বাংলাদেশ

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাং। কোনো কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না কিশোর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারা দেশে গ্রাম পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বাড়ছে। খুন, ধর্ষণ, মাদক চোরাচালান, মাদক সেবনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে কিশোররা। মেয়েদের উত্ত্যক্তকরণ ও আধিপত্য নিয়ে বিরোধে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিচ্ছে তারা। কিশোর অপরাধ দমনে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে নানাভাবে চেষ্টা করেও পেরে উঠছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ডাটাবেজ তৈরির কাজ চললেও মিলছে না সুফল। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও একশ্রেণির জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় থেকে পাড়ামহল্লা, অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। মোটরসাইকেল নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ানোর কারণে সবার কাছে আতঙ্কের নাম এখন ‘কিশোর গ্যাং’। গ্রামগঞ্জেও বিস্তৃত হয়েছে কিশোর অপরাধীদের নেটওয়ার্ক। গত দুই মাসে সহস্রাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র‍্যাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরও কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা কমছে না। কিশোর গ্যাং লাঠিয়াল বাহিনীর মতো হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়। পাড়ার একশ্রেণির মেম্বার, ইউপি চেয়ারম্যান, কোনো কোনো সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতারা তাদের প্রশ্রয় দেয়। তাদের দিয়ে দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি করাচ্ছে। কেউ বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে তাদের চাঁদা দিতে হয়। এসব কিশোর গ্যাং প্রকাশ্যে মানুষ খুনও করে। বছর তিনেক আগে রাজধানীর পল্লবীতে সন্তানদের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় শাহিনুদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে। সুমন নামে এক কিশোর গ্যাং লিডার তাকে হত্যা করে। পরে সে এক জনপ্রতিনিধিকে ফোন করে বলে, স্যার ফিনিশ। ঘটনাটি বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। ইতিমধ্যে সাভারে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। সাভারে মুদি দোকানদার টাকা ছাড়া সিগারেট দেয়নি। এ কারণে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে ঐ দোকানিকে হত্যা করে কিশোর গ্যাং। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গোলাকান্দাইলে কিশোর গ্যাং মাসুম বিল্লা হত্যাসহ ১২ মামলার আসামি। ঐ এলাকায় ঘরবাড়ি কিছুই করতে গেলেই তাকে চাঁদা দিতে হয়। সে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে। অথচ পুলিশ তাকে খুঁজে পায় না। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির একজন কর্মকর্তার সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। এছাড়া পুরো রূপগঞ্জ এলাকায় পাড়া-মহল্লায় অনেকগুলো কিশোর গ্যাং রয়েছে। কেরানীগঞ্জ, টঙ্গী, গাজীপুর—এসব এলাকাতেও পাড়া-মহল্লায় আছে কিশোর গ্যাং। এছাড়া সারা দেশ থেকে ইত্তেফাকের প্রতিনিধিরা জানান, সারা দেশে ইউনিয়ন-গ্রামে রয়েছে কিশোর গ্যাং। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এদের উত্থানের মূলে রয়েছে মাদক। তারা পকেটে ইয়াবা নিয়ে চলে, বিক্রি করে। কেউ অর্ডার দিলে মোটরসাইকেলে দিয়ে পৌঁছে দেয়। স্ব স্ব থানার একশ্রেণির পুলিশ নিয়মিত তাদের কাছ থেকে মাসোহারা পায়। তাদের ধরতে গেলে জনপ্রতিনিধিরা তাদের দলীয় লোক বলে ছাড়িয়ে নেয়। এলাকার জ্যেষ্ঠ লোকজন জানান, আগে তাদের সামনে এই বয়সের সন্তানরা ভয়ে আসতো না। তাদের এখন চাঁদা দিয়ে চলতে হয়। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটবে।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছে। শনিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির কারণ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত আইজিপি ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার, ড. খ. মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, কিশোর অপরাধ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। টিকটক অ্যাপসের মতো আরো অনেক অ্যাপস আছে, এসব বিতর্কিত অ্যাপস বন্ধ করতে হবে। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে মদতদাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ব্যতীত কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস