ফিচার

কবিতা

  ভাঙা স্লেট
সৌমেন দাস
পুরানো জিনিসপত্রের ভীড়ে খুঁজে পেলাম,
একটা ভাঙা স্লেটের ফ্রেম!
এক কোণে লেগে আছে নালন্দার মতো কিছু ভাঙা অংশ।
চিনতে পারলাম। এই তো সেদিন, মায়ের বোনা উলের ব্যাগে আনতে আনতে ভেঙে গিয়েছিল!
সে কি কান্না আমার! সারা রাত ঘুম হয়নি!
কত রকম মন্ত্র আওড়ালাম জোড়া লাগাতে।
অবশেষে মায়ের কাছে দৌড়ে গেলাম,
নতুন নেওয়ার বায়নাতে।
দেখলাম মায়ের চোখের কোণে জল,  
মা বললে কষ্ট ক'রে না পড়াশোনা ক'রলে নাকি বড়ো হওয়া যায় না?
তাই ভাঙা স্লেটেই বড়ো হবার স্বপ্ন দেখতে লাগলাম।
ফ্রেমটা নাকের কাছে নিয়ে আসতেই,   
সেই ছেলেবেলার গন্ধগুলো কেমন যেন বন্ধ গুহা থেকে বের হ'তে চাইলো!
কত আওয়াজ ভেসে আসছে...
এই তো! এই তো! সেই আওয়াজ...
"জলের পোকা জলকে যা,
   আমার স্লেট শুকিয়ে যা...!!"
আর এই গন্ধটা তো একদম চেনা,
এটা তো কাছাড়ি স্কুলের মাটির দেওয়ালের গন্ধ!
আর স্লেটের ধারে যেই সর লেগে আছে,
ওটা স্কুলের ধারের পুকুরের!
বাড়াবনের মাষ্টারের হাতে এই স্লেটটা দিতে বড্ড ভয় হতো!
এই বুঝি, স্লেটের কোণার গুতুনি খেলাম!
আর আমাদের রবিঠাকুর, গদাইবাবু,
উনি বেশ মজাদার লোক।
কিন্তু ভয়, কখন "বোষ্টম বাচ্চা" বলে দেয় ডাক!
দিদিমণি, উনি বড্ড ভালো।
তবে রেগে গেলেই, সবই গেলো!
ফ্রেমের উপর একটা কালচে দাগ!
ওটা জল ছবির, ভটুর দোকানের মামাচাটনিতে পাওয়া।
ঐ ভাঙা স্লেটের একটুকরো বাবা কখন সরিয়ে নিয়েছে সংগোপনে।
মালা কাটার বাটালি তে শান দেবার জন্যে!
কত অভিমান ছিল সেদিন, ভেবেছিলাম বাড়ি ছেড়ে চলে যাই!
সে'দিন বুঝিনি একদিন বাড়ি ফিরে আসার জন্য আকুল হবো!
মনের আগল কেমন আলগা হয়ে আসছে,
এই কণা স্লেট নিয়েই ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে বৈরাগীদির আমতলায়!
ইচ্ছে ক'রছে দনাইদাদুর দোকানের পাশে কিছু স্বপ্ন কুড়িয়ে আনি!
আবার মন্ত্র পড়ে জোড়া লাগায় সেই ভাঙা স্লেট ...!!!!