ফিচার

প্রজাপতির রঙিন পাখার রহস্য

“প্রজাপতি, প্রজাপতি, কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা? ওই লাল-নীল ঝিলিমিলি আঁকাবাঁকা।” ছোটবেলার গানটার কথা মনে আছে?
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যস্ততা বাড়ে। আর সেই সঙ্গে সঙ্গে আমরাও ছোটবেলার স্মৃতিগুলো ফেলে মানিয়ে নিই কর্মব্যস্ত জীবনের সঙ্গে। এই কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে হুট করেই যদি একবার এই গানটার কথা মনে পড়ে যায়, তাহলে তো মাথায় একটা প্রশ্ন আসতেই পারে- সত্যিই তো, এমন রঙিন পাখা কোথায় পেল প্রজাপতি? প্রজাপতির রঙিন পাখার মূল রহস্য হচ্ছে পিগমেন্টেশন। সাধারণভাবে যেকোনো কিছুর রঙের পেছনেই রয়েছে পিগমেন্টেশনের ভূমিকা। গাছের পাতা সবুজ হয় কেননা পাতায় রয়েছে ক্লোরোফিল পিগমেন্ট। ক্লোরোফিল সবুজ ছাড়া সমস্ত রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য শুষে নেয়, ফলে আমরা গাছের পাতা সবুজ দেখি।
একইভাবে বিভিন্ন পিগমেন্টের উপস্থিতি থাকায় প্রজাপতির পাখা রঙিন হয়। মূলত প্রজাপতির পাখায় থাকে মেলানিন পিগমেন্ট। এর উপস্থিতিতে প্রজাপতির পাখার রং হলুদ, বাদামি এবং কালো হয়ে থাকে। একটা মজার তথ্য হচ্ছে প্রজাপতির পাখার রং কিন্তু পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন দিক থেকে দেখলে তাদের পাখা বিভিন্ন রঙের দেখায়। আর এটাই অন্য প্রাণীর সঙ্গে তাদের রঙিন পাখার সবচেয়ে বড় পার্থক্য। প্রজাপতির পাখার এই রং পাল্টানোর রহস্য হচ্ছে ইরিডিসেন্স বা চিত্রাভা। যখন আলো অনেকগুলো স্তরের একটি স্বচ্ছ পৃষ্ঠতলের ভেতর দিয়ে যায়, তখন প্রতিটা পৃষ্ঠ থেকে আলাদা আলাদাভাবে আলোর প্রতিফলন ঘটে। ফলে বিভিন্ন রং তৈরি হয়। আপনি জায়গা পরিবর্তন করলে তখন ভিন্ন ভিন্ন রং দেখবেন।
প্রজাপতির পাখার ক্ষেত্রে ঠিক এই ঘটনাটাই ঘটে। প্রজাপতির পাখায় স্বচ্ছ পর্দার উপরে থাকে আঁশের একটি আস্তরণ। এই আঁশগুলো প্রজাপতির পাখার স্বচ্ছ পর্দাকে ঢেকে রাখে। এগুলোকে খালি চোখে ধুলোর মতো দেখায়। এগুলো এতই কোমল এবং সূক্ষ্ম যে হাত দিয়ে স্পর্শ করলে এগুলো হাতের সঙ্গে লেগে আসে। প্রজাপতির পাখার গঠন এমন হওয়ায় খুব সহজেই এখানে ইরিডিসেন্স প্রক্রিয়া ঘটে। ফলে বিভিন্ন দিক থেকে দেখলে প্রজাপতির পাখার বিভিন্ন রং দেখা যায়। এটাই হচ্ছে প্রজাপতির রঙিন পাখার জটিল রহস্য।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, প্রজাপতির রঙিন পাখা কি শুধুই তাদের সৌন্দর্য বাড়ায়, নাকি অন্য কোন কাজেও লাগে? আসলে প্রজাপতির পাখা তার নিজের প্রয়োজনেই রঙিন। ছদ্মবেশ ধারণ করে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রজাপতির রঙিন পাখার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া এদের পাখার রং ও নকশা দেখেই পুরুষ ও মেয়ে প্রজাপতি আলাদা করা হয়।