বাংলাদেশ

নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োগের সুযোগ হারাবে বাংলাদেশ: জাতিসংঘ

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে, এবং এনিয়ে নিজ দেশে জনগনের মানবাধিকার হরণে বাহিনী সমুহ জড়িত হলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োগলাভের সুযোগ হারাবে বাংলাদেশ। গত শুক্রবার ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে টেলিফোনে ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী এবং ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সিপ্পোকে জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়।

নির্দেশনা অনুযায়ী জাতিসংঘ মহাসচিবের এই চরম বার্তা শেখ হাসিনার সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমুহকে জানিয়ে পত্র দেয়া হয়েছে। দু’দিন সরকারী ছুটির পরে সোমবার এই খবর সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বিভাগের কতিপয় উর্ধতনদের মধ্যে সীমিত আকারে জানাজানি হলে চ্যাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে পুলিশের মধ্যমপর্যায়ে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সারা দেশে বিরোধী দলের উপর গণহারে ধরপাকড়. প্রহার, এমনকি গুম করার মত ঘটনার সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমান রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানবাধিকার লংঘনের মত গুরুতর অপরাধের সঙ্গে আগে থেকেই জড়িত। এ নিয়ে জাতিসংঘে ব্যাপক তথ্যাদি জমা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন নানাবিদ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও ভোট গ্রহণকারী কতৃপক্ষ, প্রশাসন, এবং আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সমুহ সরকারের কতৃত্বেই পরিচালিত হচ্ছে। ফলে সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা বিরোধী দলের উপর ব্যাপকভাবে হামলা চালাচ্ছে, তাদেরকে মাঠে নামতেই দিচ্ছে না। সরকারের নির্দেশিত বাহিনী এবং প্রশাসন শাসক দলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। উপরন্তু আইনের অপপ্রয়োগ করে পুলিশ বাহিনী বিরোধীদের ওপর বলপ্রয়োগ করছে অবারিতভাবে। নির্বাচনে বিরোধী দল সরকারী দলের সমান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেনা। উপরন্তু রাষ্ট্রীয় বল প্রয়োগ করে বিরোধী দলের সভাসমাবেশগুলি ভেঙে দেয়া হচ্ছে, পোস্টার লাগানো ও লিফলেট বিতরণে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে বিরোধী দল প্রচার প্রচারণার সমান সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে। এমনকি বিরোধী দলের দেড় ডজন প্রার্থীকে বিনা কারণে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এনিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। বহু প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে আদালতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ ভোট ডাকাতি এবং ফলাফল জালিয়াতির পরিকল্পনা করছে, এমন খবর বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সার্বিকভাবে একিপেশে নির্বাচনের সকল আয়োজন সম্পন্ন।

নির্বাচন কমিশনের সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভাব, বিরোধী দলের উপর নির্যাতন নিপিড়নের ফলে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি চরম হুঁশিয়ারী বার্তা এলো।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বয়কটের মুখে একতরফা সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টাকালে রাজনৈতিক সংকট ও হানাহানি হতে থাকে, এমন অবস্থায় জাতিসংঘের ঢাকাস্খ প্রতিনিধি রেনাটা লক ডেসালিয়নের মাধ্যমে শান্তিরক্ষী দলে নিয়োগে কড়াকড়ির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ- এমন কঠোর বার্তা প্রাপ্তির অযুহাত দেখিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজ উদ্দিন আহমেদকে চাপ দিয়ে দেশে জরুরী অবস্থা জারী করেছিলেন, যা ১/১১ বা ওয়ান ইলেভেন নামে পরিচিতি লাভ করে।

এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি