ফিচার

অনুগল্প: জীবন সঞ্জীবিত মাতৃদুগ্ধে

বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের অডিটোরিয়াম থেকে বের হলো অভীক একরাশ ভালোলাগা নিয়ে। আন্ত:রাজ্য বিতর্ক প্রতিযোগিতা ছিল জীবনানন্দ দাশের জন্মদিনে। বিষয়: "অদ্ভূত আঁধারেও সবুজ স্বপ্ন- গান"। বিচারক মন্ডলীর সদস্য ছিল অভীক। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চললো কলেজগুলোর মধ্যে। শেষ সময়ে এসে প্রেসিডেন্সীর সৌজন্য বলে ছেলেটি জয় ছিনিয়ে নিল। ছেলেটির অদ্ভূত ব্যাখ্যায় সারা হলে হাততালির ঝড় বিজয়ী নির্বাচনে সাহায্য করল। 'অ্যাকটিনোমাইসেটিস' নামে এক ব্যাকটেরিয়া আছে যা মাটিতে বৃষ্টি পড়লে যে সোঁদা গন্ধ ছাড়ে ,তার কারণ। জীবনানন্দ দাশের কবিতা ও ঠিক ঐ ব্যাকটেরিয়ার মতোই। জীবনের সোঁদা গন্ধটা  ফিরিয়ে আনে বারে বারে
সমস্ত প্রতিকুলতার মাঝেও। সত্যিই মন ভালো করে দেওয়া ব্যাখ্যা একদম নতুন মোড়কে !
        ষ্টেশনে নেমে ক্লান্ত অভীক টলোমলো পায়ে বাড়ির পথে। হঠাৎ ষ্টেশনের প্রান্তে এসে চমকে উঠল। বড়ো মায়াময় দৃশ্য ! ষ্টেশন পাগলী একটা কুকুর ছানাকে কোলে নিয়ে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে । সারা মুখ জুড়ে আবেশী হাসি।পরম মমতায় কুকুর ছানাটার সারা গায়ে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। দূরে দাঁড়িয়ে বাচ্চাটার মা দেখে চলেছে এ দৃশ্য।তার মুখেও মাতৃত্বের অনুভব। দুই মা যেন এক হয়ে গেছে তাদের মাতৃত্বের অনুভবে !
        থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল অভীক। মনে পড়ল, মাসখানেক আগে পাগলীর একটা বাচ্ছা হয়।দিন দশেক আগে বাচ্চাটা মারা যায়। সেদিন ওর বুকফাটা কান্না ষ্টেশনের সকলের বুক বিদীর্ণ করে দিয়েছিল।সেই অতৃপ্ত মাতৃত্ব যেন আজ পূরণ হচ্ছে ওর। সত্যিই মা তো এমনই হয় ! অভীকের মনে হলো, মায়ের দুধ ও যেন অ্যাকটিনোমাইসেটিস ! জীবনের তপ্ত মাটিতে সোঁদা গন্ধ ফিরিয়ে দিয়ে যায় মায়ের মমতার স্পর্শে !