগঞ্জবাসীর উদ্যোগে রাষ্ট্রপতিকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় কিশোরগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে মোঃ আবদুল হামিদকে এই গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।

তার নিজ জেলাবাসীর সংবর্ধনার জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমার নিজের কিশোরাগঞ্জ আপন কিশোরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ আমার পরম আত্মীয়, আত্মার আত্মীয়। আজকে এই মাঠে এসে আমার অতীতের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। এই যে গুরুদয়াল কলেজ এ মাঠ থেকে আমার রাজনীতি শুরু। যদিও স্কুলে থাকতে আমি রাজনীতি করেছি দুই বছর। আমার রাজনীতির নেতৃত্ব কিন্তু এই গুরুদয়াল কলেজ থেকেই শুরু।

১৯৬১ সালে আমি মেট্রিক পাস করে এই গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হই। এই ৬১ সালে তদানিন্তন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের ফোটো ভাঙ্গা দিয়ে আমি রাজনীতি শুরু করেছিলাম। আমার রাজনীতির ৫৮ বছর হয়ে গেছে। আমার পড়াশোনা স্কুল কলেজ হলেও এই কিশোরাগঞ্জের মাটি, এই কিশোরগঞ্জের মানুষ, আমার রাজনীতির বিশ্ববিদ্যালয়। এই মানুষের কাছে আমি রাজনীতি শিখেছি। আমি রাজনীতি করাকালীন এ কিশোরগঞ্জে আমি রিকশা সংগঠন করেছি, রিকশাওয়ালা ভাইদের নিয়েও আমি রাজনীতি করেছি। মুটে, শ্রমিক, ঠেলা গাড়ি শ্রমিক, এদেরকে নিয়েও আমি রাজনীতি করেছি, সংগঠন করেছি। হোটেল, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, তাদেরকে নিয়ে আমি রাজনীতি করেছি। প্রতিটি শ্রমজীবি মানুষকে নিয়ে আমি রাজনীতি করেছি।’

রাষ্ট্রপতি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার মনে পড়ে এই গুরুদয়াল কলেজের তখন প্রিন্সিপাল ছিলেন ওয়াসিমুদ্দীন স্যার। এই ওয়াসীমুদ্দীন স্যারসহ যারা তখন শিক্ষক ছিলেন, কেন জানি না শিক্ষকরা সাধারণত ভালো ছাত্রদেরকে পছন্দ করেন, কিন্তু আমি ভালো ছাত্র না হওয়া সত্ত্বেও কেন জানি আমাকে পছন্দ করতেন তারা। সেটা আমি আজো জানি না। তারা আমাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। এই কিশোগঞ্জবাসীর দোয়ায় আমার মতো একজন সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের দুই দুইবার রাষ্ট্রপতি হয়েছি। এটা আমার বড়ো পাওয়া এবং আমি মনে করি এ পাওয়া আমার না, সমস্ত কিশোরগঞ্জবাসীর এই পাওয়া। আমি জানি কিশোরগঞ্জবাসী আমার জন্য দোয়া করেছে। তারা আমার সাফল্য কামনা করেছে। তাদের আন্তরিক কামনাতেই হয়তো আমি দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি হয়েছি। আসলে এটা চরম পাওয়া এইজন্য যে, এ উপমহাদেশে এরকম দ্বিতীয় নজির আর নেই।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আজকে আমার ছোট ভাই সৈয়দ আশরাফ আমি প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সময় যে গণ-সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিলো কিশোরগঞ্জের পুরাতন স্টেডিয়ামে সে সংবর্ধনায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। আজকে আমার দুঃখ লাগে তিনি আজ পাশে নাই কারণ তিনি অসুস্থ। তবে আজকে আমি আশা করি, পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আপনারাও করবেন তিনি যেনো অচিরেই আমাদের মাঝে ফিরে আসে। এবং আবারো যেনো রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহন করতে পারে।’

রাষ্ট্রপতির বক্তব্য দেয়ার আগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও এলাকার জনপ্রতিনিধিরা কিশোরগঞ্জের উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেন।

এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি