বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন শুরু

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দু’দিন ব্যাপী ২০তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশ করা হয়।

দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পাশাপাশি সকল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জাতীয় পতাকা এবং সাধারণ সম্পাদক দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে দলীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এর পর পরই সম্মেলনের থিম সং পরিবেশন করা হয়।

সন্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দলের প্রাণ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, তারাই আওয়ামী লীগকে ধরে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে দারিদ্র উচ্ছেদে আতœ নিয়োগ করার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান।

এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন স্থলে এসে পৌঁছান সকাল ১০টায়। প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন স্থলে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। সম্মেলন উদ্বোধনের পরে মঞ্চে আসন গ্রহন করেন সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ।

জেলা কমিটির নেতারা মঞ্চের সামনে তাদের জন্য নির্ধারিত আসনে আসন গ্রহণ করেন। পরে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ডায়াসে গিয়ে ২০তম জাতীয় সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এ্র মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান । কোরআন তেলাওয়াত করেন কারি সাইফুল ইসলাম, গীতা থেকে ড. অসীম সরকার, বাইবেল থেকে প্রলয় সমাদ্দার, ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন শীল প্রিয় ভিক্ষু।

মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর শোক প্রস্তাব পাঠের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট আবদুল মান্নান খান।

অভ্যার্থন কমিটির আহবায়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সম্মেলন উপলক্ষে আগত বিদেশী অতিথি, সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলর, ডেলিগেট, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতাদের অভিনন্দন জানান।

পরে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন দলের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ সময়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য এদেশে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, এরপরেও কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে পারে নাই এবং কোনো দিনই পারবে না। শেখ হাসিনা যতদিন আছেন উনিই নেতৃত্ব দেবেন। আওয়ামী লীগ কিন্তু মরবে না। আওয়ামী লীগ অজেয় রাজনৈতিক সংগঠন।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। এ সময়ে অভ্যার্থনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. দীপু মনি সম্মেলন উপলক্ষে আগত বিদেশী অতিথিদের পরিচয় করিয়ে দেন।

পরে চীন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ভারত, কানাডা, অস্টোলিয়া, ইতালি, শ্রীলংকাসহ ১০টি দেশের ৫৫ জন বিদেশি অতিথির মধ্যে ভারতের বিজেপির ভাইস প্রেসিডেন্ট সংসদ সদস্য বিনয় প্রভাকর, জাতীয় কংগ্রেসের নেতা ও রাজ্যসভার বিরোধী দলীয় নেতা গোলাম নবী আজাদ, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসু, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি, অস্ট্রিয়ার সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সংসদ সদস্য ফুকস্, ইউনাইটেড রাশিয়ার ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি সংসদ সদস্য সারেগেই ঝেলেজেডনিয়াক, শ্রীলংকার ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির নেতা ধর্মমন্ত্রী এএইচ মোহাম্মদ হাশেম, কানাডার কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও সংসদ সদস্য দিপক ওভরাই, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার ঝেং জিয়াসং, মনিপুর পিপলস্ পার্টির প্রেসিডেন্ট নংমেইকাপম শোভাকিরণ সিং, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়ালেসের মেম্বার অব পার্লামেন্ট হুগ ম্যক ডারমট, ইতালির ডেমোক্রেটিক পার্টির ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটির কনসালট্যান্ট সংসদ সদস্য খালিদ চাওকি, ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী দিনা নাথ ডুনগেল, যুক্তরাজ্যের অতিথি জেনি রাথবোন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’।

জাতীয় সম্মেলনে ৬ হাজার ৫শ’ ৭০ জন কাউন্সিলর অংশ নিয়েছেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন রোববার কাউন্সিল অধিবেশন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচন করা হবে। এসময় কমিটি নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন নির্বাচন কমিশন। তিন সদস্যের এ কমিশনের সদস্যারা হলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ড. মশিউর রহমান এবং সাবেক সচিব রশিদুল আলম।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা। সম্মেলনকে ঘিরে ছোট-বড় নৌকা, সাদা বক, জাতীয় ফুল শাপলা, সুন্দরবনের হরিণ এবং বিভিন্ন প্রতিকৃতিসহ উদ্যানের প্রবেশ পথগুলোতে জাতীয় ও দলীয় পতাকার সাজে রঙিন হয়ে উঠে।

এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয়ের ছোট-বড় ছবিতে গোটা এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আরো মনোরম পরিবেশ।

দলের জাতীয় সম্মেলন সকাল ১০টায় উদ্বোধন করার কথা থাকলের সকাল ৮ টার আগেই গোটা এলাকায় সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও অতিথিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যানসহ আশে পাশের এলাকা।

জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বানানো হয়েছে বিশাল মঞ্চ। নৌকার আদলে তৈরি এ মঞ্চের দৈর্ঘ ১৫০ ফুট ও প্রস্থ ৮৪ ফুট। নৌকায় উঠে আগামী দিনের হাল ধরবে নতুন নেতৃত্ব এ্ই ধারণা থেকেই এমন মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।

সারা দেশের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতারাও।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জমান নূর। প্রথমেই পরিবেশন করা হয় ‘এখন সময় বাংলাদেশের...এখন সময় আমাদের’। এ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা করা হয়। এরপর একে একে গাওয়া হয় ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল’ আর ‘মোরা একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ...’।

সর্বশেষ দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন।

এদিকে জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল জেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডিজিটাল ডিসপ্লে, ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট, মুক্তিযুদ্ধের গান ও তোরণ নির্মাণ করা হয়।

সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তারা সম্মেলনস্থল, ৭টি প্রবেশপথসহ আশেপাশের এলাকায় ৫০টি ইউনিটে ভাগ হয়ে কাজ করে। প্রত্যেক ইউনিটে রয়েছেন একজন টিম লিডার, তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করেন।

উদ্বোধনী অধিবেশনে কাউন্সিলর, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কুটনীতিক, রাষ্ট্রদূত, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভিড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।

সম্মেলনে এবার ডিজিটালের ছাপ পরেছে। ২০তম জাতীয় কাউন্সিল আওয়ামী লীগের নিজস্ব ফেসবুক পেজে সরাসরি লাইভ প্রচার করা হয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সাজসজ্জার সাথে সাথে ফেসবুকের প্রোফাইল ছবিতেও আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের ছাপ পড়েছে। কাউন্সিলর ও ডেলিগেট বসার ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের সুবিধার্থে ১০টি বড় পর্দায় সম্মেলন দেখানো হয়।


এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি