করোনা কর্ণার

নিজের লোককে ত্রাণ দিলেন চেয়ারম্যান, ২৬ বস্তা কেড়ে নিলেন প্রকৃত দুস্থরা

বেছে বেছে নিজের লোকদেরকে সরকারি ত্রাণ দিলেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। এজন্য অনেক সামর্থ্যবান ব্যক্তিরাও পেয়ে যান ত্রাণ। বাদ পড়ে যান অনেক প্রকৃত দুস্থরা। আর এই কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকৃত দুস্থরা ভ্যান ভর্তি ত্রাণ থেকে ২৬ বস্তা চাল নিয়ে চলে যান। এমন ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নে। বিষয়টির তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, প্রত্যেক বস্তায় ১০ কেজি করে চাল ছিল। এ ঘটনায় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান পুলিশের সহায়তা চাইলে পুলিশ আসে। তবে যারা চাল নিয়ে চলে গেছেন তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রকৃত দুস্থ হওয়ায় চাল ফেরত আনতে পারেননি পুলিশ।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষকে ঘরে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকার ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ গ্রামের মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা করে প্রকৃত কর্মহীন দুস্থদের বাড়িতে বাড়িতে ত্রাণের চাল পৌঁছে দেয়ার কথা। জনসমাগম এড়াতে এই সিদ্ধান্ত।

কুষ্টিয়ার খোকসার ওসমানপুর ইউনিয়নের ঘরবন্দি দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ত্রাণের চাল ভুক্তভোগীদের ঘরে পৌঁছে দিতে কাজ শুরু করে চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান। ওই ইউনিয়নে এই প্রথম জিআর প্রকল্পের আওয়তায় ৪৫০ পরিবারের জন্য সাড়ে চার মেট্রিক টন চালসহ খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দেয়া হয়। শনিবার (১১ এপ্রিল) ইউএনও’র প্রতিনিধি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মমিনুল হক ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বারের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিরা ওসমানপুর ইউনিয়নে রিলিফের এ চাল পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেন। বিকেলে ২ নম্বর ওয়ার্ড খানপুর গ্রামে চাল বিতরণ চলছিল। ক্ষুধার্ত দুস্থ মানুষ চাল নিতে আসলে দেয়া হয় না। অনেকেই চাল চেয়ে পান না। তাদের অভিযোগ এসময় চেয়ারম্যানের লোকজন চেয়ারম্যানের অনুসারী বা তার লোকজনদের মাঝে চালের বস্তা দিচ্ছিল। এতে দেখা যায় অনেক সামর্থ্যবানরা চাল পাচ্ছেন। তাই তারা বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে দলবেঁধে এসে ভ্যান থেকে ২৬ জন একটি করে চালের বস্তা নিয়ে চলে যান।

চেয়ারম্যান পুলিশকে খবর দিলে খোকসা থানা পুলিশের একটি দল ত্রাণের চাল উদ্ধারে অভিযানে নামে। গ্রামবাসী ত্রাণের দাবিতে পুলিশ সদস্যদেরই ঘিরে ধরে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা উল্টো প্রকৃত ওই দুস্থদের ত্রাণ সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে আসেন। তারা গ্রামের বিধবা ও অসহায়দের একটি তালিকা তৈরি করে থানায় ফিরে যান।

গ্রামবাসী জানান, চেয়ারম্যান নিজের রাজনৈতিক দলের নেতাদের, নিজের সমর্থকদের নামে রিলিফ দিয়েছেন। এতে অনেক বড়লোক বা সামর্থবানরা চাল পান। তাই প্রকৃত দুস্থরা ত্রাণের চাল ছিনিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।

দুই নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মঞ্জুরু হক বলেন, চেয়ারম্যান তার দলীয় ও পছন্দের ধনী মানুষের নামে ত্রাণ দিয়েছেন। প্রকৃত দুস্থরা ত্রাণ পাননি। তারাই রিলিফের চাল ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বলেন, মেম্বার তার লোকদের দিয়ে ত্রাণের ২৬ বস্তা চালসহ খাদ্য সামগ্রী লুট করিয়েছেন। এটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, প্রকৃত দুস্থ যারা তারা রিলিফ এর চাল ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন। সচ্ছল লোকেরাই ত্রাণ পেয়েছে, কিন্তু খেটে খাওয়া দুস্থ মানুষের নাম ওই তালিকায় ছিল না।

এদিকে, জানা গেছে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার’র এক প্রতিনিধি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তদন্ত পূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।-আরটিভি