বাংলাদেশ

ভয়াবহ যানজটে স্তব্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রাজধানী

রমজানের শুরু থেকেই রাজধানীতে যানজট দেখা গেছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, যানজট তত তীব্র

হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলো যানজটে প্রায় স্থবির

থাকছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে মানুষকে। এদিকে, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে

রাজধানীর অনেক এলাকায় পানি জমে গেছে। কোথাও কোথাও রাস্তায় সৃষ্টি  হয়েছে গর্ত। গতকাল

অনেক সড়কে আটকে গেছে সিএনজি অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন। ভোগান্তিতে পড়ে

সাধারণ মানুষ। জলজটের সঙ্গে যুক্ত হয় যানজট। 
 
রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, রাজপথে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে রাস্তায় বিকল হয়ে

পড়ে অসংখ্য গাড়ি। এতে সৃষ্টি হয় যানজট। মুহূর্তেই তা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। মতিঝিলের দৈনিক

বাংলা মোড় থেকে শুরু করে মত্স্য ভবন ও শাহবাগ মোড় হয়ে পান্থপথ মোড়, বনানীর কামাল

আতাতুর্ক এভিনিউ, পল্টন মোড় থেকে বাড্ডা, আজিমপুর থেকে শ্যামলী সর্বত্রই দেখা যায়

যানজট।
 
ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বৃষ্টির কারণে রাজধানীর মিরপুর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর,

গুলশান, নিকেতন, শান্তিনগর, মালিবাগ, গুলিস্তান, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তায়

জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে করে যানজটের কবলে পড়ে মানুষ।
 
এছাড়া রাজধানীর রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ও আশপাশের

এলাকা, শান্তিনগর, মালিবাগ, জিগাতলা, ট্যানারি মোড়, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, মতিঝিল,

যাত্রাবাড়ী, মানিক মিয়া এভিনিউ, কাকরাইল, বাড্ডা, কুড়িল, ভাটারা, আজিমপুর, শ্যামলী,

কল্যাণপুর, বংশাল, আজিমপুর, লালবাগ, কমলাপুর, বাসাবো, মুগদাপাড়া, জুরাইনসহ বিভিন্ন স্থানে

জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি ধারণ করে। এসব এলাকার প্রতিটি সড়কে লেগে যায় তীব্র

যানজট।
 
জানা যায়, রাজধানীতে যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। রাস্তার ওপর গাড়ি

রাখার কারণে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকার মতো একটি মহানগরীতে এখন

পর্যন্ত গাড়ি পার্কিং সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান সম্ভব হয়নি।
 
রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, গুলশান, বনানীর মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়

স্থায়ী পার্কিং ব্যবস্থা নেই। অথচ প্রতিদিন ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। বাইরে থেকেও

প্রতিদিন অনেক গাড়ি ঢাকা শহরে নানা কাজে আসে। এসব গাড়ি রাখার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেই।

অথচ স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে তা থেকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় করতে পারত

সিটি করপোরেশন।
 
রাজধানীতে যানজটের আরেকটি কারণ হচ্ছে যত্রতত্র বাস স্টপেজ গড়ে ওঠা। নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে

অনেক জায়গায় বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো বা নামানো হয়। এটা করতে গিয়ে যানজটের

পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটে। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না। রাজধানীর ব্যস্ত এলাকাগুলোতে

ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে দোকান সাজিয়ে বসতে দেখা যায়। বিশেষ করে ঈদের সময় এলে এসব

এলাকার ফুটপাত ও রাস্তার জায়গা নতুন করে বিক্রি করা হয়। এতেও যানজট সৃষ্টি হয়।
 
এছাড়া রাজধানীতে ২৩টি রেলক্রসিং রয়েছে। এসব ক্রসিংয়ের উপর ফ্লাইওভার না থাকায় যানজটের

সৃষ্টি হচ্ছে। নীতি নির্ধারক অনেকেই আইন মানে না। গাড়ি নিয়ে উল্টো পথে চলেন। গণমাধ্যমে এমন

সংবাদ এসেছে বহুবার। আর অনেকে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করেন না। সাধারণ মানুষের

অসচেতনতাও যানজটের জন্য দায়ী।
 
ট্রাফিক পুলিশ টোল তোলে, অথচ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বল। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কমবেশি

যানজট আছে। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে সেটা কারও চোখেও পড়ে না। আর ভোগান্তি তো

দূরের কথা। উন্নত দেশে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যানজট কমানো হয়।
 
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার রাস্তায় ৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে

পারে। তবে প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় ৯ লাখের বেশি গাড়ি চলে। এসব অতিরিক্ত গাড়ির কারণে সৃষ্টি

হচ্ছে যানজট।
 
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, শান্তি নগরে জমে থাকা হাঁটু পানি এবং

নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট নিরসনে দু’জন যুগ্ম কমিশনার এবং

একজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারসহ থানার পুলিশও নামিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা

করছি। তবে বৃষ্টি হলে বিভিন্ন এলাকায় যানজট একটু বেড়ে যায়।
 
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলে উদ্দীন বলেন, যানজটের কারণ চিহ্নিত

করে সমাধানের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে যানজট কমানো

কষ্টসাধ্য। আর অবকাঠামো করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।  
 
আরেক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে হলে মানুষকে সচেতন হতে হবে।

নাগরিকদের নাগরিক আচরণে অভ্যস্ত হতে হবে। যত্রতত্র গাড়ি রাখা, যেকোনো জায়গায় বাস থেকে

নামা, ফুটপাতে ও রাস্তার পাশে পসরা সাজিয়ে বসার প্রবণতা দূর করতে হবে। আইনের প্রতি

শ্রদ্ধাশীল হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইন প্রয়োগে কঠোর হলে যানজট দূর করা অসম্ভব হবে না। আর

যানজট নিরসন করতে না পারলে ঢাকা বসবাস অযোগ্য শহর হয়ে যাবে। কেননা দিন দিন যানজট

বাড়বে।