বাংলাদেশ

ডিজিটাল হুন্ডিতেই প্রবাসী আয়ে ধস

প্রতি বছর ঈদের আগে প্রবাসী আয়ের নতুন নতুন রেকর্ড হলেও এ বছর ধস নেমেছিল এই খাতে। বৈশ্বিক সংকট মিলিয়ে গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে খারাপ সময় গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুসারে গত বছর এপ্রিল মাসে প্রবাসীদের কাছ থেকে দেশে আসে ২০১ কোটি ডলার। অথচ চলতি বছরে একই সময়ে এসেছে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এ সময়ে প্রবাসী আয় অন্তত ১৭ শতাংশ কমে যাওয়ার পেছনে মূলত ডিজিটাল হুন্ডিই দায়ী। ডিজিটাল হুন্ডির সঙ্গে জড়িত প্রায় ৬ হাজার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাবের বিরুদ্ধে বর্তমানে তদন্ত চলছে। এ পর্যন্ত হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাওয়া ৭ হাজার ৮০০ অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর মধ্যে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনার শর্তে ৫ হাজার ৩০০ অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি আড়াই হাজার অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হঠাত্ করেই হুন্ডি বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ইত্তেফাককে বলেন, ‘মূল কারণ হলো, খরচ। বৈধ পথে টাকা পাঠাতে গেলে যে খরচ হয় হুন্ডিতে তার খরচ অনেক কম। আরেকটা কারণ হলো, বৈধ পথে টাকা আসতে অন্তত ২৪ ঘণ্টা লেগে যায়। আর হুন্ডিতে একটা ফোন করতে যত সময় লাগে তার মধ্যেই টাকা চলে আসে। এখন বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনলে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা পাওয়া যায়। এই প্রণোদনা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। আসল কথা হলো, এমএফএসের সেবা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতের কাছেই পাওয়া যায় এজেন্ট। ফলে মানুষ ব্যক্তিগত সুবিধার কারণে এই পথে যাচ্ছে। সবাই তো আগে নিজের স্বার্থের কথা ভাববে, তারপর রাষ্ট্রের কথা। তাই হচ্ছে।’ অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে যে লেনদেন হচ্ছে তার ৯০ শতাংশই বিকাশের প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে। এ নিয়ে আমরা বিকাশের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের বিষয়টি অবহিত করেছি। এর মধ্যে বিকাশের কয়েক জন কর্মকর্তাও গ্রেফতার হয়েছেন। গত নভেম্বরে হুন্ডির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে বিকাশের কর্মকর্তাসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গত মাসেও প্রায় ৫০ কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে পাচারের অভিযোগে বিকাশের আরও দুই এজেন্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে যৌথভাবে তিনটি অভিযান চালিয়ে বিকাশের কর্মকর্তাসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এই হুন্ডি চক্রের সদস্যরা সে সময় চার মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার করে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তখন চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা, ঢাকার মোহাম্মদপুর এবং খিলগাঁও থানায় মানি লন্ডারিং আইনে তিনটি মামলা হয়।’ কয়েক দিন আগে সিআইডি প্রধান বলেছেন, শুধু হুন্ডির কারণে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না। এটা খুবই খারাপ খবর। বিএফআইইউ-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি বিকাশ আর্জেটিনা ফুটবল দলের আঞ্চলিক স্পন্সরশিপে যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ডলার-সংকটের মধ্যে বিকাশ এই বিশাল অঙ্কের ডলার কীভাবে পরিশোধ করেছে সেটাও আমরা তদন্ত করে দেখব। তবে শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘আইন কানুন মেনেই এটা করা হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়েই এই স্পন্সরশিপে যুক্ত হয়েছি।’ এলএবাংলাটাইমস/এজেড