কলাম

সৃষ্টিকে ভালোবাসুন, ভালো লাগার মতো নিজেকে যোগ্য করে তুলুন

আজকাল প্রায়শঃ দেখছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে মানুষের মাঝে সম্পর্কের নানা টানাপোড়ন।কষ্ট আর অভিমান।মেনে নেয়া আর মানিয়ে নেয়ার মানসিকতার বড়ই অভাব লক্ষণীয়।আমি একটা জিনিস বুঝি এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে এসবের স্থান দেয়া ঠিক নয়।কয়দিন বাঁচবো আমরা যা নিজে নিশ্চিত করতে ব্যর্থ সেখানে কাউকে অসম্মান, কষ্ট, কটাক্ষ করে নিজেকে সুখী বা ধন্য মনে করার কী বাহাদুরি আছে আমার জানা নাই।

মানুষ মানুষের ভিতর যেন নিজেকেই ঠকায় কারণে অকারণে প্রতিনিয়ত।তারা কেন আত্মার শুদ্ধতা বুঝে সাড়া দেয় না?কেন নিজের উপর অবিচার করে?মানুষ কোথায় যাবে যদি মানুষ মানুষের ভরসার জায়গায় আঘাত হানে?মন ভেঙ্গে দাঁড়াবার সক্ষমতাটুকু কেড়ে নেয়?মনের সাথে শীররের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য চিরদিনের।একটি ছাড়া অন্যটি অচল।সব বিচারে মানুষকে ছোট বা খাটো করার অধিকার স্রষ্টা কাউকেই দেয়নি।তবুও আমরা যাচ্ছে তাই অবমূল্যায়ন, জ্ঞানের অহংকার দেখিয়েই বেড়াই মানুষ আর প্রকৃতিকে।এতো অহংকার কী কারণে?মাটির শরীর নিয়ে উন্মাদনা দিন দিন বেড়েই চলেছে কেবল।গায়ের জোরে বিশ্ব জয় করা যায় না।আর মানুষের মন জয় করা আরো দূরহ ব্যাপার।অর্থ সম্পদ আর মেধা-পদবী দিয়ে আমরা মানুষের ক্যাটাগরী ভাগ করে ফেলি মুহুর্তেই।একটিবারও ভাবি না মৃত্যুর পর সবারই একই জায়গায় স্থান,কেউ পুড়ে ছাই ভস্ম হচ্ছে, কেউ বা চিরনিদ্রায় মাটিতেই শায়িত হচ্ছে।তাহলে দুনিয়ায় এতো চাটুকারিতার দরকার আছে বলে মনে করা অতি চমৎকারিত্বের বালাই নেই।

এবার আসি সমাধানের পথে।আপনি জীবনে কী পেলেন তার হিসাব করুন।কী পেলেন না তার কথা মনে মস্তিষ্কে আনার প্রয়োজন নেই।মনে রাখতে হবে আমাদের ভাগ্যলিখন এইটুকুই।চেষ্টাতো করেই যাচ্ছি সততার সাথে।যা আমার হচ্ছে না তা নিয়ে আপসোস করার কোন দরকার নেই।কারণ এই জগত থেকে আপনি কোন অর্জনই নিয়ে যেতে পারবেন না সাথে কী গাড়ি,বাড়ি আর মেধার উৎকর্ষতা?দুনিয়াই ভোগ করবে আপনার সফলতার অর্ঘ। তাহলে আর আপসোস কেন?আপনার যাই আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট আর ভালো থাকার প্রচেষ্টা চালান।অনৈতিক,তেলবাজি করে সম্পদ,সম্মান অর্জনের চেয়ে শূণ্য হাতে স্রষ্টার কাছে ভিক্ষা চাওয়া অনেক যুক্তিযুক্ত মনে করি।কখনোই নিজের অভিমত, ধারণা অন্যের উপর চাপানোর চেষ্টা করবেন না।একেকটা মানুষ একেকটা আলাদা জগত মেধা মননে।আপনার সাথে মিলবে আশা করা অনর্থক বৈকি।আপনি যতো বড় জ্ঞানী হউন মনে রাখবেন জ্ঞান সমুদ্রে আপনি শিশুর মতো।আজ পর্যন্ত কোন মহাজ্ঞানী বলতে পারেননি তিনি সবজান্তা।যদি কেউ গর্ব করে থাকেন তবে তিনি বোকা বৈ আর কিছু নন।কয় আসমানের হিসাব জানি আমরা?ভূমন্ডলের এতো উন্মাদনা কডোটা বুঝতে সক্ষম আমরা?প্রমাণ আছে কতো মিসাইল, ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার আগেই নিভে গেছে!কিছুতেই তথাকথিত ক্ষমতাধর দেখানোর বাহুল্য দোষ ছাড়া কিছুই নয়।মানুষ এসব অহমিকা দেখালে,বড় বড় কথা আউড়ালে হাসা ছাড়া উপায়ান্তর দেখিনা।

কখনোই ভাববেন না আপনি অনেক ডিগ্রীধারী,একটা কিছু।আপনার চেয়ে অনেক বেশি জানা লোক পৃথিবীতে অহরহ আছে,আমাদের তা অকপটে স্বীকার করতে হবে।সবতো তাঁরই দান।এই কারণে নিজেকে যতো ছোট ভাবতে পারা যায় ততই আমাদের জন্য মঙ্গল,সুখকর।জানার ক্ষেত্র বাড়ে।মানুষ একটা কোটি পৃষ্ঠা সম্বলিত বই,মহা কাব্যগ্রন্থ।এটা পড়তে পড়তে আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে।এতে আছে থ্রিল,রোমাঞ্চ আর সুখ দুঃখের ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস।এর রহস্য ভেদ করতে পারেন একমাত্র তিনি, যিনি জীবন দান করেছেন।পৃথিবীর রূপ সৌন্দর্য দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।তাই সৃষ্টির মাঝেই সুখ শান্তি খুঁজে নিন,ভালোবাসুন মনের মাধুরী দিয়ে।নিজেকে ভালো লাগার,ভালোবাসবার মতো পারসোনালিটি তৈরি করুন দেখবেন স্রষ্টার ছায়া আপনার উপর আছে,প্রকৃতিও আপনাকে স্থান ভেদে কুর্নিশ করছে।অহংকার করুন ভালো কাজ করে যাতে অন্যদের অনুপ্রেরণা হতে পারেন।সবকিছুকে বুঝতে শিখুন,অন্যকে বুঝতে চেষ্টা করুন।বিশ্বাস করুন পৃথিবীতে শান্তি আনায়নে এর চেয়ে বিকল্প আর কিছুই নয়।সকলেই ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।
লেখক: শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক