বিনোদন

বাংলাদেশের ইলেকশন কমিশনের নেতৃত্ব দুর্বল: টিআইবি

তিনি সিটি করপোরেশন নির্বাচন
পর্যবেক্ষণ করে বর্তমান নির্বাচন
কমিশনের নেতৃত্বে ‘দুর্বলতা’ খুঁজে
পেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি
ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)।
গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও
দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি
করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি
বলেও দাবি তাদের।
ভোটের দুই সপ্তাহ পর সোমবার
নিজেদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তুলে
ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এ নির্বাচন
সুষ্ঠু হয়নি। ব্যাপক ভোট জালিয়াতি
হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর
ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।”
নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে নির্বাচন
কমিশন নিরপেক্ষভাবে তিন সিটি
করপোরেশনে দায়িত্ব পালনেও ব্যর্থ
হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়নে
দোদুল্যমানতা, প্রার্থীদের
আচরণবিধি লঙ্ঘনে সময়োচিত পদক্ষেপ
নেওয়ায় ব্যর্থতা, ভোট জালিয়াতি,
কারচুপি এবং ভোট কেন্দ্র দখলে
সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর
ব্যবস্থা নিতে না পারায় নির্বাচন
কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের
দায় এড়াতে পারে না।
“ইসি স্বাধীনভাবে সাংবিধানিক
দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় এবং
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাব
বিস্তারের কারণে সামগ্রিকভাবে
তিনটি সিটি করপোরেশন
নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ
বলা যায় না।”
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে
টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার
(সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদাও বলেন, এ
নির্বাচন যেমন হওয়া উচিত ছিল
সেরকম হয়নি।
“আমরা ভেবেছিলাম এসব কারচুপি
উঠে যাবে; এখন আবার এ ধরনের
কার্যক্রম গণতন্ত্রের জন্য ভালো কিছু
নয়। আমরা আবার পিছিয়ে গেলাম।”
ভোটে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না
নেওয়ায় কমিশনের কঠোর
সমালোচনাও করেন সাবেক এই
সিইসি।
“সেনা চেয়েছে ইসি, সরকার
দিয়েছে। কিন্তু সেনা ব্যারাকে
রাখার সিদ্ধান্ত নিল কমিশন। তাই
নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দায় সম্পূর্ণ
নির্বাচন কমিশনের।”
নিজের দায়িত্ব পালনের সময়ের
অভিজ্ঞতা তুলে ধরে হুদা বলেন,
“ভোটকেন্দ্র দখল হলে তো অসুবিধা।
আমাদের সময়ে কোনো ভোটকেন্দ্রে
অনিয়ম হলেই সঙ্গে সঙ্গে তা বাতিল
করা হয়েছে।”
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপের পর
দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন
অনুষ্ঠানে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সুপারিশ
করেছে টিআইবি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একাদশ
সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭ সালে
বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ায়
ইসি পুনর্গঠনের ক্ষেত্র তৈরি হবে।
এক্ষেত্রে যোগ্য, দক্ষ, নিরপেক্ষ ও
শক্তিশালী কমিশন নিয়োগ করতে
হবে।
সাবেক সিইসি হুদা বলেন, “দক্ষিণ
এশিয়ার অধিকাংশ দেশে দলীয়
সরকারের অধীনে ভোট হচ্ছে। তাতে
কোনো অসুবিধা না থাকলে
বাংলাদেশে কেন সমস্যা হবে?
“দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন
করা যাবে। কমিশন বাছাইয়ে
গণমাধ্যমেরও ভূমিকা রাখতে হবে।
শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ইসি ও
প্রযুক্তির ব্যবহার হলে নির্বাচনও সুষ্ঠু
হবে।”
আইনে নির্দলীয় নির্বাচনের কথা
বলা হলেও কার্যত স্থানীয় সরকার
নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতেই হয়।
এই দ্বৈত নীতির কারণেই নির্বাচনে
নানা অনিয়ম দেখা যায় মন্তব্য করে
শামসুল হুদা বলেন, “নির্বাচনী আইনটি
পরিবর্তন করে দলীয় করা যেত পারে,
যাতে দলীয় প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ
মনোনয়ন না পায়। এতে আর্থিক
অনাচার ও অনিয়মের সুযোগ কমে
আসবে।”
‘সীমাছাড়ানো ব্যয় প্রার্থীদের’
ব্যয়সীমা নির্ধারিত থাকলেও
সদ্যসমাপ্ত সিটি করপোরেশন
নির্বাচনে কোনো কোনো প্রার্থী
এর বহুগুণ বেশি অর্থ খরচ করেছেন বলে
দাবি করেছে টিআইবি।
এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের
কোনো নজরদারি না থাকার
সমালোচনাও করেছে
দুর্নীতিবিরোধী এই প্রতিষ্ঠানটি।
তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন
নিয়ে টিআইবির পর্যবেক্ষণ
প্রতিবেদনে প্রার্থীদের ব্যয়সীমা
লঙ্ঘনের বিষয়টি উঠে আসে।
সোমবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে
প্রার্থীদের ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা
নির্ধারণ, নির্বাচনী ব্যয়
পরিবীক্ষণের বিধান, ব্যয় সংক্রান্ত
দাখিলকৃত রিটার্ন যাচাই-বাছাই
এবং প্রার্থীর হলফনামায় দেওয়া
তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতে সিটি
করপোরেশন নির্বাচনী আইনে ব্যাপক
সংস্কারের সুপারিশও করেছে
টিআইবি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “কোনো
কোনো ক্ষেত্রে অনুমোদিত
নির্বাচনী ব্যয়ের তুলনায় সাতগুণ, ১১
গুণ বা ২১ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করেছে
প্রার্থীরা। ব্যয় পরিবীক্ষণের কোনো
ব্যবস্থা নেই।”
টিআইবির দাবি, চট্টগ্রামে এক মেয়র
প্রার্থী ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা
নির্বাচনী ব্যয় করেছেন। ঢাকা
দক্ষিণে একজনের ব্যয় ৩ কোটি ৫১
লাখ টাকা। অথচ তাদের নির্ধারিত
ব্যয়সীমা ছিল ৩০ লাখ টাকা। ঢাকা
উত্তরে এক প্রার্থীর ব্যয়সীমা ৫০ লাখ
টাকা নির্ধারিত থাকলেও তিনি ৩
কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন।
দলীয় সমর্থন পেতে ঢাকায় মেয়র
প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেনের
অভিযোগ না পেলেও চট্টগ্রামে
কোটি টাকা ব্যয়ের অভিযোগ
পাওয়ার দাবি করেছে টিআইবি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “চট্টগ্রামের
মেয়র প্রার্থীদের কাছ থেকে ২০
লাখ টাকা থেকে ৭ কোটি টাকা
সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, দলীয়
তহবিল এবং ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক
নেতাদেরকে দেওয়ার অভিযোগ
পাওয়া গেছে। মেয়র প্রার্থীদের
পক্ষে এই অবৈধ অর্থ প্রদানে অর্থদাতা
হিসেবে প্রার্থী নিজে ছাড়াও
স্থানীয় ঠিকাদার, ব্যবসায়ী ও
শিল্পপতিদের একাংশ জড়িত
ছিলেন।”
টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা
উত্তরের জন্য নির্ধারিত ৫০ লাখ
টাকা ব্যয়সীমার বাইরে গিয়ে
তিনজন মেয়র প্রার্থী অতিরিক্ত ২০
লাখ থেকে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা
পর্যন্ত ব্যয় করেছেন। ঢাকা দক্ষিণের
তিনজন মেয়র প্রার্থী অনুমোদিত ৩০
লাখ টাকা ব্যয়সীমার বিপরীতে ১
কোটি ৪৬ লাখ থেকে ৩ কোটি ৫১
লাখ টাকা পর্যন্ত এবং চট্টগ্রামের
তিনজন মেয়র প্রার্থী সর্বোচ্চ ৬
কোটি ৪৭ লাখ থেকে সর্বনিম্ন ৩৭
লাখ টাকা ব্যয় করেছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত
সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরা
ঢাকায় গড়ে যথাক্রমে ১৫.৯৫ লাখ
টাকা এবং ৮.২৬ লাখ টাকা এবং
চট্টগ্রামে যথাক্রমে ১৬.৫৮ লাখ এবং
১১.৫২ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন বলে
টিআইবির দাবি।
প্রতিষ্ঠানের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে
‘ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম
সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০১৫ :
প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এ গবেষণা
প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন
করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি
বিভাগের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মো.
রেযাউল করিম।
তিন সিটি করপোরেশনের ১৩৪টি
ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডকে
দৈবচয়ন পদ্ধতিতে নমুনা এলাকা ধরে
১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ এপ্রিল
পর্যন্ত ৯ জন মেয়র এবং ১০১ জন সাধারণ
ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর ওপর
গবেষণাটি পরিচালনা করা হয় বলে
টিআইবি জানায়।