বিনোদন

মাইকেল জ্যাকসনের জন্মদিন আজ

আজ ২৯ আগস্ট গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের হিসেবে সর্বকালের সফল শিল্পী মাইকেল জ্যাকসনের ৬২তম জন্মদিন। মৃত্যুর প্রায় এক যুগ কেটে যাচ্ছে তবুও সবার স্মৃতিতে অমলিন তিনি।
মাত্র ৫১ বছরের জীবনে দুনিয়াটাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৫৮ সালে আমেরিকার ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের জ্যাকসন স্ট্রিটে জন্ম নেয়া মানুষটি গান দিয়ে জয় করেন বিশ্ববাসীর হৃদয়, তিনি মাইকেল জ্যাকসন।
মাত্র ৫০ বছরের জীবদ্দশায় তিনি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পপ গায়ক হয়ে ওঠেন। এমনকি তিনি বিশ্বের এখনও সবচেয়ে সফল সেলিব্রেটি, সব থেকে বেশি অ্যাওয়ার্ড নমিনেশন পাওয়া গায়ক। নাচ ও গানের অসাধারণ শৈলী তাকে বিশ্বের শীর্ষ তারকায় পরিণত করে।

১৯৫৮ সাল। জ্যাকসন স্ট্রিটের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। তাঁর মা ক্ল্যারিনেট (সানাই) এবং পিয়ানো বাজাতেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন বক্সার। ১৯৬৩ সালে মাত্র ৫ বছর বয়স থেকে পেশাদার শিল্পী হিসাবে কাজ শুরু করেন মাইকেল জ্যাকসন। তখন তিনি "জ্যাকসন ফাইভ" নামের এক ব্যান্ডের সঙ্গে গান গাইতেন। ধীরে ধীরে মাইকেল হয়ে উঠেন কিং অব পপ (পপ সম্রাট)।

১৯৭১ সাল থেকে  মাইকেল জ্যাকসন একক শিল্পী হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। সেই সময় তিনি মোটাউন রেকর্ডসে কাজ করতেন। ১৯৮০ এর দশকের মধ্যেই তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন।

গানের পাশাপাশি মুনওয়াক এবং রোবট ডান্সের জন্যও তিনি ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়।

১৯৮৭ সালে মুক্তি পায় মাইকেল জ্যাকসনের ‘স্মুথ ক্রিমিনাল’ শিরোনামের গান ও মিউজিক ভিডিও। এই ভিডিওর একটা পর্যায়ে তিনি ও তাঁর আশপাশের কয়েকজন মিলে কেবল গোড়ালির ওপর ভর করে পুরো শরীরটা সামনের দিকে নিয়ে যান। অত্যন্ত প্রশিক্ষিত একজন নৃত্যশিল্পীর পক্ষেও ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রির বেশি সামনের দিকে ঝোঁকা সম্ভব নয়। কিন্তু অভিকর্ষকে উপেক্ষা করে মাইকেল ঝুঁকেছিলেন ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত। নাচের এই মুদ্রা নিয়ে এরপর থেকেই শোরগোল পড়ে যায়। নাচের জন্যও তিনি হয়ে উঠেন অনন্য।

১৯৯২ সালে অভূতপূর্ব এ নাচের পেটেন্ট করে নেন তিনি। তাঁর এ নাচ দেখে দর্শকেরা বিস্মিত হয়েছিল। এটি ছিল অসাধারণ সুন্দর এক বিভ্রম। বিখ্যাত এ নাচের ধরনটি ‘মুনওয়াক’ নামে পরিচিত।

মাইকেলের "থ্রিলার" অ্যালবাম আজ পর্যন্ত ১১০ মিলিয়নের ওপর বিক্রি হয়েছে যা সর্বোচ্চ বিক্রিত হওয়া অ্যালবাম। অসংখ্য জনপ্রিয় অ্যালবামের মধ্যে হিস্টরি, অফ দ্য ওয়াল, ডেঞ্জারাস ব্যাড অন্যতম। প্রথম রিমিক্স অ্যালবাম ব্লাড অন দ্যা ডান্স ফ্লোর হিস্টরি ইন দ্যা মিক্স।

২০০১ সালে রিলিজ হয় তাঁর জীবনের দশম ও সর্বশেষ স্টুডিও অ্যালবাম ইনভিন্সিবল। এর শুধুমাত্র রেকর্ডিং এ মাইকেল খরচ করেন ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপর। যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল অ্যালবাম। ২০১০ সালে বিলবোর্ড কর্তৃক একটি পোলে এটি ২০০০-২০১০ সালের মধ্যে রিলিজ পাওয়া অ্যালবামের মধ্যে সেরা নির্বাচিত হয়।

তার গাওয়া বিখ্যাত গান "ইউ আর নট অ্যালোন" নিজের ছায়া হয়ে জীবনের শেষ দিনকার সময়ে আসে। জীবনের শেষ দিনগুলো খুব অস্থির কেটেছিল জ্যাকসনের। ধীরে ধীরে তীব্র অর্থাভাব গ্রাস করছিলো তাঁকে। প্রাণপণে এর থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। লন্ডন শো-দিয়ে কামব্যাক করতে চাইছিলেন। দু'মাস ধরে দিনরাত এক করে রিহার্সাল দিয়ে যাচ্ছিলেন।

দুশ্চিন্তায়, ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় ক্রমশ ঘরের মধ্যে গুটিয়ে যাচ্ছিলেন বিশ্বের জনপ্রিয়তম নক্ষত্র মাইকেল। মাইকেলের নিজস্ব বেডরুমে তার তিন ছেলে মেয়ে ও নিজস্ব চিকিৎসক ডক্টর মুরে ছাড়া কারো প্রবেশ নিষেধ ছিলো। চিকিৎসক ডক্টর মুরে তাঁর বন্ধু মাইকেলের ড্রাগের নেশা ছাড়াতে পারেননি, বরং সরবরাহ করে গিয়েছিলেন ব্যথানাশক তীব্র অ্যানাসস্থেটিক ড্রাগ প্রপোফল এবং দুশ্চিন্তানাশক লোরাজেপাম।

২০০৯ সালের ২৫ জুন বৃহস্পতিবার, সকালের রেওয়াজের পর বাসায় এসে হঠাৎ করেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন মাইকেল৷ খবর দেওয়া হয় হাসপাতালে৷ কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স বাসায় এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে, তাঁর হৃদযন্ত্রের ‘‘বিট'' কাজ করা বন্ধ করে দেয়৷ মারা যান মাইকেল জ্যাকসন।

এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/ই