বাংলাদেশ

ফারাক্কা খুলে দেয়া পানিতে নাটোরে ১৫ গ্রাম প্লাবিত

ফারাক্কার সবগুলো গেট খুলে দেওয়ায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নাটোরের লালপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে ফারাক্কা বাঁধের ১০৮টি গেইটের মধ্যে ১০৪টি গেইট খুলে দেয় ভারত। এতে পদ্মানদীতে পানি প্রবাহ বেড়ে যায়।

সোমবার (২৯ আগস্ট) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের চরজাজিরা, দিয়াড় বাহাদুরপুর বাঙ্গালপাড়া, বন্দোবস্ত গোবিন্দপুর, রামকৃষ্ণপুর, দক্ষিণ লালপুর, ঈশ্বরদী ইউনিয়নের তিলোকপুর, লক্ষ্মীপুর, গৌরীপুর, পালিদেহা, বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওশারা সুলতানপুর, দিয়াড় শংকরপুর, আরাজি বাকনা, চাকলা বিনোদপুর, ও মোহরকয়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এরফলে কৃষিনির্ভর এসব এলাকার ধান, পাট, আখ, হলুদ, কলা বাগান, মুলা, পেপে, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে।

লালপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের ১২ লাখ টাকা দামের ট্রাক্টর পানিতে ডুবে গেছে। নওশারা সুলাতানপুরে আবদুস সালামের একটি মহিষ, শফিকুল ইসলামের ১টি ও উজ্জল শেকের ২টি মহিষছানার মৃত্যু হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়রা বলেন, পদ্মার পানি আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে।

লালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক পলাশ বলেন, পানি যে হারে বাড়ছে ও তা অব্যাহত থাকলে লালপুর থানা ও হাসপাতালসহ ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়ে যাবে।

বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্টু বলেন, পানি এভাবে বাড়তে থাকলে আমার এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

২নং ঈশ্বরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জয় বলেন, আমার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড পদ্মার নদীর তীরে হওয়ায় বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বলেন, ইতিমধ্যেই আমার এলাকার চণ্ডিপুর খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। যেভাবে পানি বৃদ্ধির পাচ্ছে, তাতে অল্প সময়ের মধ্যে রামপাড়া, রাধাকান্তপুর, মোল্লাপাড়া, জয়রামপুর, জয়পুর, জয়কৃষ্টপুর, বেরিলাবাড়ী, গোখুরাবাদ, মিয়াপাড়া, পাইকপাড়া সহ অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়ে যাবে। গ্রামের মানুষ মারাত্মক আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলার এবি ইউনিয়ন ও দুয়ারিয়া ইউনিয়ন এলাকায় বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের পানি পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম জহুরুল ইসলাম বলেছেন, পাকশী হার্ডিং ব্রিজ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধির হার এ রকম থাকলে হয়তো আগামীকাল (মঙ্গলবার) নাগাদ বিপদ সীমা অতিক্রম করতে পারে।

তবে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক শহিদুল ইসলাম বলেছেন, রবিবার (২৮ আগস্ট) থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ সেন্টিমিটার পানি কমেছে।

জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান জানান, প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী ১ হাজার ৮৯০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রাণের কোনো স্বল্পতা নেই। তাদের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

সোমবার (২৯ আগস্ট) বন্যাদুর্গতদের মাঝে সরকারি উদ্যোগে ২০০ পরিবারকে পরিবারপ্রতি ১০ কেজি চাল, চিড়া, ১ লিটার সয়াবিন বোতলজাত তেল, দেড় লিটার বোতলজাত বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করা হয়। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, নাটোর জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান, লালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ পাপ্পু, লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামসহ প্রমুখ।