বাংলাদেশ

সিলেটে ‘৩ দাবি’ নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ

যোগাযোগের তিন দাবিতে আটকে আছে সিলেট। দীর্ঘদিন ধরে এই তিনটি দাবি জানিয়ে আসছে সিলেটিরা। বিদেশের মাটিতেও এই তিন দাবি নিয়ে সোচ্চার প্রবাসী সিলেটিরা। বিভিন্ন ফোরাম থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে ওই দাবি। কিন্তু দাবিগুলোকে কখনোই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এ কারণে এবার বাস ও ট্রেন চলাচলে বিপর্যয় দেখা দেয়ার পর সাধারণ মানুষের মুখে মুখে উঠে এসেছে দাবিগুলো। এই তিনটি দাবির মধ্যে রয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে রূপান্তর, সিলেট-আখাউড়া ডাবল রেললাইন ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, কার্গো হাউজ ও নতুন টার্মিনাল নির্মাণ। এই দাবিগুলো নিয়ে অনেক আগেই সিলেটে সেমিনারের আয়োজন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা।

বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে নিয়ে তারা এ দাবির সমর্থনে সিলেট ও নিউ ইয়র্কে বৈঠকও করেছিলেন। এসব দাবি জানিয়ে বার বার সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পত্র দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে শাহজীবাজারে ব্রিজ ভেঙে এক সপ্তাহ সড়ক পথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলো সিলেট। কুলাউড়ার বরমচালে ট্রেন দুর্ঘটনার পর রাজধানী ঢাকা সহ গোটা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলো। এই অবস্থায় যোগাযোগ নিয়ে নতুন করে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সিলেটে। সোচ্ছার হয়ে উঠেছে সচেতন জনগণ। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সিলেট-ঢাকা মহাসড়কটি সর্বশেষ সংস্কার করেছিলেন। তিনি শেরপুর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত বাইপাস সড়কও নির্মাণ করে দেন। কিন্তু ওই সড়কটিও বর্তমানে যানবাহনের চাপে পড়েছে। এ কারণে সিলেটবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে রূপান্তর করা। বর্তমান সরকারের তরফ থেকে এই সড়ক চার লেনে রূপান্তরের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এখনো কাজ শুরুর তেমন অগ্রগতি নেই। গত বছর সিলেট সফর কালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জন্য ১৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেলের ডাবল লাইন করা হয়েছে। নতুন লাইন নির্মাণ ও পুরাতন লাইনকে সংস্কার করা হয়েছে। এ কারণে দাবি তোলা হয়েছে সিলেট-আখাউড়া ১৩৫ কিলোমিটার রেললাইনের ডাবল লাইন নির্মাণ। এই লাইনে প্রায় ৯৫টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। বৃটিশ আমলে নির্মিত অনেক সেতু এখন ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও রেল বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এর মধ্যে কয়েকটি সেতু ও কালভার্ট এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, বাঁশ দিয়ে আটকানো স্থান দিয়ে কোথাও কোথাও রেল চলাচল করছে। কুলাউড়ার বরমচালের দুর্ঘটনার পর সিলেট-আখাউড়া সড়কে করুণ চিত্রটি ফুটে উঠেছে। ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর উপর স্থাপিত রেল সেতুটি শতবর্ষী। বৃটিশ আমলে নির্মিত এই সেতুটিতে ছোটো-খাটো সংস্কার করলেও ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বার বার অবগত করা হলেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অন্যদিকে আকাশ পথে উন্মুক্ত হচ্ছে সিলেট। কিন্তু এখনো সেটি সহজ হয়নি। অনেক দাবির প্রেক্ষিতে গত রমজান মাসে সিলেট-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। ইউএস-বাংলাও সন্ধ্যায় একটি ফ্লাইট চালু করেছে। ঢাকা-সিলেট রুটে একাধিক ফ্লাইট চালুর পর এখন যাত্রীরা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক রুটে বাংলাদেশ বিমান ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন সিলেটে ফ্লাইট চালু করেনি। তবে, ফ্লাইট দুবাই চালু করেছিলো, কিন্তু নানা কারণে তারা ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। ওসমানী বিমানবন্দরে বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিস সমস্যার কারণে এখানে ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ বিমানবন্দরের উন্নয়নের জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প ছাড় দেন। এর আগে শত কোটি টাকা ব্যয়ে তিনি রিফিউলিং সিস্টেম চালু করেন। এখন দাবি হচ্ছে- ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করা, ১০টি বোর্ডিং ব্রিজ সংবলিত একটি টার্মিনাল, একটি কার্গো হাউজ নির্মাণ। এই দাবিগুলো নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন নির্বাচনের আগে নিজেও সোচ্চার ছিলেন।

এদিকে, সিলেটের রেল, সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অতিসত্বর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সিলেট উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের স্মারক সংরক্ষণ পরিষদ নেতারা। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সিলেট-ঢাকা চার লেন সড়ক প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথ দুই লাইনকরণ ও নতুন করে রেলপথ, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ, সিলেট-ঢাকা বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বৃদ্ধি, সিলেট-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ফ্লাইট, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিআরটিসি বাস ও সিলেট-ময়মনসিংহ আন্তঃনগর ট্রেন চালু এবং সিলেট অঞ্চলের সকল নদী ও খাল খননের মাধ্যমে নৌপথ সচল করার দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন, সিলেট উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের স্মারক সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক আল আজাদ। সদস্য সচিব সাংস্কৃতিক সংগঠক শামসুল আলম সেলিমের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সদস্য রুহুল কুদ্দুছ বাবুল। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক যাত্রী কল্যাণ পরিষদের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট রাজউদ্দিন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সভাপতি ডা সফির উদ্দিন আহমদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আশরাফুর রহমান, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সিলেট বিভাগ গণদাবি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শফিকুর রহমান, ছাতক সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহিদ কণা মিয়া, প্রবাসী সংগঠক মাসুক ইবনে আনিস, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির মহানগর সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল জলিল, বৃহত্তর সিলেট গণদাবি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, মৌলভীবাজার সমিতির উপদেষ্টা চৌধুরী আতাউর রহমান আজাদ প্রমুখ। মানববন্ধনে অবিলম্বে সিলেট-জামালগঞ্জ-নেত্রকোনা-ঢাকা মহাসড়ক নির্মাণ, ডাবর-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি সড়কের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা, ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেলপথ সমপ্রসারণ, রশিদপুর-জগন্নাথপুর সড়ক অবিলম্বে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় নেয়া এবং গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার ভায়া আমুড়া-বহরগ্রাম সড়কে বহরগ্রাম-শিকপুর ফেরি চালুরও দাবি জানানো হয়।
সূত্র: মানবজমিন