প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে সেনা সদস্যদের সকল কাজে এগিয়ে
যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রার
অংশীদার। আপনারা সর্বোচ্চ দেশপ্রেম ও কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও সামনের
দিকে এগিয়ে নেবেন। আমার প্রত্যাশা আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিশ্বের বুকে একটি
মর্যাদাপূর্ণ বাহিনীতে পরিণত করবেন। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআর সদর দফতরে স্বতন্ত্র
প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের ৪০তম বার্ষিকী-২০১৫ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ভারপ্রাপ্ত
কমান্ডডেন্ট কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর হারুন এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি
আপনাদের কল্যাণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে আমার ভাইদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে চলেছি। আমার
প্রত্যাশা, আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাপূর্ণ বাহিনীতে পরিণত
করবেন। তিনি বলেন কার্যকর কমান্ড চ্যানেল সেনাবাহিনীতে যে কোন কাজ সমাধানে মুখ্য ভূমিকা
রাখে। নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে সকল কাজে আপনারা এগিয়ে যাবেন এই আমার প্রত্যাশা।
একই সাথে আমি আশা করি, সকল কমান্ডারগণও তাদের অধীনস্থদের প্রতি সব সময়ই প্রয়োজনীয়
মনোযোগ বজায় রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক
আহমেদ সিদ্দিক, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ ও
সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে
প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। আমি আশা
করি, আপনারা তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পেশাগত অনুশীলন
চালিয়ে যাবেন। স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন
জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ‘স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট
গার্ড রেজিমেন্ট’ এর ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে
আমি অত্যন্ত আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী গভীর শ্রদ্ধার সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, যার দুরদর্শিতা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৭৫
সালের ৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। কালের পরিক্রমায় প্রেসিডেন্ট গার্ড
রেজিমেন্ট আজ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। দক্ষ নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সুনাম
সর্বজনবিদিত। তিনি বলেন, সরকার-প্রধান হিসেবে এ রেজিমেন্টের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক
রয়েছে। দায়িত্বপালনকালে প্রতিদিনই গার্ডস সদস্যদের সাথে আমার দেখা হয়। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়
উপেক্ষা করে আপনারা বিশ্বস্ততা, আনুগত্য, শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের সাথে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন
করেন। এটা আমাকে আশ্বস্ত করে; মুগ্ধ করে। আপনারা সকলেই বিশেষভাবে নির্বাচিত এবং
সু-প্রশিক্ষিত। আপনাদের কর্মদক্ষতা, কর্তব্যপরায়ণতা ও একাগ্রতাই এর প্রমাণ। শেখ হাসিনা বলেন,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই এ রেজিমেন্টের উন্নয়নে কাজ
করেছে। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারই সর্বপ্রথম গার্ডস সদস্যদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা
করে, ‘গার্ডস ভাতা’র প্রচলন করে। ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল আমরা ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানকে
‘স্বতন্ত্র’ মর্যাদা প্রদান করি। একই বছর ৭ অক্টোবর পিজিআর-এর নতুন সাংগঠনিক কাঠামোর
অনুমোদন দেই যা এখন পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে আপনাদের জনবল ২ হাজারে উত্তীর্ণ
হয়েছে। তিনি বলেন, জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি আমরা পিজিআর-এর জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন,
বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, এপিসিসহ আধুনিক সরঞ্জামাদির সরবরাহ বহুগুণে বৃদ্ধি করেছি। এরফলে
রেজিমেন্টের সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্তব্য পালন সহজ হয়েছে। সদস্যদের মনোবল আরও দৃঢ় হয়েছে
বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, গণভবনে ১৫০ জন গার্ডস সদস্যের জন্য বসবাসযোগ্য একটি
ব্যারাক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এরফলে গণভবনে আপনাদের দীর্ঘদিনের আবাসিক সমস্যার
অনেকটাই সমাধান হবে বলে আমার প্রত্যাশা। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের আগ পর্যন্ত সৈনিকদের
দুপুরের খাবারে রুটি দেয়া হতো। আমরা ১৯৯৭ সালে দুপুরে রুটির পরিবর্তে ভাত চালু করি।
সেনাবাহিনীর জেসিও ও অন্যান্য পদবীর সৈনিকদের জন্য ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে শুকনা
ও তাজা রশদ বৃদ্ধি করে নতুন রেশন স্কেল প্রণয়ন করি। আমরা গতবছর পহেলা এপ্রিল থেকে
সেনাবাহিনীর জেসিওদের ১ম শ্রেণী (নন ক্যাডার) এবং সার্জেন্টদের ২য় শ্রেণীর পদমর্যাদায় উন্নীত
করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ৫টি সেনানিবাসে আর্মি মেডিক্যাল কলেজ, ৩টি সেনানিবাসে আর্মি
ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২টি সেনানিবাসে আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
প্রতিষ্ঠা করেছি। আরও ৫টি ডেন্টাল কলেজ ও ৫টি নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে।
আর্মি মেডিক্যাল কোরে মহিলা সৈনিক অন্তর্ভুক্তি সেনাবাহিনীতে নারীর সামর্থ্য বৃদ্ধি করছে।
সিএমএইচগুলোর আধুনিকায়ন করেছি। উন্নত প্রযুক্তির মেডিক্যাল সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে।
দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে। এর ফলে আপনাদের ও আপনাদের
পরিবারের সদস্যরা উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, সেনা সদস্যদের বহু প্রতীক্ষিত আবাসন
সমস্যা নিরসনে বিশ্বমানের উন্নত আধুনিক ব্যারাক হাউজ নির্মাণ করেছি। দৃষ্টিনন্দন আবাসিক
এলাকা গড়ে তুলেছি। ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছি। ফোর্সেস গোল অনুযায়ী সেনাবাহিনীর
উন্নয়ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীতে আমরা নতুন নতুন ডিভিশন গঠন করেছি। জালালাবাদ
সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং নিরাপত্তার
জন্য ৯৯ ক¤েপাজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং এর অধীন ১টি
আর্টিলারি ব্রিগেড, ১টি পদাতিক ব্রিগেড, ১টি আর্টিলারি ইউনিট এবং ২টি পদাতিক ব্যাটালিয়ন
আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরও ১টি পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস স্থাপন করার পরিকল্পনাও
আমাদের রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীর জন্য উন্নত অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রক্রিয়া
চলমান রয়েছে। ২০১৬ সালের মধ্যে দুটি এফএম-৯ সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল রেজিমেন্ট বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হবে। মেইন ব্যাটেল ট্যাংক, সেল্ফ প্রোপেল্ড গান সিস্টেম, উইপন
লোকেটিং র্যাডার, এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ারসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধ
সরঞ্জাম আমরা সেনাবাহিনীতে সংযোজন করেছি। তিনি বলেন, এর ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর
নিজস্ব সমর শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আরও পেশাগত দক্ষতার
সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারছে। শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান
বর্তমানে প্রথম। বর্তমানে প্রায় ৯ হাজার ৫৯৩ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বের ১০টি দেশে মিশনে অংশগ্রহণ
করছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার আপনাদের কল্যাণে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যাতে
আপনাদের চাকরি ও পারিবারিক জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়। দেশ ও জাতির সেবায় আপনারা যাতে
আরও ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত হন। শেখ হাসিনা বলেন, শুধু সামরিক বাহিনী নয়, আমরা প্রতিটি
সেক্টরে বাংলাদেশকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ২০২১ সালে
বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করব। তার আগেই আমরা সে লক্ষ্য পূরণ করতে যাচ্ছি।
বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে নি¤œ-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ আমরা মধ্য
আয়ের দেশের কাতারে উঠে গেছি। এটি আমাদের বিরাট অর্জন। আমরা বাংলাদেশকে আরও অনেক
উচ্চতায় তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে
দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৪ মাকিন ডলারে। দারিদ্র্যের হার কমে ২২.৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
আমাদের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩০.২ ভাগ। বিনিয়োগ বেড়েছে ২৮.৯৭ ভাগ। আমাদের রিজার্ভ ২৫
বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। এখন খাদ্য
উৎপাদন ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। শেখ হাসিনা দেশের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে উন্নয়নের
কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের ৭০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। দেশের জনগণ তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ
সেবা গ্রহণ করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা। আমরা ৫২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার গড়ে
তুলেছি। আমরা এমজিডির ১ থেকে ৬ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। জাতিসংঘসহ
আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করছে। পুরস্কৃত করছে। তিনি বলেন, আমরা সমুদ্রে
বিজয় অর্জন করেছি। প্রতিবেশী ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন
করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সাথে রয়েছে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক।
যখনই আপনাদের মাঝে আসি তখন আমার ভাইদের কথা মনে পড়ে যায়। আমার দুই ভাই শেখ
কামাল ও শেখ জামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। দশ বছরের শিশু রাসেলও
সেনাবাহিনীর অফিসার হবে বলে প্রায়শঃই ইচ্ছা প্রকাশ করতো। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার
সে স্বপ্ন নিঃশেষ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী সেনাবিহনীর পূর্বসূরি যারা কর্তব্য পালনকালে সর্বোচ্চ
আত্মত্যাগের মাধ্যমে এ রেজিমেন্টের ইতিহাসকে গৌরবোজ্জ্বল করেছেন এবং আমি প্রেসিডেন্ট গার্ড
রেজিমেন্টের সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার
প্রধানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আপনাদের একাগ্রতা ও আত্মোৎসর্গের মনোভাব
যেন চিরদিন বজায় থাকে এ প্রত্যাশা করছি।
যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রার
অংশীদার। আপনারা সর্বোচ্চ দেশপ্রেম ও কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও সামনের
দিকে এগিয়ে নেবেন। আমার প্রত্যাশা আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিশ্বের বুকে একটি
মর্যাদাপূর্ণ বাহিনীতে পরিণত করবেন। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআর সদর দফতরে স্বতন্ত্র
প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের ৪০তম বার্ষিকী-২০১৫ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ভারপ্রাপ্ত
কমান্ডডেন্ট কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর হারুন এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি
আপনাদের কল্যাণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে আমার ভাইদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে চলেছি। আমার
প্রত্যাশা, আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাপূর্ণ বাহিনীতে পরিণত
করবেন। তিনি বলেন কার্যকর কমান্ড চ্যানেল সেনাবাহিনীতে যে কোন কাজ সমাধানে মুখ্য ভূমিকা
রাখে। নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে সকল কাজে আপনারা এগিয়ে যাবেন এই আমার প্রত্যাশা।
একই সাথে আমি আশা করি, সকল কমান্ডারগণও তাদের অধীনস্থদের প্রতি সব সময়ই প্রয়োজনীয়
মনোযোগ বজায় রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক
আহমেদ সিদ্দিক, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ ও
সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে
প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। আমি আশা
করি, আপনারা তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পেশাগত অনুশীলন
চালিয়ে যাবেন। স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন
জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ‘স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট
গার্ড রেজিমেন্ট’ এর ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে
আমি অত্যন্ত আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী গভীর শ্রদ্ধার সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, যার দুরদর্শিতা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৭৫
সালের ৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। কালের পরিক্রমায় প্রেসিডেন্ট গার্ড
রেজিমেন্ট আজ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। দক্ষ নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সুনাম
সর্বজনবিদিত। তিনি বলেন, সরকার-প্রধান হিসেবে এ রেজিমেন্টের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক
রয়েছে। দায়িত্বপালনকালে প্রতিদিনই গার্ডস সদস্যদের সাথে আমার দেখা হয়। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়
উপেক্ষা করে আপনারা বিশ্বস্ততা, আনুগত্য, শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের সাথে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন
করেন। এটা আমাকে আশ্বস্ত করে; মুগ্ধ করে। আপনারা সকলেই বিশেষভাবে নির্বাচিত এবং
সু-প্রশিক্ষিত। আপনাদের কর্মদক্ষতা, কর্তব্যপরায়ণতা ও একাগ্রতাই এর প্রমাণ। শেখ হাসিনা বলেন,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই এ রেজিমেন্টের উন্নয়নে কাজ
করেছে। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারই সর্বপ্রথম গার্ডস সদস্যদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা
করে, ‘গার্ডস ভাতা’র প্রচলন করে। ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল আমরা ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানকে
‘স্বতন্ত্র’ মর্যাদা প্রদান করি। একই বছর ৭ অক্টোবর পিজিআর-এর নতুন সাংগঠনিক কাঠামোর
অনুমোদন দেই যা এখন পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে আপনাদের জনবল ২ হাজারে উত্তীর্ণ
হয়েছে। তিনি বলেন, জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি আমরা পিজিআর-এর জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন,
বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, এপিসিসহ আধুনিক সরঞ্জামাদির সরবরাহ বহুগুণে বৃদ্ধি করেছি। এরফলে
রেজিমেন্টের সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্তব্য পালন সহজ হয়েছে। সদস্যদের মনোবল আরও দৃঢ় হয়েছে
বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, গণভবনে ১৫০ জন গার্ডস সদস্যের জন্য বসবাসযোগ্য একটি
ব্যারাক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এরফলে গণভবনে আপনাদের দীর্ঘদিনের আবাসিক সমস্যার
অনেকটাই সমাধান হবে বলে আমার প্রত্যাশা। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের আগ পর্যন্ত সৈনিকদের
দুপুরের খাবারে রুটি দেয়া হতো। আমরা ১৯৯৭ সালে দুপুরে রুটির পরিবর্তে ভাত চালু করি।
সেনাবাহিনীর জেসিও ও অন্যান্য পদবীর সৈনিকদের জন্য ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে শুকনা
ও তাজা রশদ বৃদ্ধি করে নতুন রেশন স্কেল প্রণয়ন করি। আমরা গতবছর পহেলা এপ্রিল থেকে
সেনাবাহিনীর জেসিওদের ১ম শ্রেণী (নন ক্যাডার) এবং সার্জেন্টদের ২য় শ্রেণীর পদমর্যাদায় উন্নীত
করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ৫টি সেনানিবাসে আর্মি মেডিক্যাল কলেজ, ৩টি সেনানিবাসে আর্মি
ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২টি সেনানিবাসে আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
প্রতিষ্ঠা করেছি। আরও ৫টি ডেন্টাল কলেজ ও ৫টি নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে।
আর্মি মেডিক্যাল কোরে মহিলা সৈনিক অন্তর্ভুক্তি সেনাবাহিনীতে নারীর সামর্থ্য বৃদ্ধি করছে।
সিএমএইচগুলোর আধুনিকায়ন করেছি। উন্নত প্রযুক্তির মেডিক্যাল সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে।
দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে। এর ফলে আপনাদের ও আপনাদের
পরিবারের সদস্যরা উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, সেনা সদস্যদের বহু প্রতীক্ষিত আবাসন
সমস্যা নিরসনে বিশ্বমানের উন্নত আধুনিক ব্যারাক হাউজ নির্মাণ করেছি। দৃষ্টিনন্দন আবাসিক
এলাকা গড়ে তুলেছি। ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছি। ফোর্সেস গোল অনুযায়ী সেনাবাহিনীর
উন্নয়ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীতে আমরা নতুন নতুন ডিভিশন গঠন করেছি। জালালাবাদ
সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং নিরাপত্তার
জন্য ৯৯ ক¤েপাজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং এর অধীন ১টি
আর্টিলারি ব্রিগেড, ১টি পদাতিক ব্রিগেড, ১টি আর্টিলারি ইউনিট এবং ২টি পদাতিক ব্যাটালিয়ন
আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরও ১টি পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস স্থাপন করার পরিকল্পনাও
আমাদের রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীর জন্য উন্নত অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রক্রিয়া
চলমান রয়েছে। ২০১৬ সালের মধ্যে দুটি এফএম-৯ সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল রেজিমেন্ট বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হবে। মেইন ব্যাটেল ট্যাংক, সেল্ফ প্রোপেল্ড গান সিস্টেম, উইপন
লোকেটিং র্যাডার, এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ারসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধ
সরঞ্জাম আমরা সেনাবাহিনীতে সংযোজন করেছি। তিনি বলেন, এর ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর
নিজস্ব সমর শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আরও পেশাগত দক্ষতার
সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারছে। শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান
বর্তমানে প্রথম। বর্তমানে প্রায় ৯ হাজার ৫৯৩ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বের ১০টি দেশে মিশনে অংশগ্রহণ
করছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার আপনাদের কল্যাণে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যাতে
আপনাদের চাকরি ও পারিবারিক জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়। দেশ ও জাতির সেবায় আপনারা যাতে
আরও ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত হন। শেখ হাসিনা বলেন, শুধু সামরিক বাহিনী নয়, আমরা প্রতিটি
সেক্টরে বাংলাদেশকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ২০২১ সালে
বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করব। তার আগেই আমরা সে লক্ষ্য পূরণ করতে যাচ্ছি।
বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে নি¤œ-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ আমরা মধ্য
আয়ের দেশের কাতারে উঠে গেছি। এটি আমাদের বিরাট অর্জন। আমরা বাংলাদেশকে আরও অনেক
উচ্চতায় তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে
দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৪ মাকিন ডলারে। দারিদ্র্যের হার কমে ২২.৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
আমাদের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩০.২ ভাগ। বিনিয়োগ বেড়েছে ২৮.৯৭ ভাগ। আমাদের রিজার্ভ ২৫
বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। এখন খাদ্য
উৎপাদন ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। শেখ হাসিনা দেশের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে উন্নয়নের
কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের ৭০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। দেশের জনগণ তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ
সেবা গ্রহণ করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা। আমরা ৫২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার গড়ে
তুলেছি। আমরা এমজিডির ১ থেকে ৬ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। জাতিসংঘসহ
আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করছে। পুরস্কৃত করছে। তিনি বলেন, আমরা সমুদ্রে
বিজয় অর্জন করেছি। প্রতিবেশী ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন
করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সাথে রয়েছে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক।
যখনই আপনাদের মাঝে আসি তখন আমার ভাইদের কথা মনে পড়ে যায়। আমার দুই ভাই শেখ
কামাল ও শেখ জামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। দশ বছরের শিশু রাসেলও
সেনাবাহিনীর অফিসার হবে বলে প্রায়শঃই ইচ্ছা প্রকাশ করতো। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার
সে স্বপ্ন নিঃশেষ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী সেনাবিহনীর পূর্বসূরি যারা কর্তব্য পালনকালে সর্বোচ্চ
আত্মত্যাগের মাধ্যমে এ রেজিমেন্টের ইতিহাসকে গৌরবোজ্জ্বল করেছেন এবং আমি প্রেসিডেন্ট গার্ড
রেজিমেন্টের সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার
প্রধানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আপনাদের একাগ্রতা ও আত্মোৎসর্গের মনোভাব
যেন চিরদিন বজায় থাকে এ প্রত্যাশা করছি।