বাংলাদেশ

আখেরি মোনাজাতে শান্তি ও কল্যাণ কামনা

কুয়াশাচ্ছন্ন মাঘের প্রথম সকাল। গায়ে কাঁটা দেওয়া কনকনে হাওয়া থেকে থেকে দিচ্ছে ঝাপটা। এরই মধ্যে রোববার ভোরে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে অগণিত মানুষ ভিড় করেন তুরাগ নদের তীরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে প্রবল হয় জনস্রোত। এক পর্যায়ে মুসল্লিদের স্রোত বিশ্ব ইজতেমা ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের তিন-চার কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে যায়। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হলো লাখো মানুষের এ কাফেলার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব হবে আগামী ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি। আখেরি মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে হাত তুলে, চোখের পানি ফেলে ক্ষমা চান মুসল্লিরা। তাঁরা দেশ-জাতি ও সমগ্র মানবতার কল্যাণ এবং প্রাত্যহিক জীবনে সমৃদ্ধি কামনা করেন। ইজতেমা ময়দানের মূল মঞ্চে বসে হাত তুলে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের খতিব ও তাবলিগের শূরা সদস্য মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ যোবায়ের বলতে থাকেন, 'হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, আপনার কাছেই তো আমরা ক্ষমা চাইব। দ্বীনের ওপর আমাদের চলা সহজ করে দিন। আপনি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। আমরা যেন আপনার সন্তুষ্টিমাফিক চলতে পারি, সে তৌফিক দিন। দুনিয়াবি সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করুন। নবীওয়ালা জিন্দেগি আমাদের নসিব করুন।' সৃষ্টিকর্তার দরবারে এভাবে যখন প্রার্থনা শুরু হয়, তখন ঘড়ির কাঁটা সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের ঘরে। আরবি ও উর্দু ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় ২২ মিনিট মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা যোবায়ের। মোনাজাতের সময় স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো ইজতেমা ময়দান। শুধু ধ্বনিত হতে থাকে 'আমিন, আমিন'। এর আগে গতকাল বাদ ফজর বয়ান করেন বাংলাদেশের রবিউল হক। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে হেদায়াতি বয়ান দেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। তিনি দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতের জিন্দেগির প্রতি জোর দেওয়ার আহ্বান জানান। ঈমানি শক্তি মজবুত করে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধে আল্লাহর বিধান মেনে চলার তাগিদ দেন। উর্দু ভাষার এ বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আব্দুল মতিন। এরই মধ্যে ইব্রাহীম দেওলা কিছু সময় হেদায়াতি বয়ান করেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বয়ানমঞ্চে বসেন হাফেজ মাওলানা যোবায়ের। আলোচনায় তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার মাধ্যমে ক্ষমা চাইতে হবে। এর পর মোনাজাত পরিচালনার আগে তিনি সবাইকে নামাজের নিয়মে বসে দরুদে ইব্রাহিম পাঠের অনুরোধ করেন। ইজতেমা ময়দানে পৌঁছতে না পেরে অসংখ্য মানুষ কামারপাড়া এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ফজরের নামাজ পড়েন। ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ায় আগতরা সড়ক বিভাজকের ওপর, দুই পাশের ফুটপাত ও পিচঢালা সড়কে বসে পড়েন খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তাসহ যে যা পেয়েছেন, তা বিছিয়ে। বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নারী ইজতেমা ময়দানের আশপাশ, বিভিন্ন শিল্পকারখানা, বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের ছাদে বসে মোনাজাতে অংশ নেন। চান্দনা চৌরাস্তা মাদ্রাসা মাঠে কয়েক হাজার মুসল্লি একত্রিত হয়ে মোনাজাতে শরিক হন। আয়োজক কমিটি জানায়, মুসল্লির উপস্থিতি অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ইজতেমা ময়দানের উত্তর প্রান্তের তাশকিলের কামরায় খিত্তাগুলো থেকে চিল্লায় নাম লেখানো মুসল্লিদের জামাতবন্দি করা হয়। মোনাজাত শেষে তাঁরা জামাতবন্দি হয়ে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে গিয়ে রিপোর্ট করবেন। এর পর তাবলিগের মুরুব্বিদের নির্দেশনা অনুযায়ী দাওয়াতি কাজে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বেন তাঁরা। প্রথম পর্বে প্রায় সাড়ে তিন হাজার জামাত তৈরি হয়েছে বলে জানান ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী জহির ইবনে মুসলিম। আখেরি মোনাজাতের পর টঙ্গীর তুরাগ তীরে ঘরমুখী মানুষের ঢল নামে। ট্রেনের ছাদ, পিকআপে, বাসের ছাদে, হেঁটে, যে যেভাবে পারেন, বাড়ি ফেরার লড়াইয়ে নামেন।


এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস