বাংলাদেশ

ধর্ষণকালে ঢাকার রাস্তায় যুবলীগ নেতাকে উলঙ্গ করে গণধোলাই!

ঢাকার রাস্তায় উলঙ্গ করে- এক যুবলীগ নেতাকে উলঙ্গ করে গণধোলাই দিয়েছে সাধারণ মানুষ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ধারণকারী রাফি আহমেদ তার ফেসবুকে দুটি ভিডিও পোস্ট করেছেন।

এর সাথে নিচের কথাগুলো লিখেছেন–
”আজ অফিস থেকে ফেরার পথে মোহাম্মদপুর, কলেজ গেট সিগনালে ঠিক আমার সামনের গাড়িটাতে লক্ষ্য করে দেখি ভেতরে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ধস্তা-ধস্তি করছে এবং গাড়ির ড্রাইভার এর গাড়ি চালানোর ভঙ্গিমা দেখে মনে হচ্ছিলো যে সে গাড়িটা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে |

তবে দুর্ভাগ্য তাদের, রাস্তায় তীব্র জ্যাম থাকায় গাড়িটি বেশি দূর যেতে পারেনি | এমতাবস্তায় আমি আমার গাড়ি থেকে নেমে সামনে যেতে যেতে দেখি আরো কিছু লোক গাড়িটির দিকে লক্ষ্য করে এগুচ্ছে | তখনও ভাবতে পারিনি এতটা নিচ ও নিকৃষ্ট ঘটনার চাক্ষুষ প্রমান হতে যাচ্ছি |

আমি গাড়িটির কাচ্ছে যেতেই দেখি ছেলেটি মেয়েটিকে ধর্ষণ করচ্ছে | গাড়ির দরজা খুলে প্রথমে আমরা মেয়েটিকে বাইরে বের করে নিয়ে আসি পরে অপর পাশের দরজা খুলতেই দেখি অতিপরিচিত সেই ছেলেটি অর্থাৎ বড়লোক বাবার বখে যাওয়া নষ্ট সন্তান |

ছেলেটিকে বাইরে বের করতে গিয়ে সহ্য করতে হয়েছে বাজে মদের গন্ধ | আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না, অতঃপর বসিয়ে দিলাম ওই জানোয়ারের কানের নিচে আমার বাম হাতের পাঁচ আংগুলের চিহ্ন | এরপর ক্ষুব্ধ জনতা চিলের মতো করে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাদের বাকি দায়িত্ব পালন করলো |

পরে মেয়েটির কাছ থেকে জানতে পারলাম , ওই নর-পিচাশটা মেয়েটিকে রাস্তা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে এসেছে।”

রনি হকের প্রফাইল ঘেটে দেখা গেছে, তিনি যুবলীগ নেতা। ধানমন্ডিতে তার বাসা। ওই এলাকার এমপি ফজলে নূর তাপসের সাথে তার ফেসবুকে ছবি রয়েছে। এছাড়া যুবলীগের অনুষ্ঠানে তাকে অন্য নেতাদের সঙ্গেও দেখা যাচ্ছে।


আজ তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে জনতা আটক করে পুলিশে দিয়েছে। অভিযুক্ত মাহমুদুল হক রনি উচ্চশিক্ষিত এবং দুই সন্তানের জনক।

দিনভর রনিকে শেরে বাংলানগর থানায় রাখার পর বিকালে ঘটনার শিকার তরুণী মামলা করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গণেশ গোপাল বিশ্বাস জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। ওসি জানান, মামলার বাদীর অভিযোগ, শনিবার রাতে তারা দুই তরুণী কলেজগেট এলাকায় মাহমুদুল হকের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ ২৯-৫৪১৪) থামিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করেন। ওই সময় গাড়ি চালাচ্ছিলেন মাহমুদুলের ব্যক্তিগত গাড়িচালক। কিছু দূর যাওয়ার পর এক তরুণীকে শিশু মেলা এলাকায় নামিয়ে দেয়া হয়। গাড়িতে থাকা আরেকজনকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন মাহমুদুল।

এ সময় তরুণী হাত-পা নাড়ছিলেন। চিৎকার করছিলেন। এ ঘটনা টের পেয়ে রাস্তায় থাকা মানুষজন গাড়ি থামিয়ে চালক ও মাহমুদুলকে পিটুনি দেয়। ওসি জানান রনিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তার গাড়ি চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, গাড়ি থেকে বের করার পর রনিকে মারধর করছিল উপস্থিত লোকজন। এ সময় গাড়ির চালক পালাতে চেষ্টা করলে তাকে বেদম প্রহার করা হয়। এক পর্যায়ে নগ্ন অবস্থায় গাড়ির চালক পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আহত অবস্থায় রনিকে উদ্ধার করে পুলিশ। তার গাড়িতে মদ, মদ পানের গ্লাস পাওয়া গেছে।

গতকাল দুপুরে দুই তরুণীর সন্ধান পেয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় শেরে বাংলানগর থানায়। বিকালে তাদের একজন মামলা দায়ের করেন। মাহমুদুল হক রনি বন্ধুদের কাছে রনি হক নামে পরিচিত। তার বড় ভাই একজন আইনজীবী। রনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পন্ন করে ব্যবসা করে। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রনি থাকে হাজারীবাগ থানার মিতালী রোডের ধানমন্ডি-১৫ নম্বর বাড়িতে। প্রায় রাতেই টয়োটা প্রিমিও গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয় বন্ধুদের সঙ্গে। রাতভর গুলশান, বারিধারা, উত্তরা এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে মদের আড্ডায় বুঁদ হয়ে থাকে রনি। ঢাকার কয়েকজন এমপির সঙ্গে ব্যক্তিগত ভালো সম্পর্কের কথা বলে বেড়ায় রনি। রাতে চলাফেরার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে এমন পরিচয় দেয় সে। রনি গাজীপুরের কাপাসিয়ার সুনমানিয়া গ্রামের মৃত ফজলুল হকের পুত্র।


এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি