জার্মানির কনজারভেটিভ নেতা ফ্রিডরিখ মের্জ দেশটির পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগে চ্যান্সেলর নির্বাচনের প্রথম ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। ৬৩০ আসনের পার্লামেন্টে নির্বাচিত হতে ৩১৬ ভোট প্রয়োজন হলেও তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩১০ ভোট। এই ব্যর্থতা মের্জ ও তার নেতৃত্বাধীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট দলের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
দুই মাস আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভের পর তিনি সেন্টার-লেফট সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (SPD) দলের সঙ্গে একটি জোট গঠন করেন, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করেছিল। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ১৮ জন এমপি প্রত্যাশিত সমর্থন থেকে সরে গেছেন, যার ফলে মের্জ পরাজিত হন।
আধুনিক জার্মানির ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ১৯৪৯ সালের পর এই প্রথম কোনো চ্যান্সেলর প্রার্থী প্রথম ভোটেই ব্যর্থ হলেন।
জার্মান সংবিধান অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (১৪ দিনের মধ্যে) পার্লামেন্ট নতুন করে মের্জ বা অন্য কোনো প্রার্থীকে চ্যান্সেলর হিসেবে নির্বাচিত করতে পারে। বারবার ভোট নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। একপর্যায়ে সরাসরি সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াও কাউকে নির্বাচিত করা সম্ভব হবে।
পরবর্তী ভোট অন্তত বুধবারের আগে হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবে মঙ্গলবার দুপুরে পার্লামেন্ট আবার বসে। সেখানে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, SPD-এর কিছু সদস্যের অসন্তোষের কারণে এই পরাজয় ঘটেছে। মের্জের জন্য এটি একটি রাজনৈতিক অপমান। মঙ্গলবারের ব্যর্থতায় তার সরকার গঠনের স্বপ্ন ও অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এদিকে, কট্টর-ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (AfD), যারা ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ২০.৮% ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিল, এই ব্যর্থতাকে কাজে লাগাতে চাইছে। দলের সহ-নেতা এলিস ওয়েইডেল বলেছেন, ভোটে মের্জের ব্যর্থতা প্রমাণ করে যে, এই ছোট জোট জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
মের্জের প্রত্যাশা ছিল, মঙ্গলবার ভোটে জিতে প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টেইনমায়ারের কাছে গিয়ে শপথ গ্রহণ করবেন এবং বহুদিনের চ্যান্সেলর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করবেন। এমনকি সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলও ভোট দেখার জন্য পার্লামেন্টে উপস্থিত ছিলেন।
এই ব্যর্থতার পর মের্জ এখন সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি পুনরায় ভোটে অংশ নেবেন কিনা। জোটের ভিতরে মতবিরোধের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।
এর আগে সোমবার মের্জ বলেছিলেন, "এই সরকারকে সফল করা আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব।" তিনি জার্মানির আন্তর্জাতিক অবস্থান পুনরুদ্ধার ও অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
দুই বছর মন্দার পর ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানি আবার কিছুটা প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের কারণে রপ্তানি নিয়ে নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে, পরিষেবা খাতও দুর্বল ভোক্তা ব্যয় এবং চাহিদা হ্রাসের কারণে সংকুচিত হয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম