কলাম

ই-বিজনেস ম্যানেজমেন্ট: নতুন বিষয়, নতুন সম্ভাবনা

প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছেন আর বেকারত্বের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, তারা পাচ্ছেন না চাকরি। অপরদিকে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা পাচ্ছে না দক্ষ কর্মী! সমস্যা আসলে কোথায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন হয়নি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার। এখনো আমাদের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেকেলে বিষয়গুলোই পড়ানো হচ্ছে, যেগুলোর কোনো উপযোগিতা নেই এই একুশ শতকের পৃথিবীতে। ফলে আদ্যিকালের কোনো একটি বিষয়ের উপর ডিগ্রি নিয়ে বেকার হয়ে বসে থাকছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। সমস্যা এখানেই।
সময় এখন তথ্য-প্রযুক্তি ও অনলাইনের। ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের ধরণও পাল্টে গেছে এই অনলাইনের যুগে। দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের মধ্যে বৈশ্বিক রিটেইল বিজনেসের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ ব্যবসার ৪০ শতাংশ চলে যাবে ই-কমার্সের আওতায়। প্রথম আলো আরও বলছে, বাংলাদেশের অন্তত ২ মিলিয়ন মানুষ অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা করছে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৭ হাজারের বেশি ই-কমার্স ওয়েবসাইট রয়েছে, যারা অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা করছে।  
করোনাকালের এই মহামারির সময়ে ই-কমার্স ব্যবসা বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। এখন ঘরে বসে মানুষ সব ধরনের কেনাকাটায় অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। ই-ক্যাবের হিসাবে, দেশে ই-কমার্সের বাজারের আকার এখন ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে জার্মান ওয়েব পোর্টাল স্ট্যাটিস্টার বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশে ই-কমার্সের আকার দাঁড়াবে ১৯৫ কোটি ডলারের বেশি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা। তাদের পূর্বাভাস হলো, ২০২১ সালে বৈশ্বিক ই-কমার্স ব্যবসার বাজারের আকার দাঁড়াবে দুই লাখ কোটি ডলার।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দ্রুত বর্ধনশীল এই ব্যবসায়িক খাত পরিচালনার জন্য আমাদের নেই কেনো প্রশিক্ষিত, দক্ষ জনগোষ্ঠী। এ ব্যাপারে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি প্রদান করে না আমাদের দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়! এই সমস্যা উপলব্ধি করে দেশে প্রথমবারের মতো ‘বিবিএস ইন ই-বিজনেস ম্যানেজমেন্ট’ নামে চার বছর মেয়াদী স্নাতক কোর্স চালু করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
পড়ার নতুন বিষয় ই-বিজনেসের ম্যানেজমেন্ট উপর ¯œাতক কোর্স চালু করাকে অত্যন্ত সময়পোযোগী উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন এই সময়ের কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থী। এ রকমই এক তরুণ আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কলেজে পড়ার সময়ই সিদ্ধান্ত নিই, ভবিষ্যতে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়ী হব। তাই এইচএসসি পাস করার পর খোঁজ নিতে থাকি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ানো হয়। অবশেষে জানলাম, একমাত্র ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়েই এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে। তাই কালবিলম্ব না করে ভর্তি হয়ে যাই।’
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন অফিসে যখন কথা হচ্ছিল আরিফুলের সঙ্গে তখন পাশেই ভর্তি ফরম পূরণ করছিলেন আরেক শিক্ষার্থী সিনথিয়া রহমান। তিনি মিষ্টি হেসে বলেন, আমি চাকরির বিজ্ঞাপনগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছি যে এখন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স মার্চেন্ডাইজার, এসইও ম্যানেজার, স্যোশাল মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর, ডিজিটাল মার্কেটিং ম্যানেজার, ডাটা অ্যানালিস্ট ইত্যাদি পদের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। এসব পদের জন্য দক্ষ কর্মীর চাহিদাই বেশি। এজন্য আমি ই-বিজনেস বিষয়ে ভর্তি হতে এসেছি। নতুন বিষয় হলেও এটি আমার ক্যারিয়ারের জন্য সম্ভাবনাময় বলে মনে করছি।

কেন চালু করা হলো ‘ই-বিজনেস ম্যানেজমেন্ট’ বিষয় ‘আমরা এমন এক সময়ে বসবাস করছি যখন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন আমাদের সামনে হাজির করেছে নানা ধরনের সুযোগ। যিনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম তিনিই এইসব সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে পারবেন।’ এমনটাই মনে করেন ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘অনলাইন প্রযুক্তি আমাদের সামনে সম্ভাবনার এক বিশাল দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আমাদের উচিত এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করা। তিনি চীনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, চীনের ই-কমার্স সাইটগুলো প্রতিদিন এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করে থাকে। আমাদের দেশের ই-কমার্স সাইটগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণের হারও উর্ধ্বমুখী। এই সময়ে দরকার এই খাতে দক্ষ ও উচ্চশিক্ষিত জনবল। সেই লক্ষ্যেই ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ই-বিজনেস কোর্স চালু করেছে।’
মোহাম্মদ নূরুজ্জামান আরও বলেন, অনলাইন প্রযুক্তি সারা বিশ্বের ব্যবসার প্রচলিত ধারনাকেই পাল্টে দিয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। এ দেশের মানুষ কঠোর পরিশ্রমী, ত্যাগী এবং প্রচ- মেধার অধিকারী। কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াই এ দেশের তরুণ ই-কমার্স উদ্যোক্তা এক ধরনের বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। এই মেধাবী তরুণ প্রজন্মকে যদি ই-কমার্স বিষয়ে যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায়, তাহলে তারা দেশের অর্থনীতিকে আমুল বদলে দেবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
যা বললেন বিভাগীয় প্রধান ই-বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মো. আলী ইমরান বলেন, বাংলাদেশে ই-কমার্সের এক নম্বর জায়গাটি এরই মধ্যে চীনের আলিবাবা'র দখলে। বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনও। আর সম্প্রতি এই বাজারে ঢুকেছে পূর্ব ইউরোপের আরেকটি বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউভি। গত তিন বছর ধরে এই খাতের প্রবৃদ্ধি প্রায় একশো ভাগ। অর্থাৎ প্রতি বছর প্রায় দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছে এই খাত। এই খাতে মাসে এখন প্রায় সাতশো কোটি টাকা লেন-দেন হচ্ছে। অর্থাৎ বার্ষিক লেন-দেন এখন আট হাজার কোটি টাকার বেশি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, কত দ্রুত বাড়ছে ই-বিজনেস খাত। এই খাতে দক্ষ জনবল সরবরাহ করার উদ্দেশ্যেই চালু করা হয়েছে ই-বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স। মো. আলী ইমরান আরো বলেন, এই কোর্সের মধ্যে রয়েছে ই-বিজনেস ফান্ডামেন্টালস, ডিজিটাল মার্কেটিং, মোবাইল কম্পিউটিং, ই-বিজনেস প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ই-বিজনেস সিকিউরিটি, ই-বিজনেস ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি। এছাড়াও একাউন্টিং, ইনফরমেশন সিস্টেম, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং ইত্যাদি বিষয়ও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে এই কোর্সে। একজন শিক্ষার্থীকে ব্যবসা খাতের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে সব ধরনের উপাদানই রয়েছে।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি